মোজাম্মেল হক লালটু ,গোয়ালন্দ : অসময়ের তীব্র নদী ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ওদেবগ্রাম ইউনিয়ন কাওয়াজানি এলাকার পদ্মা পাড়েরর মানুষ। গত বর্ষার ভয়বহ নদী ভাঙনের ক্ষত কাটতে না কাটতেই আবার শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। শুষ্ক মৌসুমের এই ভাঙনে গত এক সপ্তাহে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে প্রায় ২০ বিঘা ফসলী জমি। জমিতে নতুন করে ফসল আবাদ করলে সে সকল ফসলসহ জমি নদী গর্ভে চলে যায়।
ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে এখন পদ্মা পাড়ের হাজারো মানুষের। জেলা ত্রান ও পূর্নবাসন শাখার তথ্যমতে, প্রমত্তা পদ্মার ভয়াল গ্রাসে গত ২০১৭ সালে ১৯১৫ টি, ২০১৮ সালে ২০৭০ টি এবং সব শেষ ২০১৯ সালে জেলায় ৩১২০ টি। তিন বছরে ৭ হাজার ১ শত ৫ টি বসত বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, নদী ভাঙ্গনের কবলে পরা এসব বাড়ির মালিকদের মধ্যে নগদ অর্থ, টিন ও চাউল সহায়তা প্রদান করা হয়ে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, একের পর এক নদী তীরের মাটির চাপ ভেঙে ফসলী জমি বিলীন হচ্ছে পদ্মায়। নদী তীরের জমিতে থাকা ধান ঘাস ধুনছে অন্যান্য ফসলী জমি নদী গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। জমির মালিকেরা জমিতে কালো বেগুনের চারা টমেটোর চারা মরিচের চারা লাউ চাল কুমড়ার চারা রোপ করেছে।নদীর পাড় ঘেষে আবার কিছু জমি চাষ করে ফেলে রাখা হয়েছে। যখন দক্ষিন দিক থেকে বাতাস আসে তখন পানির ধাক্কায় নদীর পাড় বেশি ভাংতে থাকে। এদিকে নদীতে একটু পানি বৃদ্ধি পাওযাতে চর অঞ্চলের নিচু ফসলী জমি ডুবে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
দেবগ্রাম ইউনিয়ন কাওয়াজানি গ্রামের কৃষক জালাল বিশ্বাস বলেন, আজ এক সাপ্তহ মধ্যে নদী গর্ভে চলে গেলো প্রায় ১০ বিঘা ফসলি জমি। জমিতে ধান ছিলো ধুনচা ছিলো আবার গবাদি পশুর জন্য ঘাস লাগানো ছিলো । কিছুু জমি চাষ করা হয়েছে আবার কিছু জমিতে কালো বেগুন ও টমেটো চারা রোপন করা হয়েছিলো সব কিছ্ইু নদী গর্ভে চলে গেছে।পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা আমরা। এখন কোথায় যাবো? কি করবো? কার কাছে বললে ভাঙ্গন বন্ধ হবে? আমাদের এখন একটাই চিন্তা যেভাবে ফসলী জমি ভাঙছে বসত বাড়ি আর রক্ষা পাবে না। এভাবে আর দু’এক সাপ্তহ নদী ভাঙলেই কাওয়াজানি গ্রামটি মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
আরেক কৃষক লোকমান সরদারে সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, আমার বাবা ও চাচাদের অনেক জমি ছিলো । নদীতে ভাংতে ভাংতে সব জমি প্রায়ই নদীতে চলে গেছে। কিছু জমি নদীর পাড় দিয়ে আছে সেই জমি গুলো কোন রকম আবাদ করে সংসার চালাই। আজ এক সাপ্তহ ধরে নতুন করে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে তাতে আমার দু বিঘা ফসলী জমি নদীতে চলে গেলো। এ ভাবে যদি নদী ভাংতে থাকে তাহলে আমার সবটুকু জমি নদীতে চলে যাবে তখন ছেলে মেয়ে নিয়ে কি করে খাবো। এক বছর আগের নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে মনে চাপা কষ্ট আর বুকভরা বেদনা নিয়ে এখানে এসে কোন রকম ঘর বাড়ী করে বসবাস করছিলাম এখন আর থাকা সম্ভব হবে না।পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা আমরা। এখন কোথায় যাবো? কি করবো? কার কাছে বললে ভাঙ্গন বন্ধ হবে? আমাদের এখন একটাই চিন্তা যেভাবে ফসলী জমি ভাঙছে বসত বাড়ি আর রক্ষা পাবে না।
এ সময় দৌলতদিয়ার বাসিন্দা খলিল মল্লিক বলেন, শুধু ফসলী জমি নয়। ভাঙ্গন ঝুঁকিতে আছে পুরো গ্রাম সহ ফেরি ও লঞ্চ ঘাট। ভাঙ্গন ঝুঁকি দৌলতদিয়া ও দেবোগ্রামের পাঁচটি বিদ্যালয়, মসজিদ, মন্দিরসহ হাজার হাজার বসত বাড়ি। অসময়ে এমন ভাঙ্গন আমরা এর আগে কখনও দেখিনি বলেও জানান তিনি।
অপর এক বাসিন্দা নুরী বিবি বলেন, আমরা এই দেশের নাগরিক। ভোটের সময় জন প্রতিনিধি, চেয়ারম্যান মেম্বার এমপিরা আসেন বলেন ভোট দেন নদী বেধে দিবো। কিন্তু ভোটের পরে আর কারো দেখা পাওয়া যায় না। আমরা কোন চাল ও ডাল চাই না চাই নদী শাসন।
গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমরা নদী শাসনের জন্য বরাবরি পানি উন্নয়ন বোর্ড কে অবগতি করেছি। এবার নদী শাসনের জন্য দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট আধুনিকরন কাজ হবে। দৌলতদিয়া থেকে হয়ত বা দেবগ্রাম মুন্সী বাজার পর্যন্ত নদী শাসনের কাজ হবে।
এ ব্যপারে রাজবাড়ীর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো’র)উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অংকুর বলেন, হঠাৎ ভাঙনের কথা শুনেছি। দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ও ফেরি ঘাট এলাকায় সরকারি ভাবে বিআইডব্লিটিএ কাজ করবে। ডাউনে ৭নং ফেরি ঘাট পর্যন্ত দুই কিলো মিটার পর্য়ন্ত নদী শাসনের কাজ হবে। আপে আড়াই কিলোমিটার মোট সাড়ে চার কিলোমিটা নদী শাসনের কাজ হবে।