Saturday, November 16, 2024

বহরপুর রেলওয়ে ফুটবল মাঠের পথ চলার পূর্ব ইতিহাস

মোঃ আমিরুল হক: ‘আমলটা পাকিস্তান অর্থাৎ তখনও এটা ছিল পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্বাধীন হওয়ার আগের কথা।

এ এলাকার ( শেকাড়া, বাড়াদী ও নারায়নপুর) কিশোর যুবকেরা বহরপুর বাজারস্থ হাইস্কুল মাঠে সকল প্রকার ক্রীড়া সম্পাদন করিতেন। যেই মাঠটিই এখন বালিয়াকান্দির ঐতিহাসিক বহরপুরের পিয়াজ হাটে পরিনত হয়েছে। ঘটনা ক্রমে শেকাড়া, বাড়াদী ও নারায়নপুর গ্রামের মানুষেরা তাদের এলাকায় একটি খেলার মাঠ তৈরি করার চিন্তা মাথায় নিলেন।

তার মধ্যে কয়েক জন যুবক তৎকালীন শেকাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও বহরপুর হাই স্কুলের বি এস সি শিক্ষক খন্দকার আব্দুল খালেক মাস্টারের কাছে বিষয়টি আলাপ করেন। তিনি তাদের খেলার মাঠ তৈরির ব্যপারে সকল দ্বায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন।
আব্দুল খালেক মাষ্টারের সু- পরামর্শ অনুযায়ী তিন গ্রামের কিছু মুরুব্বি ও কিছু যুবক কিশোরদের ছোট পরিসরে মিটিং ডেকে বসেন। তার মধ্যে উল্লেখ্য ব্যাক্তি বর্গ হলেন খন্দকার আব্দুল খালেক মাস্টার শেকাড়া, দিন্দার মন্ডল বাড়াদী, আজাহার বিশ্বাস বাড়াদী, মুজাহার বিশ্বাস বাড়াদী, খন্দকার আনিছুর রহমান আনিচ শেকাড়া, আবু বক্কার আনছারী বাড়াদী, রইচউদ্দিন আনছারী প্রমূখ।
সেই মিটিং এর আলোচনা সবার এককথা আমাদের খেলার মাঠ লাগবে। তখন বহরপুর রেলওয়ে স্টেশনের পাশে বেশ কিছু রেলের কৃষি জমি চাষাবাদ করতেন (বর্তমান এখন যেটা বাড়াদীর বহরপুর রেলওয়ে ফুটবল মাঠ) দিন্দার মন্ডল বাড়াদী, আজাহার বিশ্বাস ও মুজাহার বিশ্বাস। এই তিন জন বললেন কোথার আর জমি খোঁজ করবো আমরা যে রেলের জমি চাষাবাদ করি এটাই তোমরা আপাতত খেলাধুলা করার জায়গা (মাঠ) বানাও। যেমন কথা তেমনই কাজ। তখন এলাকার আরো বেশি লোককে এ কাজের জন‍্য সম্পৃক্ত করে শেকাড়ার পেনা সেক, বাড়াদির মুজাহার ও লুকমান ওরফে আদারেদের বাড়ি থেকে গরু ও মই এনে দেয়া হলো সমস্ত খেতে মই টানা হলো।

তখনই মেরে দেয়া হোল বপনকৃত ফসল। যেমন, মসুরী, সরিষা, কালাই, ছোলা ইত‍্যাদী। অবৈধভাবে রেলওয়ের জায়গা দখল করার অপরাধে রেলওয়ে কতৃপক্ষ বসালেন মামলা।

