Saturday, April 12, 2025

অধিক লাভের আশায় রাজবাড়ীতে চাষ হচ্ছে তামাক !

নিজস্ব প্রতিবেদক : অধিক লাভের আশায় রাজবাড়ীতে তামাক চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা।
তামাক চাষে বিভিন্ন টোব্যাকো কোম্পানির দেওয়া আর্থিক সহযোগিতায় তামাক চাষ করছেন কৃষকরা। তামাক চাষে প্রয়োজন হয়না নিজস্ব পূঁজি। বেশি মুনাফা হওয়ায় তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন কৃষকেরা। এতে করে একদিকে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, অন্যদিকে শঙ্কা রয়েছে খাদ্য ঘাটতির।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। রাজবাড়ী সদর উপজেলায় তামাকের চাষ হয়েছে ১২ হেক্টর জমিতে ,যা তুলনামূলক বেশি। এ ছাড়াও কালুখালী উপজেলায় ৮ হেক্টর, গোয়ালন্দ উপজেলায় ৩ হেক্টর, পাংশা ও বালিয়াকান্দিতে এক হেক্টর করে জমিতে তামাকের আবাদ হয়েছে। তবে বাস্তবে তামাক চাষের পরিমাণ এর কয়েক গুণ বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলার চরনারায়ণপুর, গোপীনাথ পুর, কাকিলাদাইড়, জৌকুড়াঘাট ও কালুখালী উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ফসলি জমিতে তামাকের আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি তামাকের আবাদ হয়েছে চরাঞ্চলে। বিগত বছর যেসব জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছিল সেসব জমিতে এ বছর তামাকের চাষ করা হয়েছে।

সদর উপজেলার কাকিলাদাইড় মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষেত থেকে তামাক পাতা তুলে এনে সেগুলো চিকন তারের সঙ্গে গাঁথছেন মখছেদ আলী ও তার সহধর্মিণী বিউটি বেগম।

বেশি মুনাফা হওয়ায় তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন কৃষকেরা। এতে করে একদিকে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, অন্যদিকে শঙ্কা রয়েছে খাদ্য ঘাটতির।
শুঁকানো হচ্ছে তামাক

বাড়ীর পাশেই তামাক খেত। সেখানে তামাক পাতায় কিছুটা পোকার আক্রমণ হয়েছে। সেই পোকা দমনের জন্য স্প্রে মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটাচ্ছেন এক কৃষক। মখছেদ আলীর বাড়ীর পাশেই বাগানে গাছ ও বাঁশের সঙ্গে তামাক পাতা শুকানোর জন্য ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁবু দিয়ে একটি ছোটঘর তৈরি করা হয়েছে। ঘরটির মধ্যেও তামাক পাতা রাখা। এছাড়া সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের বেনীনগর থেকে নদীরক্ষা বাঁধ দিয়ে কালুখালী যাওয়ার পথে রাস্তার দুই ধারে বিভিন্ন স্থানে তামাক পাতা রোদ্রে শুকানোর চিত্র দেখা গেছে। মকছেদ আলী বলেন, গত বছর তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে তামাকের চাষ করেছিলেন। অন্য জমিতে গম ও মসুর চাষ করেছিলেন। গম মসুরের তুলনায় তামাকে প্রায় চারগুণ লাভ হয়েছিল। এজন্য এ বছর তিনি তামাকের আবাদ বাড়িয়েছেন। প্রায় ১ একর জমিতে তামাক চাষ করেছেন। মকছেদ আলীর সহধর্মিণী বিউটি বেগম তামাক পাতা ঝুলানোর কাজে মকছেদ আলীকে সহযোগিতা করছেন। তিনি বলেন, তামাক পাতা ক্ষেত থেকে তুলে বাড়িতে এনে ছোট-বড় সবার সহযোগিতায় শুকানোর কাজ করা যায়। এতে অতিরিক্ত শ্রমিক খরচ হয় না।
এজন্য তাদের লাভ একটু বেশি হয়। কৃষক জনি সরদার বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ধান, গম অথবা মসুর আবাদ করলে সর্বোচ্চ ৮ থেক ১০ হাজার টাকা লাভ হয়। তামাক আমাদের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু অন্য ফসলের চেয়ে তামাক আবাদে লাভ অনেক বেশি হয়। বিঘাপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাভ থাকে। আবার টাকাগুলো একবারে পাওয়া যায়। এছাড়া আবাদ করার জন্য কোম্পানি থেকে অর্থ সহযোগিতা করা হয়। এতে আমাদের চাষ করার সময় চিন্তা করতে হয় না।”
চরনারায়ণপুর গ্রামের কৃষক আহম্মদ আলী বলেন, ‘আগে এই পদ্মার চরে পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ হতো। এখন সবাই তামাক চাষ করে। তামাকে লাভের পরিমাণ বেশি। আবাদের খরচও কম। তাই বেশির ভাগ কৃষক তামাক চাষ করছে। তামাক চাষে স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর দিক থাকলেও লাভের পরিমাণ বেশি। এজন্য কৃষক এখন তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।’

এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তামাক একটি মাদকদ্রব্য জাতীয় ফসল। এটি চাষে আইনগতভাবে কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা নেই। কৃষক তার ইচ্ছানুযায়ী ফসল চাষাবাদ করেন। আমরা কৃষকদের তামাকজাত ফসলের পরিবর্তে উচ্চমূল্যের ফসল চাষাবাদে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছি। তারপরও বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক সহযোগিতায় কৃষক এই ফসল উৎপাদন করছে। কোম্পানিগুলোর আর্থিক সহযোগিতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’

তামাকের অপকারিতা সম্পর্কে রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ডা: এস.এম মাসুদ বলেন, তামাক যে কোন ভাবেই আপনি খাবেন তা ক্ষতিকর। পানের সাথে জর্দা দিয়ে যদি চিবিয়ে খান তা ক্ষতিকর , সিগারেটে হিসেবেও তামাক খেলে ক্ষতিকর । আপনি যদি ক্যানসার হাঁসপাতালে যান,দেখবেন সেখানে আসা রোগীদের মধ্যে তামাক খাওয়ার ইতিহাস রয়েছে। স্বল্পপূজিতে চাষ করে অধিক মুনাফার আশায় কৃষকেরা তামাক চাষ করেন। তামাক এত বিষাক্ত যে তামাক খেতে কীটপতঙ্গও যায়না ,তারা বুঝে এটা ক্ষতিকর কিন্তু আমরা বুঝিনা । ”

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here