মানুষ হতে পারিনি
তাহমিনা মুন্নী
বোধের বিপরীতে
নির্বুদ্ধিতার চিরায়ত
বিচরণে জীবনের
ভুলচূকের গন্ডিতে মানুষ
হওয়ার তীব্র বাসনায়
অনিরুদ্ধ পথচলা।
অথচ মা বলতেন বড় হয়ে ডাক্তার হবিই
বাবার স্বপ্ন প্রকৌশলী।
শিক্ষক বলেছিলেন অসম্ভব মেধার অধিকারী
ইচ্ছে হলেই তুমি মস্ত বড় অফিসার হতে পারবে।।
প্রকৃতির একান্ত নিবিড় সাহচার্যে ওই মুক্ত পাখির ডানা মেলা দেখে!!!!!! ”
আমার ইচ্ছেগুলো উদার আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলাম”
বোবা পাখি একাত্মতা ঘোষণা করলেও ইচ্ছে গুলো বিলীন হয়ে গেল ওই বিশাল আকাসসমে।
এখন আমি মস্ত বড় হয়েছি!!
নাম যশ খ্যাতি প্রভাব প্রতিপত্তি।
সব টাই নখ দর্পণে।
কর্মচাঞ্চল্য জীবনের অনেক অনিয়ম গুলোও আজ ক্ষমতা বলে নিয়ম করে নিতে সক্ষম।
যোগ্যতা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে।
সময় চলে তার নিজস্ব নিয়মে
বয়সের ভারে আজ নুয়ে পড়েছি।
ক্ষয়িষ্ণু সময়ের সাথে সাথে কমে গেছে কর্ম ক্ষমতা।
তেজোময় দীপ্ত কণ্ঠে অফিসের অন্যান্যদের প্রতি রুঢ আচরণ এখন আমাকে পীড়া দেয়।
যতটা পেয়েছি হিসাবের খাতা মিলিয়ে দেখি কিছুই দিতে পারি নি।
অথচ কতটা দেবার ছিল।
প্রাপ্তির যোগসাজশে নিজেকে মেলানোর সুযোগ টা প্রবঞ্চিত করেছে ব্যবহারিক রুঢতা।
সব হারিয়ে আজ বোধের জায়গাটা সঞ্জীবিত।
অথচ ঢেড় বুঝে গেছি
সব পেলেও সত্যিকারের মানুষ হতে পারি নি।
তাই তো
প্রকৃতির অমোঘ গন্ডিতে ওই নীলাভ্র শুভ্রতায় একবার নিজেকে মেলে ধরি
কালের বিবর্তনে ক্ষয়িষ্ণু এই আমাকে চিনতে বড় কষ্ট হয়।
বাবার টাকা আর মেধার বিকাশ ঘটালে অনায়াসে একটা বড় চেয়ারের অধিকারী হওয়া যায়।
কিন্তু সত্যিকারের মানুষ হতে হলে নির্মোহ হতে হয়!
প্রতিকূলতার গন্ডি পেরিয়ে নিজেকে অভিযোজিত করতে হয় সকল পরিবেশে।
আচরণে নম্রতা একজন সত্যিকার মানুষের প্রথমগুন।
আজ বয়সের ভারে সবকিছুই লীন।কিন্তু মনের সেই মানুষ হওয়ার প্রবল ইচ্ছে টা আরেকবার জেগে উঠল।
কিন্তু সময়ের চলমান ঘড়ি থামাবার অবকাশ কোথায়!
তাই হৃদয়ের পশমি সুতোয় বোনা মানুষ হবার প্রবল আকুতি নিয়েই স্থবির হয়ে গেছি।
শুধু বোধের স্থানটা এখনো সচল রয়েছে ;
কিন্তু মানুষ হতে পারিনি।।