পরবর্তীতে ফুটবল মাঠ তৈরী করতে অংশগ্রহণ করে যারা সেই মামলার আসামি হয়ে গ্রেপ্তার হলেন ১) খন্দকার আব্দুল খালেক মাস্টার শেকাড়া, ২) আবু বক্কার আনছারী বাড়াদী, ৩) মোঃ নুরুল সেক বহরপুর ৪) আলিমুদ্দিন সেখ শেকাড়া আর পলাতক হলেন খন্দকার রিয়াজুর রহমান নান্নু শেকাড়া, খায়ের আনছারী বাড়াদী, রইচউদ্দীন আনছারী বাড়াদী, আঃ রাজ্জাক মল্লিক বাড়াদী, রাজেন কর্মকার বাড়াদী, অনিল কর্মকার বাড়াদী, অনিল বিশ্বাস নারায়নপুর, আমজাদ মল্লিক বাড়াদী, নুরুল হক মল্লিক (ছোটমণি) বাড়াদী, খন্দকার আনিছুর রহমান আনিচ শেকাড়া, মইজউদ্দিন মন্ডল শেকাড়া, আইজদ্দীন মন্ডল শেকাড়া, খন্দকার মজিবর রহমান তুতা শেকাড়া, লুকমান (আদারে) বাড়াদী, ছামাদ মোল্লা বাড়াদী, বাবলু সিকদার নারায়নপুর (এদের মধ্যে অধিকাংশ মুরুব্বি আজ দুনিয়াতে নেই)। একদিকে জেলে বন্ধিদের মুক্তি অন্য দিকে মাঠ বানানোর আন্দোলন এর মাঝে পার হয়ে গেলো প্রায় একটি মাস। আন্দোলনের একপর্যায়ে বহরপুর রেলওয়ে স্টেশনে জেল থেকে মুক্তি দাবিতে রেলগাড়ী অবরোধ করা হলো। প্রায় ২৪ ঘন্টা অবরোধ চলমান ছিলো। শেষমেষ রেলওয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাদের বহরপুর রেলওয়ে স্টেশনে সরজমিনে আসার প্রতিশ্রুতিতে তুলে নেয়া হয় সেই অবরোধ ।

অবশেষে অবরোধ তোলার দু দিন পর বাড়াদীর বহরপুর রেলওয়ে ষ্টেশনে আসলেন রেলওয়ের পাকশী জোনের ডিও সহ বেশ কিছু কর্মকতা বৃন্দ।
অফিসাররা আন্দোলন কারিদের মধ্যে দুই জন প্রতিনিধি চাইলেন আলোচনার জন্য।
প্রতিনিধি গেলেন খন্দকার রিয়াজুর রহমান রিয়াজ নান্নু শেকাড়া ও আবুল খায়ের আনছারী বাড়াদী। বেশ কিছুক্ষন আলোচনার পর রেলকতৃপক্ষ একটি মাঠের জন্য গণ স্বাক্ষরিত একটি আবেদন পত্র চাইলেন এবং তা তাৎক্ষণিক ভাবে রেলওয়ে কতৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়। এবং তার পরিপেক্ষিতে বহরপুর রেলওয়ে ফুটবল মাঠ দুইটি অনুমোদন হয় একটি বড় একটি ছোট।

ইতিহাস কথা কয়-বহরপুর রেলওয়ে ফুটবল মাঠের পথ চলার পূর্ব ইতিহাস।
ইতিহাস কথা কয়-বহরপুর রেলওয়ে ফুটবল মাঠের পথ চলার পূর্ব ইতিহাস।

আজ তার নাম ” বহরপুর রেলওয়ে ফুটবল মাঠ “।সেই সাথে তাদের করা মামলা তারা নিঃর্শতে তুলে নেন।

জেল থেকে মুক্তি পান আমাদের এই মাঠ প্রতিষ্ঠার যোদ্ধারা। এখানেই শেষ নয় যারা জেলে ছিলেন তাদের জেলের অত্যাচারের কারনে মাঠ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকারির প্রধান খন্দকার আব্দুল খালেক মাস্টার জেল মুক্তির কিছু দিন পর শাহাদাঁতবরন করেন।

সে সময়ের আন্দোলনকারীদের মধ্যে এখনো দু একজন বেঁচে আছেন তাদের প্রতি রইল শ্রদ্ধা। এবং যেসকল যোদ্ধারা শাহাদাত বরন করেছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।

আমাকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন – রইচউদ্দীন আনছারী বাড়াদী, (মাঠ প্রতিষ্ঠা যোদ্ধা) ও
রাবেয়া খাতুন শেকাড়া ( শিক্ষিকা ও মরহুম আঃ খালেক মাস্টারের ছোট বোন)

এ প্রতিবেদনের তথ‍্য প্রদানকারী ও বি,এন,বি,এস স্পোর্টিং ক্লাবের সার্বিক সহযোগিতা করা খন্দকার মিরাজুর রহমান মিরাজ ওরফে সান্টু বলেন, দীর্ঘ সময় নিয়ে আমি এই বিষয়ে ভাবতে ভাবতে ঐ সময়ের কয়েকজন বয়স্ক মানুষের সাথে কথা বলি। তাদের দেওয়া তথ‍্যের ভিত্তিতেই এই ইতিহাসের আদ‍্যপান্ত আমার নজরে এসেছে। যে খেলার মাঠের জন‍্য জেল, জুলুম নির্যাতন সহ‍্য করেছেন তাদের নামের উপর কখনো কথাই বলেন না এই সময়ের কমিটির লোকজন। আমার চাওয়া সেই আত্মত‍্যাগ করা মানুষগুলোর নাম থাক মাঠের পাশে।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here