Friday, October 18, 2024

গাজার আল-শিফা হাসপাতাল একটি ‘ডেথ জোন’ : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

জেনেভা  : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রবিবার বলেছে, সংস্থাটি গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালের পরিস্থিতি মূল্যায়নে একটি মিশনের নেতৃত্ব দিয়েছে এবং এটিকে তারা একটি ‘মৃত্যু অঞ্চল’ বলে স্থির করেছে এবং হাসপাতালটির রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী ও সুবিধা সম্পূর্ণ সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ডাব্লিউএইচও এবং অংশীদাররা অবিলম্বে অবশিষ্ট রোগী, কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করছে।’
সংস্থা বলেছে, হাসপাতালের ভিতরে এখনো ২৯১ রোগী এবং ২৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন।

ডাব্লিউএইচও বলেছে, সংস্থাটি শনিবার হাসপাতালে একটি সংক্ষিপ্ত এবং ‘খুব উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ মিশনে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, লজিস্টিক অফিসার এবং বিভিন্ন সংস্থার নিরাপত্তা কর্মী সহ জাতিসংঘের একটি যৌথ দলের নেতৃত্ব দিয়েছে।’
ডাব্লিউএইচও জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এর আগে হাসপাতালের মাঠে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ২,৫০০ বাস্তুচ্যুত মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরে মূল্যায়ন দলটি আল-শিফায় গিয়েছিল।
কমপ্লেক্সের চারপাশে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পর ডাক্তার ও নার্সদের সাথে অসুস্থ, আহত, অঙ্গহানি হয়েছে এমন রোগী এবং বাস্তুচ্যুত মানুষদের অ্যাম্বুলেন্স ছাড়াই সমুদ্রের দিকে যেতে দেখা গেছে। এদিকে নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে জাতিসংঘের মূল্যায়ন দল হাসপাতালের ভেতরে মাত্র এক ঘণ্টা সময় কাটাতে পেরেছিল।
ডাব্লিউএইচও দল, হাসপাতালটিকে ‘মৃত্যু অঞ্চল’ এবং পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ’ হিসাবে বর্ণনা করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘হাসপাতালটিতে শেলিং এবং গুলির চিহ্ন স্পষ্ট ছিল। দলটি হাসপাতালের প্রবেশপথে একটি গণকবর দেখেছিল এবং সেখানে ৮০ জনেরও বেশি লোককে কবর দেওয়া হয়েছে।’
হু বলেছে, ছয় সপ্তাহ ধরে বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি, ওষুধ, খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সাহায্যের অভাবের কারণে গাজার সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে উন্নত হাসপাতালটি মূলত একটি চিকিৎসা সুবিধা হিসেবে এর কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।

এতে বলা হয়, ‘করিডোর এবং হাসপাতালের মাঠ চিকিৎসা ও কঠিন বর্জ্যে ভরা ছিল, যা সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।’
হু বলেছে, হাসপাতালে বাকি রোগীদের মধ্যে ‘অত্যন্ত গুরুতর অবস্থায়’ ৩২ জন শিশু ছিল।
বায়ু চলাচল ছাড়াই নিবিড় পরিচর্যায় দুজন ব্যক্তিও ছিলেন, ২২ জন ডায়ালাইসিস রোগী যাদের জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসার সুবিধা মারাত্মকভাবে বাতিল করা হয়েছিল এবং অনেকে ট্রমা শিকার।
ডাব্লিউএইচও জানিয়েছে, ‘চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ থাকার কারণে’ গত দুই থেকে তিন দিনে বেশ কয়েকজন রোগী মারা গেছেন।
জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, হাসপাতালের অবস্থা দেখে, দলটি স্বাস্থ্যকর্মী এবং রোগীদের অন্যান্য সুবিধা অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলেছে।
হু  প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইসাস এক্স-এ (সাবেক টুইটারে) বলেছেন, ‘আমরা একটি জরুরী স্থানান্তর পরিকল্পনা তৈরি করতে অংশীদারদের সাথে কাজ করছি এবং এই পরিকল্পনার সম্পূর্ণ সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।’
‘আমরা স্বাস্থ্য এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছি’ এ কথা উল্লেখ করে ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি অসহনীয় এবং অযৌক্তিক। যুদ্ধবিরতি চাই। এখনই চাই।’
ডাব্লিউএইচও বলেছে, ‘আগামী ২৪-৭২ ঘন্টার মধ্যে, নিরাপদ উত্তরণের গ্যারান্টি মুলতুবি থাকায়’ দক্ষিণ গাজার নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স এবং ইউরোপীয় গাজা হাসপাতালে রোগীদের পরিবহনে সহায়তা করার জন্য অতিরিক্ত মিশন পাঠাবে।
যদিও এটি জোর দিয়েছিল যে, সেই হাসপাতালগুলো ইতিমধ্যেই ক্ষমতার বাইরে কাজ করছে এবং নতুন রোগীর ‘আরও চাপে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য কর্মী এবং সংস্থানগুলো চাপের মধ্যে পড়বে।’

২০০৭ সাল থেকে গাজা শাসনকারী হামাস সরকার জানায়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অবিরাম বিমান ও স্থল অভিযানে ১২,৩০০ লোক নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক, যাদের মধ্যে ৫,০০০ এরও বেশি শিশু রয়েছে।’

 

সূত্রঃ ১৯ নভেম্বর, ২০২৩ (বাসস ডেস্ক)

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here