স্টাফ রিপোর্টার: ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৪’ এর উদ্বোধন হচ্ছে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার। বাংলা একাডেমি মূল মঞ্চে উপস্থিত হয়ে মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অধিবর্ষের কারণে এবারের বইমেলা হবে ২৯ দিন। গতবারের মতো এবারও বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য- ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।’
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৪’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মেলার বিস্তারিত তুলে ধরেন আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ড. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বইমেলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশের সিএমও মীর নওবত আলী, বাংলা একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মুহাম্মদ হাসান কবির ও পরিচালক সুমীর কুমার সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন।
মোড়ক উন্মোচন এবং ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩’ প্রদান
‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘কালেক্টেড ওয়ার্কস অব শেখ মুজিবুর রহমান: ভলিউম ২’-সহ কয়েকটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন এবং ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩’ তুলে দেবেন।
বইমেলায় অংশ নিচ্ছে ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠান
এবার বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি ইউনিট অর্থাৎ মোট ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৯৩৭টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় ৩৭টি (একাডেমি প্রাঙ্গণে ১টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি) প্যাভিলিয়ন থাকবে।
বইমেলার বিন্যাস অক্ষুণ্ন, থাকছে আটটি প্রবেশ ও বাহিরপথ
এবার বইমেলার বিন্যাস গতবারের মতো অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে তবে কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশন-এর অবস্থানগত কারণে গতবারের মেলার বাহিরপথ এবার একটু সরিয়ে মন্দির-গেটের কাছাকাছি স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশন অংশে মোট ৮টি প্রবেশ ও বাহিরপথ থাকবে।
খাবারের স্টলের জায়গায় পরিবর্তন
খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সীমানা-ঘেঁষে বিন্যস্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, খাবারের স্টলগুলোকে এবার এমনভাবে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে যেন এলোমেলোভাবে খাবারের স্টল বইমেলায় আগত পাঠকের মনোযোগ বিঘ্নিত না করে। এছাড়াও মেলায় থাকছে নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবা।
‘শিশু-চত্বর’ কালি মন্দিরের পাশে
গেলো বছরের মতো শিশু-চত্বর মন্দির-গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে, যেন শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে।
লিটলম্যাগের জায়গা পরিবর্তন
এবার লিটল ম্যাগাজিন চতুর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায়। সেখানে প্রায় ১৭০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
২৫ পার্সেন্ট কমিশনে বই বিক্রি
বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন এবং শিশুকিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য ১টি স্টল থাকবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে।
শিশুপ্রহর
প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে।
রয়েছে বেশ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা
বইমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মেলা থাকবে পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত
বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (সমগ্র মেলাপ্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহিদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চাঁনখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধুলা নিবারণের জন্য পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে।
রিকশা পেইন্টিং প্রদর্শনী স্টল ও বই পাঠ স্টল
এবারের বইমেলায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতপ্রাপ্ত রিকশা চিত্রের প্রদর্শনীর জন্য স্টল থাকবে বলে জানিয়েছেন বইমেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ড. কেএম মুজাহিদুল ইসলাম। তিনি আরও জানান, পাঠকরা যাতে মেলায় বসে বই পড়তে পারে সেজন্য মেলায় থাকছে বই পাঠ স্টল।
শুক্রবারে মেট্রোরেল চালু রাখার অনুরোধ
শুক্রবার মেট্রোরেল বন্ধ থাকলেও বইমেলা উপলক্ষে সেদিনও কর্তৃপক্ষকে মেট্রোরেল চালু রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা বলে জানান তিনি। এছাড়াও প্রশ্ন উত্তর পর্বে ধুলো,কাঁদা জায়গায় ইট দেওয়ার পরিকল্পনা আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সপ্তাহে একদিন করে সাংবাদিক সম্মেলন করার পরিকল্পনা
বইমেলা চলাকালীন প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার সংবাদ সম্মেলন করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কেএম মুজাহিদুল ইসলাম। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত নয় বলেও তিনি জানান।
এবারই শেষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা
সরকারি কর্তৃপক্ষ বলছে, এবারই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা শেষ হবে। এরপর অন্য কোথাও বইমেলা আয়োজন করার জন্য বাংলা একাডেমিকে জানিয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির পরিকল্পনা কী? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা বলেন, সবুজায়নে জন্য হয়তো আমরা একবার বা দুবারই এখানে জায়গায় পাবো না, অনন্তকালের জন্য না। বিকল্প জায়গা খুঁজতে হবে। সেক্ষেত্রে হয়তো টিএসসি ও দোয়েল চত্বর রাস্তা বন্ধ করে স্বল্প পরিসরে করতে হবে। সেখানে ইউনিট বরাদ্দের বিষয়টি কমে আসবে তখন।
২০২৩ সালের বইমেলার পুরস্কার
অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২৩ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। এছাড়া ২০২৩ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ-বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।
বইমেলার সময়সূচি
এবারের বইমেলা অধিবর্ষের বইমেলা। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টা এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।