অনলাইন ডেস্ক: আপনি নিশ্চয়ই জানেন, শরীরচর্চা হৃদয়ের জন্য ভালো। কিন্তু যদি বলা হয়—প্রতিদিন মাত্র ৩ মিনিট তীব্র নড়াচড়াতেই হৃদরোগ, স্ট্রোক কিংবা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি প্রায় ৫০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে—তাহলে?
হ্যাঁ, ঠিক এই চমকে দেওয়া তথ্যই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। গবেষণাটি পরিচালিত হয় যুক্তরাজ্যের ইউকে বায়োব্যাঙ্কের তথ্য ব্যবহার করে, যেখানে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে নিয়মিত ব্যায়াম না করা ২৪,১৩৯ জন মানুষের ওপর বিশ্লেষণ চালানো হয়। অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ছিল ৬২, যাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ছিলেন নারী।
গবেষকরা স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের দৈনন্দিন চলাফেরা, হালকা থেকে তীব্র ব্যায়াম, এসবের সময় শক্তি ব্যয়ের মাত্রা বিশ্লেষণ করেন এবং তা হৃদরোগ, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, হৃদযন্ত্র বিকল বা মৃত্যুজনিত ঝুঁকির সঙ্গে তুলনা করেন।
ব্যায়াম নয়, দৈনন্দিন জীবনের ‘জোরালো নড়াচড়া’ই যথেষ্ট
গবেষণায় যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো—’ইনসিডেন্টাল ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি’ বা দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজের মাঝে হঠাৎ হওয়া জোরালো শারীরিক নড়াচড়া। যেমন:
দেরি হয়ে গেছে দেখে কয়েকতলা সিঁড়ি একটানে উঠে যাওয়া
বাস ধরতে জোরে দৌড়ানো
রান্না করতে করতেই একটু নেচে নেওয়া
বাজারের ব্যাগ একবারে সিঁড়ি দিয়ে তুলে নেওয়া
এসব কাজকে আমরা সচরাচর “ব্যায়াম” বলি না, কিন্তু এসব তীব্র গতির নড়াচড়াই হৃৎপিণ্ডের জন্য আশীর্বাদ।
সময় নয়, প্রয়াসই বড় কথা
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা জিমে না গেলেও দৈনন্দিন জীবনে মাঝে মাঝে এমনভাবে জোরে নড়ে চড়ে থাকেন, তাদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে তাদের তুলনায় যারা একেবারেই সক্রিয় নন।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (CDC)-এর মতে, দীর্ঘ সময় ব্যায়ামের দরকার নেই—দুয়েক মিনিটের তীব্র গতি হৃদয়কে যে ধাক্কা দেয়, তা-ই যথেষ্ট।
মাত্র ৩ মিনিট কীভাবে পাবেন?
কিছু সহজ উপায়:
লিফট নয়, সিঁড়ি ব্যবহার করুন
দ্রুত কিছু কাজ সেরে ফেলুন দ্রুত গতিতে
ভিডিও দেখার ফাঁকে ১ মিনিট নাচুন
টিভির বিরতিতে জাম্পিং জ্যাক করুন
ফোনে কথা বলার সময় হেঁটে নিন
বাজারের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠুন
বিজ্ঞান কী বলছে?
মাত্র এক মিনিটের তীব্র গতির হাঁটা বা দৌড়ে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, রক্ত চলাচল বাড়ে, ধমনী নমনীয় হয়, রক্তচাপ কমে এবং হৃদযন্ত্র শক্তিশালী হয়। এটি অনেকটা হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং (HIIT)-এর মতো, কিন্তু কোনো রুটিন ছাড়াই।
সুতরাং, জীবনযাত্রা পাল্টে ফেলতে হবে না—শুধু সচেতনতা আর নড়াচড়া বাড়ালেই চলবে।
তিন মিনিটেই আপনার হৃদয় পেতে পারে নতুন জীবনের স্পন্দন। আজ থেকেই চেষ্টা করে দেখুন!