Monday, October 7, 2024

আজ রাজবাড়ী মুক্ত দিবস

  • ১৬ ডি‌সেম্বরের মধ্যে সারা‌দেশ যখন একে একে বিজয়ের আন‌ন্দে উচ্ছসিত, তখনও রাজবাড়ী‌তে চল‌ছে অবাঙ্গালী বিহারী‌দের সা‌থে মু‌ক্তি‌যোদ্ধা‌দের তুমুল যুদ্ধ। এক পর্যায়ে বিহারীদের সাথে পেরে না ওঠায় স্থানীয় মু‌ক্তি‌যোদ্ধা‌দের সা‌থে প্রতি‌বে‌শি জেলার মু‌ক্তি‌যোদ্ধারা যোগ দি‌য়ে বিহারী‌দের পরা‌জিত ক‌রে রাজবাড়ী‌কে ১৮ ডি‌সেম্বর শত্রু মুক্ত করেন।

রে‌লের শহ‌রের কারনে মু‌ক্তিযু‌দ্ধের সময় রাজবাড়ী‌ ‌ছিল বিহারী অধ্যুসিত অঞ্চল। যে কারণে এখা‌নে ছিল প্রায় ২০ হাজার অবাঙ্গালী বিহারীর আবাসস্থল। যে কার‌ণে রাজবাড়ী‌কে শত্রু মুক্ত কর‌তে বেগ পে‌তে হয় মু‌ক্তি‌যোদ্ধা‌দের।

এ মুক্তি‌যুদ্ধে  খু‌শি, রফিক, শফিক, সাদি, আরশেদ আলী ও দিয়ানত আলী নামে বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হন এবং আহত হয় অনেকে। এ কারনে সারা‌দেশ ১৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হ‌লেও রাজবাড়ী‌ জেলাটি শত্রুমুক্ত হ‌তে দুই দিন সময় বে‌শি লাগে এবং ১৮ ডি‌সেম্বর সকা‌লে রাজবাড়ী শত্রুমুক্ত ঘোষনা করা হয়।

১৯৭১ এর মহান মু‌ক্তিযু‌দ্ধে লা‌খো শহী‌দের র‌ক্তের বিনিময়ে ও মা-‌বো‌নের ইজ্জ‌তের বি‌নিম‌য়ে অর্জিত হয় আমা‌দের বাংলার ও বাঙ্গালীর স্বাধীনতা।কিন্তু সারা দেশ যখন ১৬ ডিসেম্বরের মধে স্বাধীনতা অর্জন করে সেখানে রাজবাড়ী স্বাধীন হয় দুই দিন পর ১৮ ডি‌সেম্বর। ১৬ই ডিসেম্বর পাকবাহিনীরা আত্মসমর্পন করলেও রাজবাড়ী শহর তখনো পাকহানাদার ও বিহারীদের কবল থেকে রাজবাড়ীকে মুক্ত করার জন্য যশোর, মাগুড়া, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিবাহিনী শহরে অবস্থান নেয়।

এ খবরে বিহারীরা রেল লাইনের পাশে অবস্থান নেয় এবং লোকোশেড থেকে ড্রাই-আইস ফ্যাক্টরি পর্যন্ত ট্রেনের বাঙ্কার দিয়ে রেল লাইন অবরুদ্ধ করে রাখে। মুক্তিযোদ্ধারা বিহারীদের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করলেও ট্রেনের বাঙ্কারের কারনে তাদের পরাস্ত করা যায়নি। বিকল্প পথ হিসেবে যশোর থেকে আনা মর্টারের গুলি বর্ষণ শুরু করলে বিহারীদের সাথে তুমুল যুদ্ধ হয়। এক পর্যায় বিহারীদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে রাজবাড়ী স্বাধীন হয়।

রাজবাড়ী শহরের নিউ কলোনি, আটাশ কলোনী, ষ্টেশন ও লোকোশেড কলোনী রেললাইন এলাকায় অবাঙ্গালী বিহারীদের বসবাসের স্থান হওয়ায়। পাকিস্থান আমলে ছিলো তাদের প্রচন্ড প্রভাব। রাজবাড়ীতে পাক বাহিনী প্রবেশের পর বিহারীরাতাদের সাথে যোগ সাজসে নির্বিচারে চালাতে থাকে জালাও-পোড়াও ও গণহত্যা।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সা‌লের ১৬ ডিসেম্বর সারা‌দেশ বিজয় অর্জন সম্ভব হলেও বিহারী অধ্যুসিত এলাকা হওয়ায় রাজবাড়ীর প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। অবাঙ্গালী বিহারী‌দের সাথে যুদ্ধ কর‌তে স্থানীয় মু‌ক্তি‌যোদ্ধা‌দের সা‌থে য‌শোর, মাগুড়া, ফ‌রিদপুর, কু‌ষ্টিয়ার মুক্তি‌যোদ্ধারা সহ‌যোগীতা ক‌রেন।

রাজাকাররা সাধারন মানু‌ষর উপর অমানু‌ষিক নির্যাতন ক‌রে। নিউ কোলনী, আঠাশ কোলনী, লোক‌শেডসহ বি‌ভিন্নস্থা‌নে মানুষ হত্যা ক‌রে মা‌টি‌তে পু‌তে রাখে বিহারীরা ও পাক হানাদার বাহীনি।

রাজবাড়ী জেলার সাবেক ইউনিট কমান্ডার বীর মু‌ক্তি‌যোদ্ধা আবুল হো‌সেন ব‌লেন, ৮ নম্বর সেক্টে‌রের অ‌ধী‌নে রাজবাড়ী‌তে যুদ্ধ হ‌য় এবং এ জেলাটি অবাঙ্গালী বিহারী অধ্যুসিত এলাকা ও শক্তিশালী হওয়ায় তাদের সাথে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা পেরে ওঠেনি। এ কারণে য‌শোর, মাগুড়া, কু‌ষ্টিয়া, ফ‌রিদপুর থে‌কে আসা মু‌ক্তি‌যোদ্ধাদের সহযোগীতায় ১৮ ডিসেম্বর রাজবাড়ী‌কে শত্রু মুক্ত করা হয়।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here