রাজবাড়ী জার্নালঃ রাজবাড়ীর দৌলিতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের ফেরিতে স্থাপিত ভাতের হোটেল গুলোতে খাওয়ানো হচ্ছে পচা , বাসি খাবার । আর ফেরিতে অবস্থিত দোকনগুলোতে বিভিন্ন পণ্যে বিক্রি হচ্ছে চওড়া দামে । এতে রীতিমত প্রতারিত হচ্ছেন যাত্রীরা।
বেশ কয়েকদিন ধরে অভিযোগ আসছিলো এ বিষয়টি নিয়ে । ২০শে ডিসেম্বর (বুধবার) রাত পৌনে দশটায় চোখে পরে ফেরিতে প্রতানার এমন দৃশ্য ।
বরকত নামের একটি রো রো ফেরিতে ভাতের হোটেল পরিচালনা করেন আব্দুল লতিফ মিয়া। দীর্ঘ সময় ধরে করে আসছেন এ ব্যাবসা। তার ভাতের হোটেলে ১ পিস ইলিশ মাছ ভাজা আর পেট চুক্তি ভাত বিক্রি করা হয় ১৬০ টাকায় । সাথে রয়েছে ব্রয়লার মুরগী সহ অন্যান্য মাছ । সরজমিনে দেখা যায় হোটের মাছ, মাংস সহ অন্যান্য তরকারি গুলো উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছে। আর মাছি ভন ভন করছে এই খাবারের উপর । আর সেইগুলো ই বিক্রি করা হচ্ছে দূর পাল্লার যাত্রীদের খাবার হিসেবে। ঢাকা থেকে আসা কুষ্টিয়াগামী আকবর আলী বলেন, জরুরী কাজে গ্রামের বাড়ীতে যাচ্ছি। এখন রাত দশটা বাজে খিদে লেগেছে ,তাই খেতে আসলাম ফেরির এ হোটেলে । ভাত পেট চুক্তি আর একটা ইলিশ মাছ ভাজা,ডাল খেয়েছি আর একটা মিনারেল ওয়াটার দিয়েছেন আধালিটার মোট ১৮০ টাকা নিয়েছে ,আর বকসিস দিতে হয়েছে ২০ টাকা । এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ সময় অনেক যাত্রীই খেতে আসেন কারন রাতে খুব খিদে পায়, আর এখানে ফেরিতে ছাড়া অন্য কোথাও খাবার যায়গা নেই। তবে এখানে খাবার গুলো উন্মুক্ত করে রেখেছে ,মাছি বসছে । খাবার গুলো ঢেকে রাখা উচিৎ ।
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির সুদিপ কুমার নামে এক বাস যাত্রীর সাথে কথা হয় খাবার টেবিলে। স্ত্রী ও এক মেয়ে নিয়ে খাবার খেয়েছেন এই ফেরির হোটেলে । ঢাকায় ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন । বাড়ীতে এসে এত রাতে শীতের মধ্যে রান্না করার চেয়ে এখানেই খেলাম । ডাল ভাত আর ইলিশ মাছ দিয়ে । এক প্রশ্নের জবাবে সুদিপের স্ত্রী প্রীতি বলেন, বাড়ীর সবাই আমরা এখানে আর এত রাতে বাসায় গিয়ে রান্নার সময় ই কই। এতক্ষন বাসে বসে ক্লান্ত হয়ে বাড়ীতে যাবার পর রান্নার চেয়ে এখন খুব খিদে লেগেছে তাই তিনজন এখানেই খেয়ে নিলাম। তবে খাবার গুলো ঠান্ডা ,শুধু ভাত টা হালকা গরম ছিলো। তিনি বলেন, রান্না করা তরকারীগুলো এখানে উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছে। এতে মশা ,মাছি পরতেই পারে। কি করবো, নিরুপায় হয়েই খেয়েছি ।
সাব্বির নামে এক যাত্রী বলেন, ঢাকা থেকে রাজবাড়ী যাবো। আধাঘন্টার মত লাগবে ফেরি পার হতে । তাই ফেরির দোতলায় এই দোকানে আসলাম। একটা প্যাকেট রুটি ,আর চা আর একটা বেনসন সিগারেট খেয়েছি মোট ৬০টাকা বিল নিয়েছে। ফেরিতে সব খাবারেরই দাম খুব বেশি বলেও জানান তিনি।
ভাতের হোটেল মালিক লতিফ জানান, এভাবেই তরকারি না রাখলে কাস্টমার দেখবে কিভবে আমার দোকানে কি কি বিক্রি করা হয়। আর অনেক টাকা অগ্রিম দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়, বেশি দামে না বিক্রি করলে আমাদের চলবে কিভাবে ?
এ বিষয় কথা হয় রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ডা: ইব্রাহিম টিটনের সাথে। তিনি জানান, খাবার উন্মুক্ত রাখলে মাছি বসে, এতে পেটের বিভিন্ন রোগ হতে পারে। ডায়রিয়া,বমি, পেট বেথা সহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে । আমাদের উচিত খাবার অবশ্যই ঢেকে রাখা।
এ বিষয়ে মুঠো ফোনে কথা হয় রাজবাড়ী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারি পরিচালক কাজী রকিবুল হাসানের সাথে । এ বিষয়ে তিনি জানান, ফেরিতে পণ্যের বেশি দাম নেওয়া হয়, এ দাম টা নির্ধারণ করে বিআইডব্লিউটিএ । আমরা মাঝে মাঝে দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য তদারকি কার্যক্রম করে থাকি। গত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে একটি অভিযান করেছিলাম। বর্তমান অভিযান পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। কারন নির্বাচনী তফসীল ঘোষনার পর অভিযানের জন্য আমাদের যে ফোর্স দরকার সে ফোর্স পাচ্ছিনা । ‘