স্টাফ রিপোর্টার: গত ১৭ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার সময় কালুখালী উপজেলার পাতুরিয়া গ্রামের ফজলু মন্ডলের পাটক্ষেত থেকে একটি মরদেহের মাথার খুলি, চুল ও হাড়সহ দেহের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। পাশে পড়ে থাকা ভ্যানেটি ব্যাগ, জুতা, জামা ও ওড়না দেখে পাতুরিয়া গ্রামের আবুল কাশেম বেপারী জান্নাতুল নেছা (১৯) কে নিজের ছোট মেয়ে বলে শনাক্ত করেন। ডিএনএ পরীক্ষাও করা হয় ।
জান্নাতুল নেছা গত ৫ জুলাই দিবাগত রাতে বাড়ির কাউকে কিছু না বলে নিখোঁজ হন। মরদেহ শনাক্ত হওয়ায় এ বিষয়ে কালুখালী থানায় গত ১৮ জুলাই মামলা করা হয়। কালুখালি থানার মামলা নং-০৮/২৩ ।
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ আগস্ট কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের বিকয়া গ্রামের মো. মাহফুজ মন্ডলকে (২১) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এ ঘটনায় জড়িত পাংশা উপজেলার বিকয়া গ্রামের রবিউল খান (২১), হাকিম মন্ডল (২০) ও আশুরহাট গ্রামের হাসিব খানকে (২০) গ্রেপ্তার গতকাল গ্রেফতার করা হয়। তারা সবাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
রাজবাড়ী পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ আজ বেলা ১২ টায় পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে এক সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ সুপার বলেন, জান্নাতুল নেছা আবুল কাশেম বেপারীর ৭জন মেয়ের মধ্যে ছোট। ৪ বছর আগে বালিয়াকান্দি উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের জসিম বেপারীর ছেলে কুদ্দুস বেপারীর সঙ্গে বিয়ে হয় জান্নাতুল নেছার। বিয়ের ৩ বছর পর তাদের বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস করতেন তিনি। প্রায় ৬ মাস গার্মেন্টসে চাকরি করেছেন তিনি।
গত ৩ জুলাই মাহফুজ মন্ডলের সঙ্গে জান্নাতুল নেছার ফেসবুকে পরিচয় হয়। পরে ম্যাসেঞ্জারে কথোপকথনের একপর্যায়ে তাদের প্রেমের সম্পর্ক হয়। জান্নাতুল নেছাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ি থেকে বের করে এনে ধর্ষণ করার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাহফুজ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করার জন্য প্ররোচিত করতে থাকেন। একপর্যায়ে জান্নাতুল বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হন।
গত ৫ জুলাই রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ি থেকে সামনে রাস্তায় আসেন জান্নাতুল। সেখানে থাকা মাহফুজকে দেখে তার পছন্দ হয়নি। কারণ তিনি ছিলেন প্রতিবন্ধী। তখন সেখানে উপস্থিত থাকা অপর অভিযুক্ত রবিউল জানান, ম্যাসেঞ্জারে তিনি নিজে কথা বলেছেন। বাকি সবাই তার বন্ধু এবং তাদের বিয়েতে সহায়তা করবেন। পরে জান্নাতুলকে পাটক্ষেতে নিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী ধর্ষণ করেন। তখন জান্নাতুল তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার কথা বললে তারা শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ফেলে যান।
তিনি আরোও বলেন, হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা একটু কঠিন ছিলো। কারন এটা ছিলো ক্লুলেস। নিহত জান্নাতুলের ফেসবুক আইডির মেসেঞ্জারের স্টোরি প্রযুক্তির সহায়তায় বের করে আমরা এ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি। ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাবহারে সবাইকে সচেতন হওয়া দরকার বলেও জানান তিনি ।’
‘সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. সালাহউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) রেজাউল করিম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) সুমন কুমার সাহা, কালুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রাণ বন্ধু চন্দ্র, ডিআইও ওয়ান বিপ্লব কুমার ঘোষসহ জেলায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ ।