Sunday, May 5, 2024

পোষ্ট অফিসের কাজ চলে মুদি দোকানে – তিনজন কর্মচারি নিচ্ছেন মাসিক ভাতা

রাজবাড়ী জার্নালঃ  রাজবাড়ী জেলার আলীপুর ইউনিয়নে অবস্থিত হমদমপুর শাখা পোষ্ট অফিস । দীর্ঘদীন পোষ্ট অফিসের ভবন ঝুকিপূর্ন হওয়ায় বন্ধ রয়েছে রাজবাড়ী ডাক বিভাগের এ শাখা অফিস। ডাক বিভাগের শাখা অফিসের দুই কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবনের পলেস্তার প্রায় ধ্বসে গেছে।

সদর উপজেলার বারবাকপুর স:প্রা:বিদ্যালয়ের দেওয়ালের ভিতরে অবস্থিত এই পোষ্ট অফিসের বাইরের থেকে দেখলে মনে হবে কোন পুরাতন আমলের পরিত্যাক্ত বিল্ডিং । জানালা গুলো বিবর্ণ হয়ে গেছে ।

কিন্তু বন্ধ এ ভবনের তিন কর্মচারির নামে মাসিক বরাদ্ধ ১৩ হাজার ১৬ টাকা । রাজবাড়ী প্রধান ডাকঘরের শাখা অফিস হমদমপুর পোষ্ট অফিস। এখানে পোষ্ট মাস্টার হিসেবে রয়েছেন হারুন অর রশিদ , তিনি মাসিক ৪ হাজার ৪শত ৬০ টাকা সম্মানিভাতা পান। স্বপন কুমার রায় নামে একজন পিওন পান মাসিক ৪হাজার ৩শত ৫৪ টাকা , সহকারি পিওন সত্য কুমার সাহা পান মাসিক ৪হাজার ১শত ৭৭ টাকা আর আনুসাঙ্গিক খরচ মাসিক ২৫ টাকা ।

মুদি দোকানে ডাকের চিঠি !

সরেজমিনে খোজ নিয়ে জানা গেছে তিনজন কর্মচারির কেউই অফিস করেন না। পিওন স্বপন কুমার রায় বারবাকপুর বাজারে একটি মুদি দোকান করেন । দোকানে বসেই হয় পোষ্ট অফিসের চিঠি বিলি’র কাজ। গ্রাহককে ফোন করে দোকানে আসতে বললে তারা দোকান থেকেই এসে চিঠি নিয়ে যান।

পোষ্ট অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়না পোষ্ট মাস্টারকে । তার বাড়ীতে গিয়ে খোঁজ করা হয়। স্বজনদের কাছ থেকে মোবাইলে ফোন করলে তিনি জানান ভূমি অফিসে জমি সংক্রান্ত কাজের জন্য এসেছেন। এরপর পোষ্ট অফিসে আসতে বলে তিনি আসেন পোষ্ট অফিসে। পরে পোষ্ট অফিসের দরজা খুলে দেন। দেখা যায় অফিসের ভেতরে জ্বরাজীর্ণ অবস্থা । পোষ্ট অফিসের ভেতরে নেই কোন চেয়ার টেবিল।

 

এ বিষয়ে পোষ্ট মাস্টার হারুন অর রশিদ বলেন, এর আগে ছাদের পলেস্তার খুলে মাথায় পরার উপক্রম হয়েছিলো । এরপর থেকে অফিস খোলা হয় না । অফিসের কম্পিউটার , সৌর বিদ্যুতের ব্যাটারী , সহ অফিসের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সুরক্ষার জন্য তিনি বাড়ীতে নিয়ে রেখেছেন। পোষ্ট অফিসের কাজ পিওন স্বপন কুমার রায়ের দোকানে করা হয় বলে জানান তিনি। তার বাবা কাজী করিমুর রহমানের মৃত্যুর পর তিনি এ দায়িত্ব পেয়েছেন বলে জানান তিনি।

পিওন স্বপন কুমার রায়ের দোকানে গিয়ে পাওয়া যায় ৪-৫ টি চিঠি । স্বপন কুমার বলেন, মাত্র কয়েকটি টাকা সম্মানীভাতা পাই, আমার ছেলে সহকারী পিওন। সে মাঝে মাঝে গ্রাহকদের চিঠি নিয়ে যায় আবার অনেকেই দোকানে এসে চিঠি নেন। এখানে পাসপোর্ট, রেজিস্ট্রি ও তালাকের চিঠি ইত্যাদি রাজবাড়ী প্রধান ডাকঘর থেকে রানারের মাধ্যমে আমাদের কাছে দিয়ে যায় । ‘

সহকারি পিওন সত্য কুমার সাহাকে পাওয়া যায়নি পোষ্ট অফিসের আশেপাশে ।

বারবাকপুর স:প্রা: বিদ্যালয়ের প্রাচীরের মধ্যেই অবস্থিত হমদমপুর শাখা পোষ্ট অফিস। প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে বারবাকপুর স:প্রা: বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার মন্ডল বলেন, ২০২০ সালে আমি এ বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি। বিদ্যালয়ে যোগদানের পর এ পোষ্ট অফিসের কোন কার্যক্রম আমার চোখে পড়েনি।
এ বিষয়ে কথা হয় রাজবাড়ী প্রধান ডাকঘরের পোষ্ট অফিস পরিদর্শক মোঃ আজিজির রহিম বলেন, ‘ আমি গত বছরের জানুয়ারি মাসে পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। অফিসে বসে কাজ করে আসছি। অফিস বিল্ডিং টি জরাজির্ন বিল্ডিং সংস্কারের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সুরক্ষার জন্য অফিসের কম্পিটার , সৌর প্যানেলের ব্যাটারী ও সরঞ্জামাদি পোষ্ট মাস্টারের বাসায় রেখেছেন ।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন দোকানে বসে পিওন চিঠি বিলি করেন বিষয়টি দু:খ জনক আমি দ্রুতই অফিস পরিদর্শন করে ব্যাবস্থা গ্রহন করবো ।

এলাকার মানুষের দাবী পোষ্ট অফিস টি আবার সচল হোক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা ডাক বিভাগের সেবা যেন ভোগান্তি ছাড়াই পেতে পারেন ।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here