গ্রামগুলি পদ্মার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। চারদিকে বর্ষার পানি থৈথৈ করছে। দেখলে মনে হবে এ যেন জন বিচ্ছিন্ন কোন দ্বীপ। যেটা শহর থেকে অনেক দুরে অবস্থান করছে। এ গ্রামের মানুষের অনেক আধুনিক সুযোগ সুবিধা থেকে বিচ্ছিন্ন। একবিংশ শতাব্দীর এই ডিজিটাল যুগে এসেও মানুষ ইচ্ছে করলেই সহজে ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না। ছেলেমেয়েরা চাইলেই স্কুল কলেজে আসতে পারে না। বর্ষায় প্রায় প্রতি বাড়িতেই পানি এখন। বাইরের জগতে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা।
গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন তিনটি গ্রাম নাসির সরদারের পাড়া, নুরু মন্ডলের পাড়া ও এক নং বেপারি। এই তিন গ্রামের প্রায় সারে তিন হাজার মানুষের চলাচলের জন্য একটি মাত্র বাঁশের সেতু সেটাও এখন পানির নিচে।
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৩টি গ্রামের মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা বাঁশের সেতু। বর্ষা এলে দুর্ভোগ বাড়ে। স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা চরম ভোগান্তিতে পড়ে। ঝড়বৃষ্টিতে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার বিপজ্জনক হয়ে পড়ে।
সেতু না থাকায় যাতায়াত, উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে আনা-নেয়া, অন্যান্য মালামাল বহনে ভোগান্তি ও অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে। শুধু বাঁশের একটি সাঁকো অত্র অঞ্চলের মানুষের একমাত্র ভরসা।
জানাযায় এই রাস্তা নির্মানের পর থেকেই এলাকা বাসির দাবি ছিল সেতু করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেতু না থাকায় প্রথমে গ্রাম বাসীরা নিজেদের উদ্যোগে বাঁশের সেতু নির্মান করেন পরবর্তীতে সাবেক পান্নু মেম্বার তার ব্যাক্তিগত উদ্যোগে তিন বছর আগে সেতুটি করে দেন। গত বছর তিনি মার যান। এরপর এই সেতু আর ঠিক করা হয় নি। এটা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে।
এ ব্যাপারে কথা হয় নাসির সরদারের পাড়ার কলেজ ছাত্র সাগর শেখের সাথে তিনি বলেন এখানে কোন হাইস্কুল বা কলেজ নাই ছাত্র ছাত্রীর পড়াশোনার জন্য দৌলতদিয়া মডেল স্কুল বা গোয়ালন্দ যেতে হয়। এই অবস্থায় কিভাবে তারা স্কুল কলেজে যাবে আর পড়াশোনা করবে। নদীতে পার হওয়া ঝুঁকিপূর্ন তার উপর সব সময় সময়মত নৌকা পাওয়া যায় না। বিশেষ করে ফিরে আসার সময়।
নুরু মন্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হাফিজা বলেন এই গ্রাম শহর থেকে বিচ্ছিন্ন। চিকিৎসা বলতে গ্রাম্য ক্লিনিক হাসপাতাল আছে। রাতে যদি কারো সন্তান হয় নৌকায় নদী পার হয়ে তারপর তাকে গোয়ালন্দ হাসপাতালে নিতে হয়। অনেক সময় মারাত্মক আহত কাউকে সময়মত নৌকা জোগাড় করতে না পারার কারনে মারা যায়।
গোয়ালন্দ উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ ওই স্থানে আজও সেতু নির্মিত না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। ফলে কৃষিসমৃদ্ধ এই এলাকায় আজও তেমন আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। এখানে একটি সেতু নির্মিত হলে শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে।
এলাকাবাসী জানান, স্বল্প সময়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুল, সরকারি গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজ, রাবেয়া ইদ্রিস মহিলা কলেজ, গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঐতিহ্যবাহী গোয়ালন্দ বাজার ও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যাতায়াতে এলাকার লোকজন এ পথে চলাচল করে থাকে। এ ছাড়া কৃষিপণ্য আনা-নেয়াও করে থাকে।
সাবেক বিশ্বনাথ পাড়ার বাসিন্দা গোয়ালন্দ মুক্তি মহিলা সমিতির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর আতাউর রহমান মন্জু বলেন এখানে কুশাহাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। তাই অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রী কে কে এস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বড় সিংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে আসে। তাছাড়া উচ্চ বিদ্যালয় কলেজ এগুলো সহ চিকিৎসার সমস্যা রয়েছে।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব রহমান মন্ডল বলেন, গ্রাম বাসীর একটি সেতুর জন্য দুর্ভোগের সীমা নেই। ইতিমধ্যে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। তারা জেলা সদরে বিষয়টি পাঠিয়েছেন। এটা পাশ হলেই এলাকার মানুষের কষ্ট নিরসন হবে। সম্প্রতি সরকার নদী ভাঙনের জন্য যে মহা প্রকল্প গ্রহণ করছে সেটা হলে এই এলাকার মানুষ বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতো। তবে আমি আমার সাধ্যমত ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এখানে সাকো সহ রাস্তা মেরামতের কাজ করে থাকি। তবে বর্ষা মৌসুমে সেটা ভেঙে নিয়ে যায়।