গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)প্রতিনিধি: দেশের বৃহত্তম যৌনপল্লি রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া যৌনপল্লি এবং এর পার্শ্ববর্তী শিশুদের অংশগ্রহণে একটি জমজমাট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো দৌলতদিয়া মুক্তি মহিলা সমিতির অংশ দৌলতদিয়া চাইল্ড ক্লাবের। এযেন বড়দের আদলে ছোটদের এক জমজমাট নির্বাচন। যেখানে মানা হয় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন প্রণীত সকল বিধি বিধান।
শনিবার (৩১ডিসেম্বর) দৌলতদিয়া যৌনপল্লী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সমন্বয়ে গঠিত ‘চাইল্ড ক্লাবের’ নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য বরাবরের মতো এবারও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মোট ৭৭৫ জন শিশু গোপন ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। এখানে নয় পদের জন্য লড়াই করছেন বিশজন প্রার্থী।
মুক্তি মহিলা সমিতি ও মুসলিম চ্যারিটি ইউকে এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হলো চাইল্ড ক্লাব নির্বাচন-২০২২। মুক্তি মহিলা সমিতি ২০১৩ সাল হতে দৌলতদিয়া যৌনপল্লী ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে অধিকার নিশ্চিত করা এবং তাদের সুষ্ঠু বিকাশের লক্ষ্য চাইল্ড ক্লাব নানামুখী কাজ করছে। যৌনপল্লীর নারী ও শিশুদের জন্য কাজ করা সংগঠন মুক্তি মহিলা সমিতি ‘চাইল্ড ক্লাবের’ এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে।
এ কাজের অংশ হিসেবে শিশুদের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা ও নেতৃত্বদানে শিশুকাল হতেই সক্ষম করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিবছর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন উপলক্ষে গত কয়েক দিন ধরে যৌনপল্লী এলাকার শিশুদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
মুক্তি মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা বেগম জানান, এবারের নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল, নির্বাচন রিটার্নিং কর্মকর্তা দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ সহিদুল ইসলাম। প্রিজাইডিং অফিসার সালেহা খানম, প্রভাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আবদুল জব্বার গার্লস কলেজ এছাড়া নির্বাচন পরিচালনার জন্য এলাকার শিক্ষিত ও অভিজ্ঞরা অন্যান্য দায়িত্ব পালন করেন।
শনিবার সকাল ১০টা হতে বেলা ৩টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হয়। পরে সবাই একসঙ্গে মিলে দুপুরের খাবার গ্রহণ করে। নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যার যার মতো প্রচার-প্রচারণা চালালেও সেটা ছিল পুরোপুরি উৎসবের মেজাজে।
চাইল্ড ক্লাবের সাবেক চেয়ারম্যান ও নির্বাচনে পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব পালনকারী কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী আল- আমিন মিয়া জানায়, আমি গত বছর এই ক্বাবের সভাপতি ছিলাম আমার এই সময়ের মধ্যে আমরা চারটি বাল্য বিবাহ বন্ধ করেছি, সতেরো জন ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীকে স্কুলে ফেরানো হয়েছে, দুটি মেয়ে শিশুকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করা হয়েছে। তাছাড়া এই সময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সাথে চাইল্ড ক্লাবের গ্রহণ যোগ্যতা বেড়েছ। তাছাড়া আমরা যৌনকর্মীর সন্তান আমাদের এবং সাধারণ পরিবারে বেড়ে উঠা সন্তাদের মধ্যে একটা দেয়াল থাকে তারা আমাদের সাথে মিশতে ও কথা বলতে চাইতো না। সেই দেয়াল অনেকটা ম্লান হয়েছে বলে আমি মনে করি।
নির্বাচনে প্রার্থী সুমাইয়া আক্তার, কথা মনি ও শামিম মন্ডল জানায়, চাইল্ড ক্লাব তাদের শিক্ষা, সুরক্ষা, সুস্বাস্থ্য, গণতন্ত্র চর্চাসহ নানা অধিকার বিষয়ে সজাগ করেছে। আমরা এখান থেকে অনেক কিছু শিখতে পারছি। নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক আমরা মিলেমিশে সবাই এখানকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করব।
দুপরে অতিথি হিসেবে নির্বাচন কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন সাবেক রাজবাড়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আবদুল জব্বার সহ বিভিন্ন পর্যায়ের অতিথিরা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আবদুল জব্বার তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ নির্বাচন শিশুদের নেতৃত্ব বিকাশ ও গণতন্ত্রের চর্চার জন্য তাদের ভবিষ্যৎ পাথেয় হয়ে থাকবে। এখানে কোন ক্ষমতার দাপট নেই, এখানে বখাটেদের ভয়ভীতি নেই। গনতন্ত্র বিকাশে অনন্য উদাহরন হিসেবে কাজ করবে এই নির্বাচন।
Rj/srj/