স্টাফ রিপোর্টারঃ নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য ভেঙে ফেলা হয় পুরাতন ব্রিজ। ব্রিজ নির্মাণের খবরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে ছিলেন রাজবাড়ী সদর, বালিয়াকান্দি ও ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। তবে নতুন ব্রিজের কাজ শুরু না করেই পালিয়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাই দেড় বছরে ব্রিজ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি আড়াই বছরেও। ভেঙে ফেলা ব্রিজের পাশ দিয়ে নির্মিত সরু কাঁচা রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে মানুষ ও ছোট যানবাহন। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। তবে বন্ধ রয়েছে বাস, ট্রাক, মিনিট্রাক, কাভার্ডভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স ও প্রাইভেটকার চলাচল। অবশ্য কাজটি বাতিল করে নতুন করে ব্রিজ নির্মাণে আবারও টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এলজিইডি।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রাজবাড়ী সদরের কোলারহাট-নিমতলা সড়কের কোলারহাট এলাকায় কুমার নদের ওপর নির্মিত পুরাতন গার্ডার ব্রিজ ভেঙে নতুন ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। বরিশালের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স রুপালী কনস্ট্রাকশন ব্রিজটি নির্মাণ কাজের টেন্ডার পায়। ২০২৩ সালে জুনে শেষ হবার কথা ছিল কাজ। ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রিজটির নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় এক কোটি ৮৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা। ২০২৩ সালে জুনে শেষ হবার কথা ছিল কাজ।
তবে কাজ শেষ করাতো দূরের কথা, শুরুই করেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ভেঙে ফেলা ব্রিজের পাশ দিয়ে একটি সরু কাঁচা রাস্তা তৈরির পর কাজ ফেলে পালিয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। সরু এ রাস্তায় গাড়ি উল্টে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ব্রিজ না থাকার ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কোলারহাট এলাকায় কুমার নদের ওপর নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য পুরাতন ব্রিজটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে সেখানে ব্রিজ নির্মাণ কাজ বন্ধ, তেমন কোনো সাইনবোর্ড দেয়া নেই। নেই কোনো ব্যারিকেডও। অপরিচিত কেউ বিষয়টি বুঝতে না পারায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। অনেক যানবাহন এই রাস্তা দিয়ে এসে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বিকল্প সড়ক ব্যবহারে ভোগান্তি বেড়েছে।
সেখানকার স্থানীয় ও বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, পুরাতন ব্রিজ ভাঙার পর থেকে দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। ব্রিজের দুই পাড়ে কোলারহাট বাজার। ব্রিজের পূর্বপাশে শতাধিক এবং পশ্চিম পাশে ৫ শতাধিক দোকান রয়েছে। ব্রিজের কাজ বন্ধ থাকায় কোলারহাট বাজারের একপাশে প্রায় অর্ধশত দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পাশের সরু রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। অনেক মানুষ গর্তেও পড়ে যায়।
আব্দুল গফুর নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, কোলারহাটটি পেঁয়াজের জন্য খুব বিখ্যাত। পেঁয়াজের মৌসুমে এ হাটে প্রচুর পেঁয়াজ ওঠে। তবে ব্রিজ না থাকায় বড় ট্রাক হাটে ঢুকতে না পারছেনা। যে কারণে এ হাটে পেঁয়াজের ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। ক্ষতি হচ্ছে অন্য ব্যবসায়ীদেরও।
তৈয়বুজ্জামান নামে এক যুবক বলেন, ব্রিজ না থাকায় গর্ভবতী নারী বা অন্য রোগীদের হাসপাতালে নেয়া খুবই কষ্ট হয়। অনেক পথ ঘুরে যেতে হয়। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে এই সরু কাঁচা রাস্তায় হেটেও চলা যায় না। আমাদের দাবি দ্রুত ব্রিজটি নির্মাণের উদ্যোগ নিক কর্তৃপক্ষ।
মাহফুজ আহমেদ নামে এক যুবক বলেন, রাজবাড়ী সদর, বালিয়াকান্দি ও ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। এছাড়া মহাসড়কে কোন সমস্যা হলে বেনাপোলের গাড়িগুলো বিকল্প সড়ক হিসেবে এই সড়ক ব্যবহার করে। এখানে ব্রিজ না থাকায় মানুষের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে।
এলজিইডির রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী জানান, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার অজুহাতে কাজ ফেলে পালিয়ে যায় ঠিকাদার। বিধি অনুযায়ী ঠিকাদারকে জরিমানার পাশাপাশি কাজটি বাতিল করে নতুন করে ব্রিজ নির্মাণে আবারও টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।’