Tuesday, April 23, 2024

টোকিও জাপানে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের কথা ভাবছে : দূত

ঢাকা, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২ : ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছেন, তার দেশ কিছু রোহিঙ্গাকে জাপানে পুনর্বাসনের কথা ভাবছে। ঢাকা যখন নিপীড়ন এড়াতে মিয়ানমার থেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা দশ লাখের বেশি শরণার্থীর ভার কমানোর চেষ্টা করছে তখন তিনি একথা জানালেন।

জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত তার মেয়াদ শেষে ঢাকা ত্যাগের আগে বাসস’কে বলেন, জাপান অবাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের অনুরোধ পেয়েছে। এখানে ইউএনএইচসিআরও আমাদেরকে রোহিঙ্গাদের জাপানে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনা করার পরামর্শ দিচ্ছে।

ইতো অবশ্য আরও বলেন, আনুমানিক ৩০০ রোহিঙ্গা ইতিমধ্যেই টোকিও থেকে ১০০ কিলোমিটার উত্তরে একটি শহরে বাস করছে। কিন্তু সাধারণ নীতি অনুসারে জাপান বিদেশী শরণার্থীদের বিষয়ে কিছুটা সতর্ক ছিল, যদিও তার দেশ যখন এই ধরনের আশ্রয় দেয় তখন এর পূর্ব-নজিরও ছিল।
গত রাতে ঢাকা ত্যাগ করা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সুতরাং, সেখানে (জাপানে) রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের একটি বেস রয়েছে, তবে এই মুহূর্তে আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এর আগে বলেছিলেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও জাপানকে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার বোঝা ভাগাভাগি করার আহ্বান জানিয়েছেন।

মোমেন সংবাদকর্মীদের বলেছেন, তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে এই দেশগুলোর প্রত্যেকে ২০১৭ সালে সেনা-সমর্থিত জাতিগত দমন-পীড়নের মধ্যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতদের মধ্য থেকে অন্তত এক লাখ করে নিতে পারে।
বারবার পীড়াপীড়ি করেও মিয়ানমার এখন পর্যন্ত তাদের আশ্বাস সত্ত্বেও একজন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়নি।
ঢাকার অনুরোধের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে প্রতীকীভাবে ২৪ রোহিঙ্গাকে নিয়ে গেছে। মোমেন এই অগ্রগতিকে ‘সিন্ধুর এক বিন্দু’ বলে অভিহিত করেন।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ঢাকাকে জানিয়েছে যে তারা প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে কিছু রোহিঙ্গা নিয়ে যাবে এবং তাদের মধ্যে ৬২ জনকে প্রথম ব্যাচের জন্য সংক্ষিপ্তভাবে তালিকাভুক্ত করেছে।
জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা জানি প্রত্যাবাসনই এই সমস্যার (একমাত্র) সমাধান এবং মিয়ানমারই একমাত্র দেশ যেটি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে এ সমাধান দিতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, টোকিও ‘গভীরভাবে আশা করছে’ মিয়ানমার-বাংলাদেশের আলোচনা প্রক্রিয়া শেষ হবে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
ইতো বলেন, রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে জাপান বাংলাদেশ সরকারের সাথে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে এবং মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে, তবে তারা এক্ষেত্রে ‘মধ্যস্থতা’ শব্দটি ব্যবহার করতে আগ্রহী।
ইতো বলেছেন, ‘আমাদের এখনও প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং, আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখব, আমরা জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর প্রতি আমাদের তহবিল অব্যাহত রাখব।’
তিনি বলেন, টোকিও এ বছর রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিলের পরিমাণ বাড়িয়েছে। বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত মানুষ ও হোস্ট সম্প্রদায়ের জন্য ২৭.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করেছে, যেখানে গত বছর এই পরিমাণ ছিল ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

রাষ্ট্রদূত বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন রুদ্ধের কারণে জাপানের বৈদেশিক সহায়তা মূলত ইউক্রেনের দিকে সরে যেতে পারে এমন জল্পনা সত্ত্বেও এই বর্ধিত বরাদ্দের মাধ্যমে সংকটের দিকে টোকিওর গুরুত্ব প্রকাশ পেয়েছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থায় জাপানের অবদান বাড়ছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি মনে করি এটি স্পষ্ট প্রমাণ যে আমরা এখনও এই (রোহিঙ্গা) সংকটের দিকে মনোনিবেশ করছি। আমরা এখনও কক্সবাজার ও ভাসানচর শিবিরের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রার সংকট নিরসণে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলায় ১২ মিলিয়নেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রঢ দিয়েছে এবং তাদের বেশিরভাগই মিয়ানমারের সামরিক দমনের পরে এখানে এসেছে, যাকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নির্মূলের প্রকৃষ্ট উদাহরণ’ ও অন্যান্য অধিকার সুরক্ষার গোষ্ঠী এটাকে ‘গণহত্যা’ হিসাবে অভিহিত করেছে।

রাখাইন রাজ্যে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের মধ্যে আস্থার ঘাটতির কারণে প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা দুইবার ব্যর্থ হয়েছে। আর গত পাঁচ বছরে কোনো রোহিঙ্গাই দেশে ফিরে যেতে পারেনি।

মিয়ানমাওে প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হলেও বাংলাদেশ সরকার উন্নত দেশগুলোকে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের দলগুলোকে তৃতীয় দেশ হিসেবে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে।

 

 

সূত্রঃ (বাসস)

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here