লাহোর : মেইক শিপ্ট ওপেনার মেহেদি হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্তর জোড়া সেঞ্চুরির পর বোলারদের নৈপুন্যে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের আশা বাঁচিয়ে রাখলো বাংলাদেশ।
আজ ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ ৮৯ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে আফগানিস্তানকে। এই জয়ে ২ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে থাকলো বাংলাদেশ। ১ খেলায় ২ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে থেকে টেবিলের শীর্ষে আছে শ্রীলংকা। প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার কাছে ৫ উইকেটে হেরেছিলো বাংলাদেশ। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর গ্রুপের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে শ্রীলংকা ও আফগানিস্তান। ঐ ম্যাচের ফলাফলের পর চুড়ান্ত হবে টুর্নামেন্টের সুপার ফোর।
পাকিস্তানের লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব। শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের একাদশ থেকে তিনটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে ওপেনার হিসেবে অভিষেক হওয়া তানজিদ হাসান তামিম বাদ পড়ায় মেইক শিপ্ট ওপেনার হিসেবে শুরুতে নামেন মিরাজ। তার সাথে ছিলেন মোহাম্মদ নাইম।
মিরাজ-নাইম উদ্বোধনী জুটিতে ১০ ওভারে ৬০ রান পায় বাংলাদেশ। ওভারের শেষ বলে স্পিনার মুজিব উর রহমানের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৫টি চারে ৩২ বলে ২৮ রান করেন নাইম।
নাইমের বিদায়ে ব্যাটিংয়ে প্রমোশন পেয়ে তিন নম্বরে নামেন ইনফর্ম তাওহিদ হৃদয়। রানের খাতা খোলার আগেই পেসার গুলবাদিন নাইবের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন হৃদয়।
৪ বলের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে হঠাৎ চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে দলকে চাপমুক্ত করতে আফগানিস্তানের বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন মিরাজ ও চার নম্বরে নামা শান্ত। ২০তম ওভারে বাংলাদেশের রান ১শ পার করেন তারা। ২৪তম ওভারে ওয়ানডেতে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ৬৫ বল খেলা মিরাজ। ৩১তম ওভারে ছক্কা দিয়ে ওয়ানডেতে পঞ্চম অর্ধশতক করেন শান্ত। এজন্য ৫৭ বল খেলেন তিনি।
শান্তর ১টি ছক্কা ও ২টি চারে পেসার ফজলহক ফারুকির করা ৩৩তম ওভারে ১৭ রান পায় বাংলাদেশ। ৩৫তম ওভারে দলীয় রান ২শতে পৌঁছায় টাইগাররা।
৪১তম ওভারে ৭৯ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান মিরাজ। ১১৫ বলে শতক পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মত ওপেনার হিসেবে নামা মিরাজ। সেঞ্চুরির পর আঙুলে ক্র্যাম্প হবার কারনে ৪৩তম ওভারে আহত অবসর নেন ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১১৯ বলে ১১২ রান করা মিরাজ। তৃতীয় উইকেটে শান্তর সাথে ১৯০ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৯৪ রান তুলেন মিরাজ। সব মিলিয়ে ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে এই জুটির রান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পক্ষে যেকোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি। এর আগেরটি ২০১০ সালে ডাম্বুলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬০ রান করেছিলেন ইমরুল কায়েস ও জুনায়েদ সিদ্দিক।
মিরাজ ফেরার ওভারে ২৯ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১০১ বলে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূর্ন করেন শান্ত। পঞ্চমবারের মত বাংলাদেশের পক্ষে একই ইনিংসে দুই ব্যাটার করলেন। অবশ্য সেঞ্চুরির পরই রান আউট হওয়া শান্ত ৯টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০৫ বলে ১০৪ রান করেন।
শান্তর পর রান আউট হন মুশফিকও। ১টি করে চার-ছক্কায় ১৫ বলে ২৫ রান করেন মুশফিক। মুশফিকের বিদায়ে উইকেটে আসেন অভিষিক্ত শামীম হোসেন। ওয়ানডেতে নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই ডিপ ফাইন লেগ দিয়ে ছক্কা মারেন শামীম। বোলার গুলবাদিনকে ছক্কা মেরে দলের রান ৩শ রান পার করেন শামীম।
৪৯তম ওভারে শামীম রান আউট হলেও সাকিবের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৩৪ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। শেষ ১০ ওভারে ১০৩ রান পায় টাইগাররা। ওয়ানডেতে এটি তৃতীয় ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় রান বাংলাদেশের। পাশাপাশি এশিয়া কাপের মঞ্চে এটিই সর্বোচ্চ রান টাইগারদের।
৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৮ বলে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন সাকিব। শামীম করেন ৬ বলে ১১ রান। আফিফ হোসেন অপরাজিত ৪ রান করেন। আফগানিস্তানের মুজিব ও গুলবাদিন ১টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য আফগানিস্তানের সামনে টার্গেট ৩৩৫ রান। পরিসংখ্যান বলছে, নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে কখনও ৩শ বা তার বেশি রান তাড়া করে ম্যাচ জিততে পারেনি আফগানরা। ইতিহাসকে ভুল প্রমানের লক্ষে খেলতে নামা আফগানিস্তান দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় । পেসার শরিফুল ইসলামের বলে লেগ বিফোর আউট হন ১ রান করা ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ।
শুরুর ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় উইকেটে ৯৭ বলে ৭৮ রান তুলেন আরেক ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান ও রহমত শাহ। এই জুটি ভেঙ্গে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন তাসকিন। ৩৩ রান করা রহমতকে সরাসরি বোল্ড আউট করেন তাসকিন।
তৃতীয় উইকেটে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন ইব্রাহিম ও অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদি। হাফ-সেঞ্চুরি জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন তারা। হাসানের বলে মুশফিকের দুর্দান্ত ক্যাচ ফিরেন ওয়ানডেতে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি করা ইব্রাহিম। ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭৪ বলে ৭৫ রান করেন তিনি।
এরপর নাজিবুল্লাহ জাদরানকে নিয়ে মারমুখী ব্যাটিং শুরু করেন শাহিদি। উইকেট সেট হয়ে জুটিতে দ্রুত হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন তারা। এই জুটি ভাঙ্গতে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে বোলার ব্যবহার করেন দলপতি সাকিব। অবশেষে ৩৭তম ওভারের প্রথম বলে নাজিবুল্লাহকে (১৭) বোল্ড করে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরার পথ দেখান মিরাজ। ৫২ বলে ৬২ রান যোগ করেন শাহিদি ও নাজিবুল্লাহ।
মিরাজের আঘাতের পর আফগানিস্তানকে লড়াইয়ে থেকে ছিটকে দেন শরিফুল ও তাসকিন। ১৮ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট তুলে নেন তারা। শাহিদিকে ৫১ ও গুলবাদিনকে ১৫ শিকার করেন শরিফুল। ৩ রানে তাসকিনের শিকার হন নবি। ২১৪ রানে সপ্তম উইকেট হারায় আফগানিস্তান।
শেষ পর্যন্ত ৪৪ দশমিক ৩ ওভারে ২৪৫ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান। বাংলাদেশের তাসকিন ৪৪ রানে ৪ উইকেট নেন। এছাড়া শরিফুল ৩টি, হাসান ও মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড : (টস-বাংলাদেশ)
বাংলাদেশ ইনিংস :
নাইম বোল্ড মুজিব ২৮
মিরাজ আহত অবসর ১১২
হৃদয় ক ইব্রাহিম ব নাইব ০
নাজমুল রান আউট ১০৪
মুশফিক রান আউট ২৫
সাকিব অপরাজিত ৩২
শামীম রান আউট ১১
আফিফ অপরাজিত ৪
অতিরিক্ত (লে বা-৬, ও-১২) ১৮
মোট (৫ উইকেট, ৫০ ওভার) ৩৩৪
উইকেট পতন : ১/৬০ (নাইম), ২/৬৩ (হৃদয়), ২/২৫৭ (মিরাজ, আহত অবসর), ৩/২৭৮ (শান্ত), ৪/২৯৪ (মুশফিক), ৫/৩২৪ (শামীম)।
আফগানিস্তান বোলিং :
ফারুকি : ৬-১-৫৩-০ (ও-১),
মুজিব : ১০-০-৬২-১ (ও-২),
গুলবাদিন : ৮-০-৫৮-১,
জানাত : ৬-০-৩৯-০ (ও-১),
নবি : ১০-০-৫০-০,
রশিদ : ১০-১-৬৬-০।
আফগানিস্তান ইনিংস :
গুরবাজ এলবিডব্লু ব শরিফুল ১
জাদরান ক মুশফিক ব হাসান ৭৫
রহমত বোল্ড তাসকিন ৩৩
শাহিদি ক হাসান ব শরিফুল ৫১
নাজিবুল্লাহ বোল্ড মিরাজ ১৭
নবি ক আফিফ ব তাসকিন ৩
গুলবাদিন বোল্ড শরিফুল ১৫
করিম রান আউট ১
রশিদ ক সাকিব ব তাসকিন ২৪
মুজিব হিট উইকেট ব তাসকিন ৪
ফারুকি অপরাজিত ১
অতিরিক্ত (লে বা-৩, ও-১৭) ২০
মোট (অলআউট, ৪৪.৩ ওভার) ২৪৫
উইকেট পতন : ১/১ (গুরবাজ), ২/৭৯ (রহমত), ৩/১৩১ (ইব্রাহিম), ৪/১৯৩ (নাজিবুল্লাহ), ৫/১৯৬ (শাহিদি), ৬/২১২ (গুলবাদিন), ৭/২১৪ (নবি), ৮/২১২ (করিম), ৯/২৪৪ (মুজিব), ১-১০/২৪৫ (রশিদ)।
বাংলাদেশ বোলিং :
তাসকিন : ৮.৩-০-৪৪-৪ (ও-৩),
শরিফুল : ৯-১-৩৬-৩ (ও-৫),
হাসান : ৯-১-৬১-১ (ও-১),
সাকিব : ৮-০-৪৪-০ (ও-১),
আফিফ : ১-০-৬-০,
মিরাজ : ৮-০-৪১-১ (ও-২),
শামীম : ১-০-১০-০।
ফল : বাংলাদেশ ৮৯ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: মেহেদি হাসান মিরাজ(বাংলাদেশ)
সূত্রঃ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ (বাসস)