Thursday, December 12, 2024

ক্ষতিগ্রস্ত ৪ হাজার পেঁয়াজ চাষীদের পাশে দাড়ালেন ডিসি

স্টার রিপোর্টারঃ এবার ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় চার হাজার প্রান্তিক পেঁয়াজ চাষীদের পাশে দাড়ালেন রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।

দুর্দিনের ত্রাণ কর্তা হিসেবে জেলার কৃষক বান্ধব এই অভিভাবককে পাশে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ছেন প্রায় চার হাজার প্রান্তিক পেঁয়াজ চাষী । হতাশার সাত সাগর পেরিয়ে তাদের চোখে মুখে আবার জেগেছে নতুন স্বপ্ন। পেঁয়াজ চাষ করে সেই পেঁয়াজ বিক্রি করে দাদনের টাকা না দিতে পারার দুশ্চিন্তাও তাঁদের মাঝে আর নেই এখন।

জেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির প্রতিবেদন সুত্রে জানা গেছে যে, রাজবাড়ী বিভিন্ন উপজেলার প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৩,৭২৫ জন প্রান্তিক কৃষক। তাতে এ বছর পেঁয়াজ চাষ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন তাঁরা।

রাজবাড়ী জেলা দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনে ৩য়। এই বছর পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৩,০৪৪০ হেক্টর এবং উৎপাদনে লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৪২৭,৮৫১ মেট্রিক ট্রন পেঁয়াজ।

গত ১ ডিসেম্বর গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক পেঁয়াজ বীজের অংকুরোদগম না হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। তার পরের দিনই ২ ডিসেম্বর জেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সভা আহবান করেন তিনি। সভায় উপস্থিত সদস্যগন পেঁয়াজ বীজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলে দ্রুত সমাধান কি হতে পারে সেটাও জানতে চান জেলা প্রশাসক।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে লালতীর কোম্পানির তাহেরপুরি বীজ স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে। সভায় আরো জানানো হয় যে এই বীজের গুনগত মান ভালো।

এদিকে পেঁয়াজের বীজ অংকুরোদগম না হওয়ার বিষয়েটি জেলা প্রশাসক বিএডিসির চেয়ারম্যানকে জানালে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু জেলা প্রশাসক বিএডিসির চেয়ারম্যানকে জানান যে, দ্রুত সমাধান না করলে সময় পার হয়ে গেলে জেলায় এই বছর পেঁয়াজ উৎপাদন করা সম্ভব হবেনা।
পরবর্তিতে জেলা প্রশাসক কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়কে বিষয়টি জানালে তিনি জেলা প্রাসশক দ্রুত সমাধানের আশ্বস্ত করেন এবং ক্ষতিগ্রস্থ বীজতলা পুনরায় তৈরি করতে বলেন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের নির্দেশে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক প্রান্তিক পেঁয়াজ চাষিদের বীজতলা পুনরায় তৈরি করতে অনুরোধ করেন স্থানীয় কৃষি কর্মীদের মাধ্যমে । কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব জেলা প্রশাসককে এই বিষয়ে তাঁকে লিখিত চিঠি দিয়ে বিস্তারিত জানাতেও নির্দেশ দেন।

এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আমি ৩ রা ডিসেম্বর একটি ৫ সদস্যের টিম গঠন করি। কমিটির প্রতিবেদনে নিয়ে সেই দিনই সচিব স্যার বরাবর এ বিষয়ে পত্র প্রেরণ করি।

৩ রা ডিসেম্বর প্রেরিত পত্রের প্রেক্ষিতে সচিব এবং উপদেষ্টা মহোদয় ৪ তারিখ বিকেলে রাজবাড়ী, ফরিদপুর এবং পাবনা জেলা প্রশাসনের সাথে জুরুরী ভার্চুয়াল সভা করেন।

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে অভিযোগ শুনা মাত্রই জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা নিজে উদ্যোগী হয়ে ফোনে কথা বলেন স্বয়ং কৃষি সচিব এবং কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ট উদ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে। কারণ তাঁর ভয় ছিল তদন্ত কমিটির রিপোর্টের অপেক্ষা করলে পেঁয়াজ চাষের পেরিয়ে যাবে এবং এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই চার হাজার প্রান্তিক কৃষক।

তাই তিনি তদন্তের অপেক্ষা না করেই কৃষি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করলেন দ্রুত নতুন করে উন্নতমানের পেঁয়াজে রাজবাড়ী জেলায় প্রেরণ করতে। তার অনুরোধেই দ্রুতই কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে পেঁয়াজ বীজ চলে আসে রাজবাড়ী জেলায়।

রবিবার (৮ই ডিসেম্বর) নতুন করে সেই পেয়াজের বীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়। রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের কৃষক জাকির হোসেন বলেন,আমাদের চার হাজার প্রান্তিক কৃষককে উন্নত জাতের প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করেছিল উপজেলা কৃষি বিভাগ।

চলতি নভেম্বরে সরকারিভাবে বিনা মূল্যে এক কেজি করে ৪.০০০ জন প্রান্তিক কৃষককে পেঁয়াজ বীজ দেওয়া হয়। এই বীজ বপন, সেচ, সার, কীটনাশক ও জমি প্রস্তুত বাবদ প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়েছে প্রতিটি কৃষকদের । কিন্তু বীজ থেকে চারা গজায়নি। এখন নতুন করে বীজ বপন করার বেশি সময়ও বেশি নেই। সব মিলিয়ে প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজে আমাদের কৃষককে এ বছর ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ার ঝুঁকি ছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসক নিজে উদ্যোগ নিয়ে দ্রুততার সাথে নতুন পেঁয়াজের বীজ না দিলে অনেক বেশি ক্ষতির মুখে পড়তাম।
জেলার হোসনাবাদ পৌরসভার প্রান্তিক কৃষক সমশের শেখ জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,এমন কৃষক বান্ধব জেলা প্রশাসক পেয়ে আমরা গর্বিত। আমরা আমাদের যে কোন সমস্যা নিয়ে সরাসরি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে যেতে পারবো বলেও তিনি আজ আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা জানান ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রবি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় রাজবাড়ী জেলায় ৪০০০ জন কৃষকের মাঝে বিএডিসি হতে প্রাপ্ত বারি পেঁয়াজ- ১ জাতের বীজ ৫০০ জন, বারি পেঁয়াজ-৪ জাতের ১০০০ জন এবং তাহেরপুরী জাত ২৫০০ জনকে বিতরণ করা হয়েছিল। উক্ত বীজ না গজানোর কারণে তদন্তপুর্বক ৩৭২৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে পুনরায় লালতীর কোম্পানির তাহেরপুরী জাতের বীজ বিতরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

রবিবার রাজবাড়ি সদর উপজেলায় ২০০ জন, কালুখালি উপজেলায় ৩০০ জন এবং পাংশা উপজেলায় ৫০০ জন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের মধ্যে পুনরায় এক কেজি করে পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

বাকি পেঁয়াজ বীজ এ সপ্তাহের মধ্যেই বিতরণ করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় রবিবার বীজ বিতরণ অনুষ্ঠান উদ্বোধন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।

তিনি এই সময় পেঁয়াজ চাষীদের দ্রুত পেঁয়াজ রোপণ করার অনুরোধ করেন যাতে দেশের বাজারে পেঁয়াজের কোন সংকট দেখা না দেয়।

এই সময় আরো উপস্থিত ছিলেন রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক ডা. মোঃ শহিদুল ইসলাম, রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারিয়া হক প্রমুখ।’

 

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here