উজ্জ্বল হোসেন, পাংশাঃ রাজবাড়ীর পাংশায় নেশার টাকা যোগান দিতে ও বেশী অর্থের বিনিময়ে বাবার বিরুদ্ধে তিন বছরের শিশু কণ্যা সন্তান সুমাইয়াকে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় কণ্যা সন্তানের মা মোছাঃ শুকজান খাতুন বাদি হয়ে গত ১০ আগস্ট মানব পাচার প্রতিরোধ দমন আইন-২০১২ এর ৬ (১)(২)/৭ ধারায় মোকাম রাজবাড়ীর বিজ্ঞ মানব পাচার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজবাড়ী জেলা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট রেশমা নাহার মাহমুদা। মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে কুমারখালী উপজেলার ১নং কয়া ইউনিয়নের গট্রিয়া গ্রামের মৃত মকছেদ মন্ডলের ছেলে আব্দুল মমিন মন্ডলকে ও খোকসা উপজেলার বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের জাগলবা গ্রামের মৃত গফুর আলীর ছেলে (কণ্যা সন্তানের পিতা) আঃ কাদের শেখকে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত মামলার দুই আসামী।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, স্বামী আব্দুল কাদের কোন কাজ-কর্ম করতেন না। তিনি নেশাগ্রস্থ ছিলেন। স্বামী ও তিন সন্তানের সংসারে, সাংসারিক সচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে ওমান রাষ্ট্রে যান মোছাঃ শুকজান খাতুন। ওমান রাষ্ট্রে যাওয়ার সময় তার বড় কন্যা ফাতেমা (১৮), পূত্র মোবাহান(১৪) ও সুমাইয়া(৭) কে তার মা রহিমা বেগম (ভিকটিমের নানী) কাছে রেখে যান। বিদেশ যাওয়ার দুই-তিন মাস পর তার স্বামী আঃ কাদের তার মায়ের কাছ থেকে সুমাইয়াকে নিয়ে যায়। সুমাইয়াকে নিয়ে যাওয়ার তিন-চার মাস পর তার স্বামী তাকে জানায় সুমাইয়া হারিয়ে গেছে। দুই বছর প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে মেয়ে সুমাইয়ার সন্ধান পেয়ে জানতে পারেন তার স্বামী নেশার টাকা যোগান দিতে এবং বেশী অর্থের লোভে বড় ধরণের নারী পাচার কারীদের কাছে বিক্রির জন্য কুমারখালী উপজেলার মমিন মন্ডলের কাছে তার মেয়ে সুমাইয়াকে রেখেছেন।
মামলার বাদী ভিকটিমের মা শুকজান খাতুন ‘রাজবাড়ী জার্নাল(অনলাইন)’ পত্রিকাকে বলেন, আমি অনেক চেষ্টা করেও মেয়েকে ফিরে পাচ্ছি না। আমি আমার মেয়ে সুমাইয়াকে মমিন মন্ডলের বাড়িতে আনতে গেলে আমার সাথে দূরব্যবহার করেন ।
সরেজমিনে অভিযুক্ত আব্দুল কাদের শেখের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে মুঠোফোনে তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ এনেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তিনি তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের অভাব-অনটনের সংসার। আমার স্ত্রী এই সংসারে থাকবে না বলে তিন-চার বছর আগে তিন সন্তানকে রেখে আমার বাড়ি থেকে চলে যায়। আমার ছোট মেয়ে সুমাইয়ার বয়স তখন তিন বছর। আমি আমার মেয়েকে তখন লালন-পালন না করতে পারায় সুমাইয়াকে এতিমখানায় দিয়ে দেব বলে আমি সিদ্ধান্ত নেই । এমন সময় আমার এক প্রতিবেশী মর্জিনা বেগমের ভাই মমিন মন্ডল আমার মেয়েকে লালন-পালন করার দায়িত্ব নিতে ইচ্ছা পোষণ করে এবং নিজের মেয়ে হিসেবে লালন-পালন করার জন্য বুঝে নেয়।
শিশু কন্যাকে বুঝে নেওয়া মমিন মন্ডলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার তিন ছেলে সন্তান। মেয়ে সন্তান না থাকায় সুমাইয়াকে নিজের মেয়ে হিসেবে লালন-পালন করার জন্য এনেছি। এখন পর্যন্ত সুমাইয়া আমার মেয়ে হিসেবেই আমার বাড়িতে রয়েছে। তবে স্বামী স্ত্রী একে অপরকে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ করলেও তাদের এখনো বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি বলে জানা গেছে।