Thursday, April 25, 2024

পুঁজি সল্পতার অভাবে বিলপ্তির পথে বাঁশ ও বেত শিল্প

  • স্বল্প পুঁজিতে রোজগার কম হওয়ার কারণে এ শিল্পীরা এখন ভিন্ন পেশায় ঝুকছেন। তারপরও অনেকেই স্বল্প পুঁজি দিয়েই ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করছেন। আবার প্লাস্টিক পন্যের প্রভাবে বাজার থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে পরিবেশ সম্মত বাঁশ ও বেত শিল্প।

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার শহরের সন্নিকটে পুর্বমৌকুড়ী ঋষিপল্লী। এ পল্লীর ৩৫টি পরিবারের বেশির ভাগই বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরী করে ডালা, কুলা, সের, ধামা, চালুন, খৈ চালাসহ গ্রামাঞ্চলের কৃষক পরিবারের কাজের জন্য বিভিন্ন ধরণের তৈজসপত্র। এ পল্লীর বেশির ভাগ কর্মজীবি নারী সল্প পুঁজিতে কাজ করছেন। তাদেরকে সরকারী ভাবে সহযোগিতা করে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের পুর্বমৌকুড়ি গ্রামের প্রদীপ দাসের স্ত্রী রুপালী দাস । তার  স্বামী সেলুনের কাজ করলেও তিনি বাড়ীতে বসে না থেকে বাড়ীর কাজের পাশাপাশি করেন বাঁশের তৈরী চালুন ও কুলা তৈরীর কাজ। ২ ছেলে লেখাপড়া করছে আর মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। তার ১৬-১৭ বছর বয়সে বিয়ে হয়। বিয়ের পর অভাবের সংসারে একটু সচ্ছলতা আনতে বাঁশের তৈরী কুলা ও চালুন তৈরীর কাজ করে আসছেন। পুঁজি সল্পতা ও অর্থাভাবে ১-২টা করে বাঁশ ক্রয় করে তৈরী করেন। এতে তার সপ্তাহে ৫-৬শত টাকা আয় হয়। পুঁজি বাড়লে আয়ও বেশি করা সম্ভব। তিনি বলেন, সরকারী ভাবে সহজ শর্তে ঋন বা এককালীন অনুদান দিলেও তাদের ব্যবসা প্রসার করে সংসারে সচ্ছলতা আনা সম্ভব বলে সহায়তার দাবী জানান।
শেফালী দাস। তিনিও পুর্বমৌকুড়ী গ্রামের মিলন দাসের স্ত্রী। তার স্বামীও সেলুনের কাজ করেন। ২ ছেলে একজন এসএসসি পাশ করার পর গ্রীলের কাজ শিখছে আর ছোট ছেলে চয়ন দাস অষ্টম শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে। তিনিও বাঁশের দিয়ে আসবাবপত্র তৈরীর কাজ করেন। নিজের সল্প পুজিতে বাঁশ ক্রয় করে তৈরী করি। এতে সপ্তাহে ৫-৬শত টাকা আয় হয়। ১৪-১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয় তার। আর্থিক সহায়তা বা সহজ শর্তে ঋন পেলে আরো বেশি আয় করা সম্ভব। আর বাঁশের তৈরী আসবাবপত্র বিক্রি করতে বাজারে যেতে হয় না। বাড়ী থেকেই বিক্রি করা হয়। অর্থের অভাবে অনেক সময় কাজ বন্ধ করতে হয়। তবে নিজে আয় করার কারণে সংসারে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জিজ্ঞাসা করে নেয়।
চন্দনা দাস। তিনি পুর্বমৌকুড়ী গ্রামের সত্য দাসের স্ত্রী। ২ সন্তান। একজন স্কুলে যায় ও অন্যজন এখনো স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি। সেও বাঁশ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরীর কাজ করেন। বাড়ীর কাজের পাশাপাশি স্বামীর সহযোগিতায় এ কাজ করেন। প্রতিটি কুলা তৈরী করতে ২৫-৩০টাকা খরচ হয়। ৫০টাকা বিক্রি করি। বাজারে গিয়ে বিক্রি করতে হয় না। বিভিন্ন লোকজন এসে বাড়ী থেকে ক্রয় করে নিয়ে যান। তবে তিনিও দাবী করেন আর্থিক ভাবে সহায়তা পেলে ঘুরে দাড়ানো সম্ভব।
আদুরী দাস। তিনি পুর্বমৌকুড়ী গ্রামের অরুন দাসের স্ত্রী। স্বামী বেতের কাজ করলেও বেতের দাম বেশি ও পুঁজি না থাকার কারণে তিনি এখন বেকার। নিজে বাঁশের কাজ করে প্রতি সপ্তাহে ৭-৮শত টাকা আয় হয় তা দিয়েই কোন মতে সংসার চলে। ২ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে ২ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে অন্তু সেলুনের কাজ করে। বেতের আসবাবপত্রের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও পুঁজির অভাবে কাজ বন্ধ রয়েছে। সরকারী ভাবে আর্থিক সহায়তা বা সহজশর্তে ঋন পেলে বাঁশ ও বেতের তৈরীর কাজের ব্যপ্তি ঘটানো সম্ভব।
ইতি দাস। তিনি পুর্বমৌকুড়ী গ্রামের চিত্ত দাসের স্ত্রী। বাঁশের তৈরী আসবাবপত্র তৈরী করেই চলে তার সংসার। এক মেয়ে স্কুলে পড়ে। সপ্তাহে ৫-৬শত টাকা আয় হয়। তবে অর্থাভাবে এ কাজ খুড়িয়ে খুড়িয়ে করতে হচ্ছে। সরকারী ভাবে সহযোগিতা পেলে সংসারে সচ্ছলতা ও ব্যবসার পরিধি বাড়ানো সম্ভব হবে।
অবহেলিত ও অসহায় ঋষি জনগোষ্টির অদম্য মেধা দিয়ে তৈরী বাঁশ ও বেত শিল্পকে রক্ষায় সরকারী ভাবে সহজশর্তে ঋন বা সরকারী অনুদান দিয়ে এদের পাশে দাড়ানো হলেই টিকবে এ শিল্প। এদের পাশে দাড়াতে সরকারী ও বেসরকারী ভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানাই।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা দলিত পঞ্চায়েত ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বিপুল কুমার দাস বলেন, বাঁশ ও বেতের অগ্নিমূল্যের কারণে পুজির অভাবে বেশির ভাগ বাঁশ ও বেঁত শিল্পীদের দুর্দিন চলছে। কারণ বেশির ভাগ এসব কাজ করে নারীরা। সরকারী ভাবে আর্থিক সুবিধা, অনুদান বা সহজশর্তে ঋন দিয়ে এদেরকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা সম্ভব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ হাসিবুল হাসান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বির্নিমানে। সকল পেশার মানুষের অংশগ্রহণে স্বপ্নপুরণ হবে। আমরা পুর্বমৌকুড়ী ঋষিপল্লীর বাঁশ ও বেত শিল্পীদের সব সময়ই সহযোগিতা করে থাকি। তারা যদি আমাদের কোন সহযোগিতা চান তাহলে অবশ্যই তাদের সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here