রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় মাছের প্রজনন মৌসুমে নিষিদ্ধ কারেন্ট ও বাধাই জালের পর এবার ভয়ঙ্কর চায়না দুয়ারী বা ঢলুক জালের ফাঁদে দেশীয় প্রজাতির সব মাছ ও কাকরা সহজেই ধরার আশায় নদ-নদীজুড়ে জেলেরা ব্যবহার করতে শুরু করেছে এই চায়না দুয়ারী। জানাগেছে, নদ-নদীতে থাকা মিঠা পানির সব ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ সুক্ষ এই জালে ধরা পড়ছে। বিশেষ করে পানি বৃদ্ধি ও মাছের প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা চিংড়ি, পুঁটি, টেংরা, কই, সিং, মাগুর, তেলাপিয়া, বেলে, বোয়াল, শোল, টাকি ও কাকরাসহ প্রাকৃতিক সব মাছ এই সর্বশেষ প্রযুক্তির চায়না জালে নিধন হচ্ছে। এতে ক্রমেই মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে নদ-নদী, খাল-বিল ও ছোট নদীগুলো। স্থানীয় জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চায়না দুয়ারী সাধারণত এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতা ৬০ থেকে ৯০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ক্ষুদ্র ফাঁশবিশিষ্ট ঢলুক আকৃতির হয়ে থাকে। লোহার ৪টি রড ও রডের রিং দিয়ে খোঁপ খোঁপ আকারে ব· তৈরি করে চারপাশ সুক্ষ জাল দিয়ে ঘেড়াও করে তৈরি করা হয়। এই জালের বিশেষ বৈশিষ্ট হলো নদীর তলদেশে লম্বালম্বি ভাবে লেগে থাকে। ফলে কোন প্রকার খাদ্য দ্রব্য ছাড়াই দুদিক থেকেই মাছ ঢুকতে পারে তবে কেউ কেউ অতিরিক্ত মাছের আশায় ঘ্রান জাতীয় খাবার দিয়ে থাকে। একটি চায়না জালের দাম (মান ভেদে) ৩থেকে ৭হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রথমদিকে ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ, মাগুরা, পাবনার বেড়া উপজেলার বিভিন্ন কারখানায় তৈরি হলেও এখন নদী বেষ্টিত সব এলাকায় এ জাল তৈরি হচ্ছে। আর ধুমছে বিক্রি হচ্ছে হাট বাজারে। স্থানীয় পেশাদার জেলেরা জানান, চায়না জালে সব ধরণের মাছ ছেঁকে উঠে, সহজেই মাছ ধরা যায় এবং দাম কম হওয়ায়, অহরহ স্থানীয় মৌসুমি মৎস শিকারীরা মাছ ধরতে নেমেছে। ফলে আমরা যারা চিরাচরিত কৌশল দিয়ে মাছ ধরতাম তাদের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে চায়না জাল কিনেছে, কেউ কেউ কিনতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। নদী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, বিকাল হলেই ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় করে এই জাল পাতা হয়। সারারাত পেতে রাখার পর সকালে তুলে আনা হয় পাড়ে। এসময় জালে ধরা পড়ে দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় সব মাছ, নদীতে থাকা জলজ প্রানী এমনকি ছেঁকে ওঠে মাছের ডিমও। এ জাল দিয়ে মাছ ধরলে কিছুদিন পর হয়ত নদীতে আর কোনো মাছ পাওয়া যাবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চায়না জাল দিয়ে মাছ শিকারী জেলে জানান, চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরা ঠিক না তার পরও জীবিকার তাগিদে মাছ ধরি। গোয়ালন্দ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা মো. রেজাউল শরীফ দৈনিক ইনকিলাব কে বলেন, চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ শিকার করা সম্পূর্ণরুপে বেআইনী কাজ। প্রাথমিকভাবে সকল প্রকার নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে প্রচার প্রচারণা চলমান রয়েছে। আমরা সকল প্রকার নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকি। আমাদের এ অভিযান অব্যহত থাকবে এবং আরো জোরালোভাবে চালানো হবে।