আসমানীকে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,রহিম উদ্দিনের ছোট্র বাড়ী রসূল পুরে যাও, বাড়ী তো নয় পাখির বাসা ভিন্না পাতার ছানী,একটু খানি বৃষ্টি হলে গড়িয়ে পরে পানি। একটু খানি হাওয়া এলে ঘর নরবর করে তারি তলে আসমানিরা থাকে বছর ভরে। এটি পল্লী কবি জসিমদ্দিনের কবিতার আসমানী নয়। আর এ আসমানিকে দেখতে রহিমদ্দিনের রসুল পুরেও যেতে হবে না। আমরা আবিষ্কার করেছি ভিন্ন এক আসমানির মানবেতর জীবনযাপন।
এ আসমানীর বয়স আনুমানিক দশ বছর । জন্মের পর পিতা মারা গেছে আর পরে হারিয়ে গেছে তার মা। থাকে পঁচাত্তর বছর বয়সী তার দাদী নুরজাহান ওরফে নুপী পাগলীর কাছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর স্কুল সংলগ্ন রাস্তার পাশে অন্যের তৈরি করে দেওয়া একটি টিনের চালের তৈরী খোপের মত ঘরে থাকে আসমানী ও তার দাদী নুরজাহান ওরফে নুপী পাগলী। ঘরের মধ্যে ইদুরের গর্ত আর একপাশে কিছু পাতিল ও প্লাষ্টিকের পাত্র আর অন্য পাশে একটি চৌকিতে কোনোমত রাত্রিযাপন করে আসমানী ও তার দাদী। আসমানীর দাদী ভিক্ষা করতে চলে গেলে সে তার একমাত্র পোষ প্রানী কুকুর ছানার সাথে সময় কাটায় ।আদর করে সে কুকুর ছানার নাম দিয়েছি ডগি।
সমাজের অন্যান্য পরিবারের মেয়েরা এ বয়সে যেখানে স্কুলে যায় আর স্বপ্ন থাকে বড় হয়ে কিছু করার আর সে খানে আসমানীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার অন্ধকারে নিমজ্জিত।
আসমানী দাদী নুপী পাগলী বৃদ্ধ বয়সে ভিক্ষাবৃত্তি করে চাল ডাল যোগাড় করে রাস্তার পাশে একটি টিনের চালে ঘেরা ঘরের মধ্যে বসবাস করে। ভিক্ষা করে চলে আসমানীর ও তার দাদীর জীবন। কোন যায়গা জমি না থাকায় রাস্তার পাশে জরাজীর্ণ পরিবেশে কুড়ে ঘরে থাকে দুটি প্রান। এ ডগিকে নিয়ে তার দাদীর সাথেই একটি বিছানায় রাত কাটে আসমানীর আর দিন পার হচ্ছে। তবে আসমানী যখন বড় হবে কে হবে তার অভিভাবক যখম মারা যাবে তার একমাত্র বৃদ্ধ দাদী নুপী পাগলী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জীর্ণশীর্ণ দেহে এক টুকরা কাপড় গায়ে শীতে কাপছে সে। ঘরের মধ্যে নেই কোন আলো, একটা চেরাগ নিভু নিভু করে জ্বলছে। গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা শেষে আসে আসমানীর দাদী নুপী পাগলী। পলিথিনের ব্যাগ থেকে কিছু চাল আর কিছু আলু বেড় করে দেয়। শরীরে শীতের কাঁপুনি। কথা হয় আসমানীর দাদী নুপী পাগলীর সাথে। সে জানায়, কোন মতে ভিক্ষা করে কিছু চাল ডাল যোগাড় করে চলে তার সংসার। গ্রামে ভিক্ষা করে চাল যোগাড় করে সে আর কাঁচা বাজারে দোকানিদের পানি এনে দিয়ে তাদের কাছ থেকে কিছু কাচা তরকারি নিয়ে রাস্তার পাশে তার বঘরের কোনে পাতিলে কোন মত করে চাল ডাল জ্বালিয়ে এভাবেই ক্ষুধা নিবারণ করে সে ও তার আসমানী। এলাকার বড় বড় বৃত্তশালীরা কেউ এগিয়ে আসেনি নুপী পাগলীর পাশে দাঁড়াতে। কোন সরকারী সাহায্যও পৌছায় নি তার কাছে।
এই পথ ধরে দীর্ঘ এগার বছর ভ্যান চালান জসিম শেখ।তিনি জানান,আমি এ রোডের পাশে তাদের দীর্গদিন ধরে দেখছি এভাবেই চলছে তাদের জীবন।এর আগে শুধুমাত্র পলিথিনের বেড়া দিয়ে থাকতো। এখন কারা যেন টিন দিয়ে এ ঘরটি করে দিয়েছে।এভাবেই চলছে তাদের জীবন। সরকার থেকে যদি একটা ঘর তারা পেতো তাহলে তাদের জন্য খুব উপকার হতো।
মোঃ ইকবাল হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী জানান, আমি যখন অনার্স থার্ড ইয়ারে পরি মুসলিম মিশনের এক শিক্ষক এর সহযোগীতায় এ ঘরটি আপাতত করে দেওয়া হয়। আমরাও মাঝে মাঝে কিছু চাল দাল দিয়ে এদের সহযোগীতা করি। কিন্তু তা অপ্রতুল। সমাজের অনেক বিত্তশালী রয়েছে যারা এগয়ে আসলে এই পরিবারটির পাশে দাড়ালে তাদের উপকার হতো। এই প্রচণ্ড শীতে কোন গরম কাপড় নেই তাদের। আমরা চেয়েছিলাম এবং কথা দিয়েছিলাম কিছু গরম কাপড় দেব কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। আমরা ছাত্র মানুষ আমাদের কাছে তেমন টাকা পয়সাও থাকে না। তাই আমাদের দাবী যদি কোন সরকারি সহযোগিতা এ আসমানীদের জন্য দেওয়া হতো ,তাহলে তারা কোন মত রাতে নিরাপদ ভাবে ঘুমাতে পারতো।