রাজবাড়ী জার্নাল ডেস্ক: সম্প্রতি রাজবাড়ীতে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ও রহস্য উদ্ঘাটন নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিং করেছেন নবাগত পুলিশ সুপার মোছা.শামিমা পারভিন ।
২৫শে সেপ্টেম্বর (বুধাবার) সকাল সারে ১১ টায় পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রেজাউল করীম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ ইফতেখারুজ্জামান সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সুপার লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ১৫ই সেপ্টেম্বর পাংশা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়েছে, মামলা নং-০৬। পাংশা থানার বিলমন্ডব এলাকায় বসবাসরত এজাহারনামীয় আসামী রতন খাঁ তার স্ত্রী ভিকটিম চামেলীকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং ভিকটিমের মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করার চেষ্টা করে। কিন্তু ভিকটিমের সুরতহাল রিপোর্ট দেখে আমাদের সন্দেহ হলে একমাত্র এজাহারনামীয় আসামী রতন খাঁকে আমরা গ্রেফতার করি। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে হত্যার কথা স্বীকার করে। পরবর্তীতে CRPC-164 ধারা মোতাবেক ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
গত ২১শে সেপ্টেম্বর রাজবাড়ীর কালুখালি থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়েছে, যার মামলা নং-১২ । কালুখালী থানার মাধবপুর এলাকায় ট্রান্সফরমারের তার চুরি করতে গেলে জনগণ ভিকটিম নাজমুল মোল্লাকে পিটিয়ে আহত করে হাসপাতালের গেইটে ফেরে রেখে যায়। নাজমুল মোল্লা সেখান থেকে নিজে হেটে গিয়ে জরুরী বিভাগে যায় এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। তার স্ত্রীকে বাদী করে কালুখালী থানায় হত্যা মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। ভিকটিম একজন পেশাদার চোর ছিলেন। তার নামে ডাকাতি প্রস্তুতি- 03টি, চুরি- 06 টিসহ মোট 11টি মামলা রয়েছে। উক্ত ঘটনায় ভিডিও ধারনকারী মূল ব্যক্তি সালাম দরিকে গ্রেফতার পূর্বক আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। সে 2024 সালের 18 ই মে একটি মারামারি মামলা চার্জশীটভুক্ত আসামী। 2006 সালেরও আরেকটি মারামারির মামলা রয়েছে।
গত ২২শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা অনুমানিক সারে ৬ টার সময় একদল দুর্বৃত্ত ভিকটিম সুশীল সরকারকে কুপিয়ে ও গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ভিকটিম সুশীলের পিসিপিআর যাচাই করে জানা যায় সুশীল সরকার একজন চরমপন্থী দলের এই অঞ্চলের নেতা ছিলেন। তার নামে গোয়ালন্দঘাট থানায় হত্যাসহ অস্ত্র আইনের সাতটি মামলা রয়েছে। তিনি ইতোপূর্বে 5 বছর জেলও খেটেছেন। গোয়ালন্দ থানার মামলা নং-০৪ ।
হত্যাকান্ড ঘটনার সংবাদ পাওয়া মাত্রই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। ভিকটিমের ভাই সুনীল সরকার বাদী হয়ে গোয়ালন্দঘাট থানায় মামলা দায়ের করে।
এ ঘটনায় গোয়ালন্দঘাট থানা পুলিশ জনি নামে একজনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। তার নামে দুটি মাদক মামলা, একটি অস্ত্র আইনে মামলা এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সবুজ মার্ডার মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী।
গত ২৩শে সেপ্টেম্বর রাজবাড়ী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নং-২৬ । রাজবাড়ী সদর থানার রামকান্তপুর ইউনিয়নের এজাহারনামীয় আসামী রশিদ ভিকটিম বন্যাকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে মর্মে রশিদের পরিবার জানায়। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভিকটিমের মৃতদেহ পর্যালোচনা করে সন্দেহজনক মনে হলে আসামী রশিদকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। উক্ত ঘটনায় রশিদ ফৌ: কার্য: বি: 164 ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
গত ২৫শে সেপ্টেম্বর রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের ভবদিয়ায় মিনহাজ শেখ নামে একজন ১২ বছরের শিশুকে হত্যাকান্ড। গত পরশুদিন রাতে মিনহাজ শেখের বাবা আজাদ শেখ থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন। পরদিন সকালে তার মৃত দেহ পাওয়া যায়।
মিনহাজ শেখ পার্শ্ববর্তী এলাকার মুক্তার সর্দারের বাগানে মাল্টা খাওয়ার লোভে বাগানে প্রবেশ করতে যায়। কিন্তু মুক্তার সর্দার তার বাগান কাঁটাতারের বেড়া ও বিদ্যুতায়িত করে রাখে। শিশুটি সেই বাগানের বেড়ার বিদ্যুতের তারের সাথে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যায়। পরবর্তীতে মৃত দেহ মুক্তার সর্দার ও তার সহযোগীরা ধানক্ষেতের মাঝখানে ফেলে রেখে দেয়।
এ ঘটনায় বাগানের মালিক ও দারোয়ানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা নেয়া হয়েছে। রাজবাড়ী সদর থানার মামলা নং- ২৮। আসামীরা পলাতক আছে। গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
রাজবাড়ী পুলিশ সুপার বলেন , ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এদের একটির সাথে অন্যটির মিল নেই। আমরা ঘটনার পরই আসামী গ্রেপ্তার ও ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করেছি। যেকোন অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে ।