মোঃ আমিরুল হক : কৃষি তথ্য, কৃষি সমস্যা সমাধান, কৃষকের স্কুল, উঠান বৈঠক, মাঠ দিবস, কৃষক সমাবেশ, কৃষি বায়োস্কোপ প্রদর্শণ প্রভৃতি সম্প্রসারণ মূলক নানা কর্মকান্ডের মাধ্যমে কৃষকের দোড় গোড়ায় পৌছেছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস। বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের সাথে উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের সু-সম্পর্কের মাধ্যমে আরো গতিশীল হচ্ছে কৃষি সেবা।
নিরাপদ উপায়ে ফসল উৎপাদন, শ্রমিক সংকট নিরসনে কৃষিতে যান্ত্রিকরণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মেধাবী জাতি হিসাবে তৈরী করতে সর্বস্তরে পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিতে নিরাপদ সবজি ও ফসল উৎপাদনে ভুমিকা রাখছে অফিসটি। এরই ফলশ্রæতিতে বিগত ২০১২-২৩ অর্থ বছরে উপজেলাটিতে নিরাপদ উপায়ে সবজির আবাদ উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এর নৈপথ্যে রয়েছে বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম।
উঠান বৈঠক, মাঠ দিবস, কৃষক সমাবেশ, কৃষি বায়োস্কোপ প্রদর্শণ প্রভৃতি সম্প্রসারণ মূলক কর্মকান্ডের কারণে নিরাপদ উপায়ে ফসল চাষ সম্প্রসারণে বালিয়াকান্দি উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
তিনি এরই মধ্যে উপজেলার কৃষি খাতকে অনন্য এক দৃষ্টান্তের দিকে নিয়ে এসেছেন। কৃষি বিভাগকে সঠিক নিয়মের মাঝে থেকে গ্রামে গ্রামে প্রান্তিক চাষি সৃষ্টি করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা পূরণে তথা বর্তমান সরকারের রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
এছাড়া বর্তমান সরকারের কৃষি প্রণোদনার আওতায় কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ বিতরণ, কৃষক সমাবেশ মাটির স্বাস্থ সুরক্ষায় সবুজ সার হিসাবে ধৈঞ্চার চাষ সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে দপ্তরটি।
কিছুদিন ধরে উপজেলাটিতে বেশকিছু কৃষক কেঁচো সার উৎপাদন ও বাজারজাত করে সাবলম্বী হয়েছে। এই জৈব সারটি অত্যন্ত উৎকৃষ্ট মানের হওয়াতে এবং মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করায় সকল ফসল উৎপাদনে এটির ব্যবহারে কৃষক ব্যাপকভাবে উৎসাহিত হচ্ছে।
বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চিত্র উপস্থাপনে উন্নয়ন মেলা করে কৃষি বিভাগ কৃষকের ফসল রক্ষায় জাকীয় ইঁদুর নিধন অভিযানেও ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস। কৃষি যান্ত্রিকরণে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস।
বিভিন্ন ইউনিয়নে যন্ত্র সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষক অর্ধেকেরও কম খরচে যন্ত্রের সাহায্যে ধান রোপন, কর্তন, মাড়াই বীজ বপন করতে পারছে। এতে একদিকে যেমন অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে। অন্যদিকে ভরা মৌসুমে শ্রমিক সংকট নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় তামাক চাষ হচ্ছিলো। কৃষি বিভাগ তামাক চাষে সম্প্রসারন নিরুৎসাহিত করছে। কৃষি বিভাগ, কৃষক সমাবেশ, মাঠ দিবস কৃষক র্যালী প্রভৃতির কারণে এসব কৃষক তামাক চাষের বিকল্প ফসল উৎপাদনের দিকে ঝুকছে।
