Wednesday, December 25, 2024

ছোট গল্পঃ অবহেলায় ভালোবাসা

ছোট গল্পঃ
অবহেলায় ভালোবাসা
…..সুপ্তা চৌধুরী
০৩/০৬/২০২২
সময়ঃ ০৩ঃ৪৫

রুবিনার সকাল থেকেই মনটা ভীষন খারাপ। নির্দিষ্ট একটা কারনে নয়। অনেক গুলো কারনে মন খারাপ। চারপাশে কারও কথা বা শব্দ তার বিরক্ত লাগছে। কাওকে সহ্যও হচ্ছে না। কোন কাজ করতে ইচ্ছেও করছে না। জীবনের প্রতি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে সে। এমন বিরক্তি বিগত কিছুদিন ধরেই চলছে। এমনটা আগে কখনও হয়নি। যেকোন পরিস্থিতিতে সে নিজেকে খুবই শক্তভাবে খাপ খাইয়ে নেওয়ার অসম্ভব মানসিক ক্ষমতা রাখতো। তাহলে কি মানসিক ক্ষমতা লোপ পেয়েছে তার?! এসব নিয়েও চুপচাপ ভাবছে। অন্যমনস্কভাবে শুয়ে শুয়ে ফেসবুক স্কল করে যাচ্ছে সে।

ডিপ্রেশন নিয়ে অনেক স্টাডি করেছে সে। কিভাবে ডিপ্রেশন দূর করা যায় তা নিয়েও স্টাডি করেছে। কিন্তু ইদানীং কোন উপায়ই আর কাজে আসছে না। ডিপ্রেশন কে নিজ থেকেই বলছে, “না তুমি যত চেষ্টাই করো, তোমাকে আর সুযোগ দেওয়া যাবে না”। এভাবেই নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। একটা সময় ছিল তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে খুব ভালো লাগতো। মনে হতো জীবনটা আসলেই আনন্দের। ঘুরা ফেরা হৈচৈ করা রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি। এখন এসবও ভালো লাগে না।

মনে মনে ভাবছে আমি কি তাহলে বড় হয়ে গেলাম?! আমার মাঝের অনুভূতিগুলো কোথায় হারিয়ে গেল? জীবনের দায়িত্বগুলো যখন ঘারে চেপে বসে তখন মনে হয় মানুষ সত্যিই বড় হয়ে যায়! আসলে মূল সমস্যাটা মনে হচ্ছে তার এই বড় হয়ে যাওয়াই হয়তো! নানান রকম কথাবার্তা ভাবছে সে এবং মন আরও বেশি খারাপ হচ্ছে। এরই মাঝে হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো।

রুবিনাঃ হ্যালো।
জাহিদঃ হ্যালো রুবিনা, শুনেছিস কিছু? (উদ্বিগ্ন কণ্ঠে)
রুবিনাঃ কি ব্যাপারে?
জাহিদঃ সুমন আর নেই।
রুবিনাঃ নেই মানে?! কোথায় গেছে? (সকড!)
জাহিদঃ? (কান্না জড়িত কণ্ঠেল) সুমন আমাদের ছেড়ে ওপারে চলে গেছে।
রুবিনাঃ কি বলছিস এসব? গত কালও তো কথা হলো আমার সাথে। হাসিখুশি ছিল সব ঠিক ছিল! (কান্না)
জাহিদঃ হ্যাঁ, কাওকে বুঝতে দেয়নি ও। আজ সকালে দরজা ভেঙে ওকে গলায় রশি দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝোলা অবস্থায় বের করা হয়েছে। ও এমনটা করবে আমরা কেও ভাবতে পারিনি।
রুবিনাঃ (কান্না জড়িত কণ্ঠে) আর তোড়া? তোড়ার কি খবর? (তোড়া সুমনের gf)
জাহিদঃ ওই তো সব কিছু ধ্বংস করলো। সুমনকে ছেড়ে সে অন্যের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। সুমন কিছুতেই এই প্রতারণা মেনে নিতে পারেনি। কি করেনি সে তোড়ার জন্য? তোড়া শুধু অভিনয়ই করে গেছে। মানুষ আসলে কেন ভালোবাসে?! কেনই বা প্রতারণা করে?! কেনইবা মানুষের জীবনটা প্রাণটা নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলে?! (কান্না করতে করতে জাহিদ বলছে)
রুবিনাঃ আমার অনেক খারাপ লাগছে দোস্ত, সাপুকেশন হচ্ছে ! আমি আসছি ওখানে, তুই থাক।
জাহিদঃ আচ্ছা আয়।
ফোন রেখে রুবিনা চোখ মুছতে মুছতে উঠলো। কিন্তু মন আরও বেশি খারাপ হয়ে গেল। শরীরে আর শক্তিও পাচ্ছে না। ভাবতেই পারছে না সুমন আর নেই!

ভাবছে, আমরা আসলে সেইসব বেঈমান, ভীরু, কাপুরুষ, স্বার্থপর, ছলনায় ভরা মনের মানুষদেরকেই ভালোবাসি যারা আমাদের ভালোবাসার যোগ্যই না। এদের কাছে কারও জীবনের কোন মূল্য নাই। সে বাঁচুক বা মরুক। শুধুমাত্র নিজ স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য এরা সম্পর্কে জড়ায় আর এর পরে সেই মানুষটা মরে গেলেও তাদের কোন অপরাধবোধও জাগে না। এরা সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে নিকৃষ্ট সৃষ্টি।।

অথচ আমরা তাদেরকে অবহেলা করি যারা আমাদেরকে ভালো রাখার জন্য কত কিছু করে! ভাবতে ভাবতে রুবিনার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। হায়রে জীবন, হায়রে ভালোবাসা! পৃথিবীতে কত মানুষই আছে আমাদেরকে কত ভালোবাসে, আমাদের ভালো চায়। অথচ একটা মাত্র মানুষের ভালোবাসা না পেলে মরে যেতে হবে?! ওই মানুষগুলোর কি অপরাধ তাহলে যারা আমাদেরকে ভালোবাসে?!

রেডি হয়ে বের হলো রুবিনা সুমনকে শেষ দেখা দেখবে বলে। সুমনকে রুবিনার কখনও বলা হয়নি যে সে মনে মনে ভালোবাসে তাকে। তোড়া আর তার মাঝে কখনও আসতে চায়নি সে। আপন মনে ভালোবেসে জ্বলেছে, কষ্ট পেয়ে গেছে। কিন্তু বলা হয়নি কখনও, আর হবেও না এই না বলা কথাগুলো বলা। আজ সুমন তার হলে হয়তো মরে যেতে হতো না। রুবিনার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে সুমন ফিরে আসো, তোমাকে জীবনের সব ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবো আমি! প্লিজ ফিরে আসো। তুমি কেন আমাকে একটা সুযোগ দিলে না? আমাকে কেন একটিবার ভালোবাসতে পারলে না?! চোখ বেয়ে ঝরে পরছে অঝোরে পানি।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here