ঢাকা, ১০ জুন, ২০২৪ (বাসস) : পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেছেন, পরিবেশগত বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শিকার হচ্ছেন নারী ও শিশু।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সুফিয়া কামাল ভবনের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে মতবিনিময় সভায় বক্তারা আজ একথা বলেন। পরিবেশ দূষণ এবং জলবায়ু বিপর্যয়ের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যগত সংকটসহ বিভিন্ন সংকট মোকাবেলায় নগরবাসীর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘বিপন্ন পরিবেশ বিবর্ণ ঢাকা: উত্তরণ ভাবনা’ বিষয়ক এ মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক এর স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. নবনীতা ইসলাম।
তিনি বলেন, “বর্তমান সময়ের প্রতিবেশ ও পরিবেশগত বড় বৈশি^ক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণে নারীর ঐতিহাসিক ভূমিকা থাকলেও পরিবেশগত বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শিকার হচ্ছেন নারী ও শিশু।”
তিনি বলেন, বর্তমানে ঢাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাভূমি ও উন্মুক্ত স্থান হ্রাস এবং শহরমুখী জন¯্রােতের কারনে পরিবেশগত দূষণ, শব্দ দূষণ ও অস্বাভাবিক মাত্রায় উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নারী ও শিশুরা বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। কম ওজনের শিশুর জন্ম হচ্ছে, অকাল প্রসব ও নবজাতকের মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক শায়ের গফুর, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর সভাপতি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান ও রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান এবং নিউ এইজ পত্রিকার প্রতিবেদক রাশেদ আহমেদ।
লিখিত বক্তব্যে নবনীতা ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি উত্তরণে জলবায়ু কর্মপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন, সরকারের নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন, জলবায়ু কর্মপরিকল্পনার মধ্যে বিভিন্ন কর্মকৌশল গ্রহণে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরী। তিনি বায়ুদূষণকারী পরিবহন সরিয়ে নেয়া, নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ করা এবং ইটভাটা ও কলকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন নারীরা। পরিবেশের সাথে নারীর সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে একেক স্থানের আবহাওয়ায় ভিন্নতা রয়েছে। ঢাকার পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় আছে, যা নারী ও শিশুর স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব তৈরি করছে। এই পরিস্থিতিতে ঢাকার পরিবেশগত বিপর্যয় মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন আজ সময়ের দাবি।
বক্তারা বলেন, জলবায়ুগত পরিবর্তনে নারীরা অতিরিক্ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, ডেংগুতে নারীদের আক্রান্ত হওয়ার হার কম হলেও তাদের মৃত্যুহার বেশি। নগরায়নের যে ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে তা বিধ্বংসী নগরায়ন। জলাশয়, জলাভ’মি রক্ষার কথা দীর্ঘদিন ধরে বলা হলেও তা গুরুত্ব পাচ্ছে না। নগরের সকল পরিবেশগত বিপর্যয় রোধ করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি প্রকৃতির আইনকে মেনে চলতে নগর ব্যবস্থাপকদের প্রতি তারা আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে তারা জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গণমাধ্যম কর্মীদের সক্রিয় অবস্থান নেয়ারও আহ্বান জানান।