মো ইমদাদুল হক রানাঃ রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের খালকুলা শহীদনগর গ্রামে হাজী আছিরুদ্দিন মৃধা ওয়াকফ্ স্টেটের তিন ফসলী জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খননে বাঁধা প্রদান করায় স্টেটের মোতওয়াল্লী সদর উপজেলার রায়নগর গ্রামের আব্দুর রহমান লিজ গ্রহীতা কৃষকদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা চলমান থাকলেও মোতওয়াল্লী রহমান নালিশি জমিতে ফসল থাকা অবস্থায় ভেকু মেশিন লাগিয়ে পুকুর খননের নামে মাটি বিক্রির পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। দরিদ্র কৃষকগণ প্রশাসনের আশ্রয় চেয়েও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন।
রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে ভুক্ত ভোগীদের সাথে কথাবলে জানা যায়, জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের খালকুলা শহীদনগর গ্রামে দীর্ঘ দিন ধরে হাজী আছিরুদ্দিন মৃধা ওয়াকফ্ স্টেটের মোতওয়াল্লীর নিকট থেকে বছর চুক্তিতে লিজ গ্রহণ করে চাষাবাদ করে পরিবার পরিজনের আহার যুগিয়ে করে আসছেন। চলতি বছরে তাদের নিকট থেকে লিজের টাকা গ্রহণ করেছেন মোতওয়াল্লী আব্দুর রহমান। এতে টাকা গ্রহণের কোন প্রমানাদী প্রদান করেন নাই তিনি। জানা যায় ৯০ নং খালকুলা মৌজার ৯ নং খতিয়ানের বিএস ১২৭৮৫ দাগে ১২২ শতাংশ, ১২৭৯৭ দাগে ০৯ শতাংশ ও ১২৭৯৬ নং দাগে ১২ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করছে এলাকার কয়েকটি পরিবার। সম্প্রতি মোতওয়াল্লী বিভিন্নভাবে পাঁয়তারা করে বাড়তি টাকা দাবী করেন। কৃষকরা একটু সময় চাইলে তিনি কোনো কোনো ইট ভাটার সাথে আতাত করে মাটি বিক্রি করাসহ পুকুর খননের জন্য ভেকু মেশিন নিয়ে আসেন। তাতে বাঁধা দিলে গত ৪ ডিসেম্বর শহীদনগর গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে নিজ গ্রহিতা মোঃ আলমগীর হোসেন, মৃত মোজাহার আলীর ছেলে মোঃ আব্দুল মোমিন, মোঃ আব্দুল জালাল, মোঃ আব্দুল আলাল, মোঃ মজিবর রহমানের ছেলে মোঃ জিল্লু শেখ, মোঃ মোজাহর আলীর ছেলে আব্দুর রসিদ ও মো আব্দুল মান্নান কে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। রাজবাড়ী বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের মামলা নং ১৩০০/২০২২ ইং, ধারা ফৌজদারী কার্যবিধি ১০৭/১১৪/১১৭ (c) ধারা। যা বর্তমানে চলমান। অথচ মতওয়াল্লী সবকিছু উপেক্ষা করেই নালিশি জমিতে পুকুর খননের কাজে হাত দিয়েছেন। এবিষয়ে এলাকাবাসী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে তিন ফসলি জমি রক্ষায় গণস্বাক্ষরসহ আবেদন করেছেন।
এবিষয়ে কথা হয় লিজ গ্রহিতা কৃষক আলমগীর হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, আমি আব্দুর রহমানের নিকট থেকে লিজ গ্রহণ করে সম্প্রতি ফসল বুনেছি। এখন পুকুর খনন করলে আমার ফসল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রের উৎপাদন কমে যাবে। এ বিষয় বোঝাতে গেলে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকালে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমাকে ধমকাতে থাকে। কিছু বুঝে উঠার আগেই তার সাথে থাকা পুলিশ আমাকে মারধর করতে শুরু করে এবং বলে তোকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি আতঙ্কিত হয়ে বসে পড়ি। পড়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ২৬ ডিসেম্বর তাঁর অফিসে দেখা করতে আদেশ দিয়ে চলে যায়।
কৃষক আলাল হোসেন বলেন, আমরা দিন আনি দিন খাই, আমাদের নিকট থেকে সবেমাত্র টাকা নিয়েছে। এখন জমিতে আমাদের ফসল রয়েছে। যদি পুকুর খনন করে তাহলে আমাদের ফসল বিনষ্ট হওয়ার সাথে সাথে রাষ্ট্রের উৎপাদন করে যাবে। আমরা অশিক্ষিত মানুষ আইন বুঝিনা তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে বলেছেন, কোন প্রকার তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন, ইটভাটা নির্মান নিষিদ্ধ করেছেন। অথচ তিন ফসলী জমিতে পুকুর খননের উৎসাহ যোগাচ্ছেন প্রশাসন। এখানে পুকুর খনন হলে আশপাশের বাড়ীঘর মাটিগর্ভে বিলিন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। অসহায় কৃষকগণ উর্ধতন কতৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।