নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে বড় হিজলী জুলফিকার সিদ্দিকিয়া ওয়াজেদিয়া আলিম মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষকের বিরুদ্ধে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ছাত্রীর সাথে শ্লীলতাহানীকর কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। ৬ই জুন সোমবার বালিয়াকান্দি শিক্ষা অদিসার,উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন শিক্ষার্থীর বাবা।
পরদিন ৭ই জুন(মঙ্গলবার) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আম্বিয়া সুলতানা সরেজমিন পরিদর্শন করা সহ ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ওই ছাত্রীর পিতা অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়ে বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের বড় হিজলী জুলফিকার সিদ্দিকীয়া ওয়াজেদিয়া আলিম মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণীতে পড়ালেখা করে। মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মোঃ আব্দুল আওয়াল ক্লাস রুমে প্রবেশ করে ওই ছাত্রীর নিকট থেকে তার বই রাখা ব্যাগ নিয়ে নেয়। তারপর অনেক অনৈতিক প্রশ্ন করার পর এক পর্যায়ে ওই ব্যাগ থেকে তার শরীরের প্রয়োজনীয় স্যানিটারী ন্যাপকিনসহ গোপনীয় জিনিসপত্র বের করে। এতে ক্লাসের সমস্ত শিক্ষার্থীদের নিকট সকল গোপনীয় জিনিসপত্র হাতে নিয়ে উঁচু করে প্রদর্শন করে। পরে তার মেয়ে ক্লাসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। বাড়ীতে এসে তার মেয়ে সম্মানহানীকর ঘটনা বলে এবং আত্নহত্যা করবে বলে জানায়। বিষয়টি মাদ্রাসার অধ্যক্ষের নিকট বিষয়টি খুলে বলা হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ ঘটনায় রাসেল নামে এক শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করায় তাকে ওই সহকারী শিক্ষক ১০০ বার কান ধরে ওসবোস করান। এ কারণে ন্যায় বিচারের আশায় জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ঐ ছাত্রী বলেন, একজন শিক্ষক এ ধরণের আচরণ করবে কেন। আমার ব্যাগ চেক করার দরকার মাদ্রাসায় মহিলা শিক্ষক বা আয়া রয়েছে। আমাকে ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে অপমান করেছে আমার এখন আত্নহত্যা ছাড়া আর পথ নাই। আমি লজ্জায় মাদ্রাসায় যেতে পারছিনা ,কারো সামনে মুখ দেখাতে পারছিনা। আমি মানুষের মধ্যে মুখ দেখাতে পারছি না। আমি সুবিচার চাই।
একই মাদ্রাসায় দীর্ঘ ছাব্বিশ (২৬) বছর শিক্ষকতা করা অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মোঃ আব্দুল আওয়াল বলেন, মাদ্রাসায় মোবাইল এনে অন্যান্য মেয়েদের কথার সুযোগ সৃষ্টি করার কারণে তার ব্যাগ তল্লাশী করেছি। তবে কোন শিক্ষার্থীদেরকে দেখানো হয়নি। একজন ছাত্র এ নিয়ে ব্যঙ্গ করায় তাকে ১০ বার কান ধরে ওঠবোস করানো হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, মাদ্রাসার কমিটি গঠন নিয়ে আমার বিরুদ্ধে একটি চক্র অপপ্রচার চালাচ্ছে।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আ.ফ.ম. আয়াতুল ইসলাম বলেন, আমার নিকট অভিযোগ করলে বিষয়টি নিয়ে তাতক্ষনিকভাবে সুরহা করে দেওয়া হয়। পরে ওই ছাত্রীর অভিভাবকরা অভিযোগ দায়ের করেছে। আমার কাছে অভিযোগের কপি দিয়েছে। বিষয়টি মাদ্রাসার সভাপতির সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বেশ কিছুদিন আগে গোপালগঞ্জে মাদ্রাসার পক্ষ থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মাজারে ফুল দিতে যাওয়া হলে অভিযুক্ত শিক্ষক বলেছিলো বঙ্গবন্ধুর মাজারে বঙ্গবন্ধুর লাশ ই নেই, তাহলে এখানে আমরা ফুল দেব কেন ,এ নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে সোকোজ করা হয়েছিলো। ঘটনার সত্যতা শিকার করেছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আম্বিয়া সুলতানা বলেন, অভিযোগ পেয়ে ৭ই জুন(মঙ্গলবার) দুপুরে ওই ছাত্রীর বাড়ীতে গিয়ে কথা বলেছি। এ ঘটনায় উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আফরোজা জেসমিনকে আহবায়ক ও একাডেমিক সুপার ভাইজার মোঃ মিয়াদ হোসেন এবং সহকারী শিক্ষা অফিসার মিজানুর রহমানকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করবেন। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণ হবে বলেও জানান তিনি।