বাগেরহাটে খানজাহান আলী (রহ.)-এর বসতভিটা খননে উঠে আসছে সাড়ে ৬০০ বছরের পুরাতন বিভিন্ন প্রত্নবস্তু। গত ৩১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই খননে এখন পর্যন্ত মাটির নিচে ইটের দেয়াল, সিমেন্ট ও বালুর তৈরি মেঝে, সুলতানি আমলে ব্যবহৃত মাটির তৈরি পানির পাত্র, মাটির ঢাকনাসহ নানা তৈজসপত্র ও প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে।
প্রত্নবস্তু পাওয়ার খবর শুনে প্রতিদিন এখানে ভিড় করছেন স্থানীয় ও আশেপাশের লোকজন। মাটির নিচে পাওয়া এসব প্রত্নবস্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রেজিস্ট্রেশন করে বিভিন্ন জাদুঘরে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর বাগেরহাটের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ১৯৮৫ সালে খানজাহান আলী (রহ.)-এর নির্মিত ষাটগম্বুজ মসজিদসহ বাগেরহাটের ১৭টি স্থাপনাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে। এর মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলার সুন্দরঘোনা এলাকায় অবস্থিত খানজাহান আলী (রহ.)-এর বসতভিটা অন্যতম।
বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও অবহেলা আর অযত্নে দীর্ঘদিন ধরে খানজাহানের এই বসতভিটা স্থানীয়দের গোচারণভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ২০০০ সালের পর প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এ বসতভিটাকে প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব নির্ণয়ের জন্য কয়েক দফায় খনন করে। টিনশেডের একটি সাইট কার্যালয়ও নির্মাণ করে তারা।
এর ধারাবাহিকতায় গত ৩১ ডিসেম্বর পুনরায় খননকাজ শুরু হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতার নেতৃত্বে বিভিন্ন গ্রেডের সাতজন করে কর্মকর্তা ও অনিয়মিত ১৪ জন শ্রমিক এই খননকাজ ও গবেষণায় অংশগ্রহণ করছেন।
কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ বলেন, এখানে খননের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ভূমির স্তর বিন্যাস, স্থাপত্যশৈলী ও কালানুক্রমিক সময় বের করা। খননের মাধ্যমে পাওয়া স্থাপনা, ইট ও তৈজসপত্রসহ নানা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আমরা গবেষণা করব। এ ছাড়া খননের মাধ্যমে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নবস্তুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রেজিস্ট্রেশন করা হবে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের নির্দেশে এসব প্রত্নবস্তু জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা বলেন, বিভিন্ন গ্রেডের সাত কর্মকর্তা এই গবেষণাকাজ করছেন। এ ছাড়া খননের জন্য ১৪ জন অনিয়মিত শ্রমিক সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত কাজ করছেন। এই কাজ খুবই সাবধানে করতে হয়। কারণ ছোট ভুলের কারণেও গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নবস্তু নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ৩১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া আমাদের এই খননকাজ ৩১ জানুয়ারি শেষ হবে। তবে এরপরও এই বসতভিটা নিয়ে গবেষণা চলমান থাকবে বলে জানান তিনি।