বিশেষ প্রতিনিধিঃ নদীর পারে অবস্থিত একটি গ্রাম যেখানকার মানুষ নৌকা ছাড়া কখনো এপার ওপার হতে পারেনি।নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে কেউ কখনো সেতুর কথা চিন্তা করেনি। এটাকে দেখে মনে হতো বিচ্ছিন্ন কোন দ্বীপ। বর্ষায় নদী শুকিয়ে গেলে অল্প পানিতে নৌকা চলতো না। তখন মেয়ে মানুষের চলাফেরা কত কষ্টের বলেন বিশেষ করে যে সমস্ত মেয়েরা পড়াশোনা করার জন্য এপারে আসে তাদের ভেজা কাপড়ে থাকতে হয় কথা গুলো বললেন কাওয়াজানি গ্রামের বাসিন্দা সালাউদ্দিন ব্যাপারী।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের কায়াজানি গ্রাম এবং ছোটভাকলা এলাকার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র উপায় ছিল নৌকা। আর খেয়া নৌকায় পারাপার হতো দুই গ্রামের মানুষ। তবে এখন আর তাদের কষ্ট করে পারাপার হতে হবে না। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা মুন্সির আর্থিক সহযোগিতায় নির্মিত হয়েছে এই দৃষ্টি নন্দন বাশের সেতু। আর এতেই দীর্ঘ দিনের কষ্ট লাঘব হয়েছে এলাকাবাসীর আর তারা খুশি ।
সরেজমিনে সেতু এলাকায় দেখা যায়, মরা পদ্মার পূর্বপাশে দেবগ্রাম ইউনিয়নের চার নং ওয়ার্ডের ছোট কাওয়ালজানি গ্রাম। পশ্চিম পাশে ছোটভাকলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। এই দুই ওয়ার্ডের সংযোগ সড়কে খালের ওপর পাঁচ ফুট প্রস্থ এবং ১৮০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি বাশ দিয়ে নির্মান করা হয়েছে। কাওয়ালজানি গ্রামটি পদ্মা নদীর পারে অবস্থান করায় এর চারপাশেই রয়েছে পানি। বাজার সদাই করা সহ স্কুল কলেজে আসতে হলে এই বাঁশের সেতু একমাত্র ভরসা।
ওই এলাকার পুরাতব বাসিন্দা বৃদ্ধ আরমান আলী (৯৫) বলেন বাবা এখানে যারা আছে সেই বৃটিশ আমল থেকেই অনেক কষ্টে বসবাস করছে। কাওয়ালজানি গ্রামে প্রায় দশহাজার মানুষ এই সেতু ব্যাবহার করে। তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও কমেছে তবে একটা সেতু হলেই স্থায়ী সমাধান হয়। এই গ্রামের লোকজন জেলা শহর এবং উপজেলা শহরে যাতায়াত করে থাকেন এখান দিয়েই। প্রতিদিন অন্তত সাতশ থেকে আটশ লোক এ খাল পার হয়। এ খাল পার হয়েই উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কলেজে যাতায়াত করে অনেক ছাত্র ছাত্রীরা।
কাওয়ালজানি গ্রামের অধিবাসী এবং দেবগ্রাম চার নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মালেক মন্ডল বলেন, আমাদের উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা মুন্সি এবং চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম সহযোগিতা করেছেন এবং আমরা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে এই বাঁশের সেতুটি নির্মানে করেছি যার ফলে মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে। এছাড়া বিশেষ করে মহিলাদের চলাচল অনেকটা নির্বিঘ্ন হয়েছে বর্ষায় পানি কমলে তারা না ভিজে চলাচল করতে পারতো না কারণ তখন নৌকা বন্ধ থাকতো। এছাড়া শফিকুল ইসলাম নামে একজন বলেন প্রতিবছর জনপ্রতি এক হাজার টাকা দেওয়া লাগতো এখন আর সেটা দিতে হবে না।
ছোট বাচ্চা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিলেন অন্জনা আক্তার তিনি বলেন, সেতু হওয়ায় আমরা অনেক খুশি। আগে ইচ্ছে করলেই আমরা বাইরে যেতে পারতাম নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হতো। তাছাড়া যখন পানি কমে আসতো তখন নৌকা চলতে পারতো না। আমাদের পারাপারে মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো। তবে একটা সেতু হলে সবার জন্য ভালো হতো।
ছোট্ট ভাকলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান সেতুটি নির্মাণ করে দিয়েছি।তবে এখানেই শেষ নয়, আমি চেষ্টা করব আগামীতে এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য কতৃপক্ষের সাথে বলে।
গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা মুন্সি বলেন জনগণের কষ্টের কথা বিবেচনা করে আপাতত একটা বাঁশের সেতু নির্মান করে দিয়েছি ভবিষ্যতে এখানে নদী শাসন করা সেতুর ব্যাবস্থা করা হবে। আমি সবসময় তাদের সেবক হয়ে সেবা করতে চাই।
আরজে/সিরাজুল ইসলাম