Thursday, April 18, 2024

বিলুপ্তির পথে তাঁতশিল্প

নেহাল আহমেদ, রাজবাড়ীঃ বর্তমানে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের  একটি তাতঁ শিল্প যা প্রায় বিলুপ্ত । অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশে তাতঁ এর ব্যবহার অনেক কমে গেছে । যেখানে আগে রাজবাড়ী অনেক এলাকায় তাতঁ বুনা হতো সেখানে বর্তমানে তাঁতির সংখ্যা নেই বললেই চলে। যাও দুই একজন আছে তারা ন্যায্য মূল্যে কাপড় বিক্রি করতে পারে না। রাজবাড়ী জেলায় কিছুদিন আগেও কাঁক ডাকা ভোর থেকে অনেক জায়গায় তাতেঁর খটখটানি আওয়াজ পাওয়া যেত। কালের বিবর্তনে এখন হারিয়ে যেতে বসেছে তাতঁ কারিগরদের কর্ম ব্যস্থতা।রামকান্তপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের প্রায় প্রতি ঘরেই তাঁত শিল্প ছিলো । সেখানে ৬ নং ওয়ার্ড এর একটি এলাকা তাতীপাড়া নাম। কিন্তু হাতে গোনা দু’একটি ঘর বাদে অন্যান্য সবাই বিকল্প পেশা বেছে নিয়েছে।  তাতী পাড়া নাম থাকলেও সে এলাকাতে নেই তাঁত। তাঁত শিল্পে পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদেরও কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা ছিলো। বাড়ীতে অলস সময় পার করা মহিলার সুতা ভবিনে চরকির মাধ্যমে ভরে দুই তিনশত টাকা আয় করতো দিনে।

ইলেক্ট্রনিক পাওয়ার লুমের কাছে হ্যান্ডর লুম পেরে উঠছে না। রাজবাড়ী জেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের আকবার মুন্সি জানান আগে পনেরটা জাপানি হ্যান্ডলুম মেশিন ছিল ক্রমাগত লোকশান খেতে খেতে এখন পাঁচটা আছে। তাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে যে কোন সময়। কারন হিসাবে সুতাসহ তাঁত শিল্পের সব উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির কথা জানান।
লাভ না থাকায় এ পেশায় নতুন করে আসতে চায়না এখন। এ কারণে তাঁত শিল্প বিলুপ্তির পথে। তবে এক সময় শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে সঙ্গে রাজবাড়ী তাঁত শিল্পের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছিল।

এ শিল্পের উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গি, গামছাসহ নানা পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি সম্ভব। তবে এ শিল্পে সুতাসহ উপকরণের ক্রমাগত মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় উৎপাদিত পণ্য বাজারে লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে তাঁত শিল্প মালিকদের। এ কারণে জেলার অধিকাংশ তাঁত শিল্প বন্ধের দ্বারপ্রান্তে। উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অনেক কারখানা মালিক এই শিল্পকে বন্ধ করে বিকল্প ব্যবসা বেছে নিচ্ছেন।

তাঁত কারখানার শ্রমিকরা জয়নাল ফকির জানিয়েছেন, অন্য কোনো কাজ না জানার কারণে তাঁত কারখানায় কাজ করি। এখন তাঁতের কাপড়ের বাজারের যে অবস্থা তাঁতে মহাজনরা লোকসান দিয়ে বেচাকেনা করে আমাদের মজুরি দেয়। এভাবে কতদিন লোকসান দেবে মহাজনরা? ঠিক মতো বেচাকেনা না থাকলে আমাদের মজুরি দিতে পারবে না। আর মজুরি না পাইলে আমাদের ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

বিসিক এ ব্যাপারে সহযোগিতা করে থাকে। রাজবাড়ী বিসিক শিল্প নগরীর শিল্প ককর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি জানান বৈশ্বিক শিল্প বিপ্লবের কারনেই এইসব হ্যান্ডলুম শ্রমিকরা পিছিয়ে পড়ছে। ইলেক্টিক মেশিন যেখানে সারাদিনে পাঁচশত গামছা তৈরি করতে পারে সেখানে এই সব হাতের তৈরি মেশিন দশটাও উৎপাদন করতে পারে না।তাছাড়া সুতার দাম বাড়াতে আমাদের কোন হাত নেই। তবে তারা যদি মনে করে তাদের সার্বিক সহযোগিতা এবং লোনের ব্যাপারে আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করবো।

রাজবাড়ী থেকে কাপড় কিনতে আসা বেপারী জানান, তাতঁ শিল্পের সরকার যদি সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা দেয় তাহলে আমাদের মহাজন ও তাঁত শিল্প মালিকদের ক্রয়-বিক্রয় ভালো হবে। তা না হলে তাঁত শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে।

কালুখালির মদাপুরের তাত মালিক বেলাল সহ অন্যান্য তাঁত মালিকরা জানান, সুতাসহ উপকরণের মূল্য নির্ধারণ করে এবং স্বল্প সুদে ঋণ দিলে এ শিল্প সচল করা সম্ভব হবে। তাই সরকারের কাছে জোর দাবি- সুতাসহ উৎপাদনের উপকরণের দাম নির্ধারণ করে আমাদের এ ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সহযোগিতা করুন, নতুবা এক দিন আমাদের এই শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here