তার ফল স্বরুপ বিগত অর্থ বছরে সরিষার চাষ হয়েছে ৭ শত ৫০ হেক্টর তথা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি । শীতকালীন ভুট্টার চাষ হয়েছে ৪ শত ৫০ হেক্টর যা পূর্বের তুলনায় বেশি। এছাড়া
বারি ১, ২, ৩, ৪,৫,৬ স্থাণীয় উন্নত জাতের মসুরের চাষ হয়েছে ১শত ৮০ হেক্টর জমিতে, যা পূর্বের চেয়ে দ্বিগুন। পেঁয়াজ চাষ হয়েছে মূলকাঁটা ও হালিসহ ১১ হাজার ৩ শত ৩০ হেক্টর জমিতে। রসুন ১ হাজার ১শত হেক্টরসহ অন্যান্য মসলা জাতীয় ফসলের চাষ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমানে।
এছাড়া ফসলের নতুন জাত সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছেন বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম।
উপজেলায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরের আউশ মৌসুমে বোরো ধান হাইব্রিড চাষ হয়েছে ১শত ৫ হেক্টর জমিতে, বোরোধান উফসী ব্রিধান ১৮, ব্রিধান২২, ব্রিধান ৫০, ব্রিধান ৫৮, ব্রিধান ৬৩, ব্রিধান ৭৪, ব্রিধান ৮১, ব্রিধান ৮৯ ও ব্রিধান ২২ জাতের ধানের চাষ হয়েছে ৫ শত ৮৫ হেক্টর জমিতে। যা উৎপাদনের ক্ষেত্রে চোখে পরার মতো।
উপজেলায় তৈল জাতীয় ফসলের মধ্যে বিনা সরিষা- ৪ ও, বিনা সরিষা- ৯, বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫, বারি সরিষা ১৭ ও বারি সরিষা ১৮ এবং রাই সরিষা জাত গুলো সম্প্রসারিত হওয়ায় কৃষক উপকৃত হচ্ছে। আর বালিয়াকান্দি কৃষি দপ্তরের পরামর্শে ঊৎসাহিত হয়ে কৃষক মোট -৭ শত -৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করেছে। এসব জাতের ফলন অনেক ভালো।
এছাড়া ডাল জাতীয় ফসলের মধ্যে বারি মসুর-৫, বারি মসুর-৬, বারি মসুর-৭ ও বারি ৮ ও স্থাণীয় জাতের ১৮০ হেক্টর, খেসারী বারি ২, বারি৩, বারি ৫ ১ শত -৫০ হেক্টর মটর ৩০ হেক্টর, বারি মুগ-৬ ২ হেক্টর, বারি মাস -১, স্থাণীয় উন্নত ৫ হেক্টর,
জাত গুলোর চাষাবাদ সম্প্রসারিত হওয়ায় চাষ বেড়েছে প্রাই দুই গুন।
এছাড়াও ধনিয়ার আবাদ হয়েছে ১ শত ৫০ হেক্টর, কলোজিরা ১০ হেক্টর, গোয়ামরী ২ হেক্টর, রাঁধুণী ৫ হেক্টর,ও মরিচ চাষাবাদ হয়েছে ১ শত ৫০ হেক্টর জমিতে। শীতকালীন শাকসবজির আবাদও হয়েছে চোখে পড়ার মতো।
যেমন, টমেটো, বেগুন, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পালংশাক, লাউ, সীম, গাজর, বরবটি, মটরশুঁটি, মিষ্টিকুমড়া, ধনিয়াপাতা, উচ্ছে/করোলা, ওলকপিসহ অন্যান্য সবজি চাষ হয়েছে ৯ শত ৯৫ হেক্টর জমিতে। সূর্য্যমূখীর আবাদ হয়েছে ২০ হেক্টর। যা আগের তুলনায় কয়েকগুন বেশি।
কৃষকের পুষ্টি চাহিদা নিরসন কল্পে প্রচলিত ও অপ্রচলিত ফলবাগান করা হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রযুক্তি গ্রাম প্রদর্শণীর মাধ্যমে। তাছাড়াও কৃষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকগণ পুষ্টি বিষয়ে সম্যক জ্ঞান লাভ করছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক বজ্রপাত হতে রক্ষা পাবার নিমিত্তে উপজেলা কৃষি অফিসারের নির্দেশনা ও ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে তালের বীজ রোপনের কার্যক্রম পরিচালনা করেন বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম।