আজ বাংলাদেশি পরিসংখ্যানবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেনের মৃত্যু বার্ষিকী । কাজী মোতাহার হোসেন (৩০ জুলাই, ১৮৯৭ – ৯ অক্টোবর, ১৯৮১) ছিলেন একজন বাংলাদেশি পরিসংখ্যানবিদ ও সাহিত্যিক।রাজবাড়ী বাগমারা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।বাংলা একাডেমি পুরস্কার, স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া সহ নানান পুরস্কারে ভুষিত তাকে আমরা ভুলতে বসেছি।
অসাম্প্রদায়িক ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী এবং সেই আলোকে দেশের শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সুদৃঢ় ভিত গড়ে তোলার জন্য তিনি লেখনী পরিচালনা করেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষার সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর দাবীতে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তিনি ছিলেন তার একজন দৃঢ় পৃষ্ঠপোষক। বক্তৃতা, বিবৃতি ও প্রবন্ধাদি প্রকাশ করে এ-সব আন্দোলনে গতিদান করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ৬-দফাকে কেন্দ্র করে ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের যে আন্দোলন সংঘটিত হয় তারও একজন বলিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন কাজী মোতাহার।
কাজী মোতাহার হোসেন; ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ যাঁকে অভিহিত করেছেন ‘আপনভোলা নিরহংকার মানুষ, বিদ্বান ও গুণী’ হিসেবে। যাঁকে নিয়ে অন্নদাশঙ্কর রায় বলেছিলেন, “একজন উদারমনা মুসলমান ও সেই সঙ্গে দেশপ্রাণ বাঙালি এবং সকলের উপর একজন সৎ মানুষ।” তাঁর সাহিত্যের মূল্যায়ণ করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- তাঁর রয়েছে ‘স্বচ্ছ প্রাঞ্জল ভাষা’, ‘বলবার সাহস’ ও ‘চিন্তার স্বকীয়তা’। এই মানুষটিই বাংলাদেশে মুক্তচিন্তা ও প্রগতিশীলতা বিকাশের এক অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব।
১৯৬১ সালে প্রতিক্রিয়াশীল বুদ্ধিজীবীদের বিরোধিতার মুখে ঢাকায় রবীন্দ্র-জন্মশত বার্ষিকী পালনে সাহসী ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালি-সংস্কৃতি খর্ব করার জন্য রেডিও-টেলিভিশন থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রচার বন্ধের যে পদক্ষেপ নিয়েছিল তার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদজ্ঞাপন করেন।
তিনি বাংলা বানান ও লিপি সংস্কার কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৫৭ সালে মাওলানা ভাসানী আয়োজিত কাগমারী সাংস্কৃতিক সম্মেলনে সভাপতি হন। ব্যক্তিগত জীবনে কাজী নজরুল ইসলামের অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন। নজরুল তার মোতাহার নামকে আদর করে ‘মোতিহার’ ডাকতেন।