Friday, November 15, 2024

বাঁশ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে বালিয়াকান্দিত ১৪০০ ফুটের মণ্ডপ, থাকবে ৩০০শত দেবদেবীর প্রদর্শনী

এস এম রাহাত হোসেন,ফারুক: রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামে পুকুরের ওপর ৮ হাজারেরও বেশি বাঁশ ও কাঠ দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ১৪০০ ফুট উচ্চতায় বিভিন্ন দেবদেবীর প্রদর্শনী। ব্যতিক্রমী এই মণ্ডপে থাকবে তিন শতাধিক প্রতিমা। যেখানে তুলে ধরা হবে সনাতন ধর্মের আলোকে বিভিন্ন দেবদেবীর কাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমুলক চিত্র।

ব্যতিক্রমধর্মী এই দুর্গাপূজার আয়োজন করছে জামালপুর ও আলোকদিয়া উত্তরপাড়া সার্বজনীন শ্রী শ্রী শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটি। এই পূজা মণ্ডপ দেখতে দেশ বিদেশ থেকে কয়েক লাখ লোকের সমাগম হবে বলে আশা কমিটির। এই আয়োজন চলবে ১০- ১২ দিন পর্যন্ত।

জানা গেছে, ৮ হাজারেরও বেশি বাঁশ ও কাঠ দিয়ে নির্মত হচ্ছে পূজা মণ্ডপ। মণ্ডপে দেবী দুর্গার সঙ্গে স্থান পাবে ৩০০শতধিক বিভিন্ন দেব দেবির মূর্তি। ৫০ – থেকে ৬০ জন শ্রমিক তিন মাস ধরে কাজ করে। এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসছেন এই মন্ডপের কাজ। ব্যতিক্রমী এই আয়োজন দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।

আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, মণ্ডপের ভেতরে মেট্রোরেলের মধ্যে থাকবে বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে জন্ম ও আবির্ভাব নেওয়া সনাতন ধর্মের ২০ জন মনীষীর প্রতিমা। মণ্ডপের মধ্যে প্রতিমা দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হবে সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিষয়। দক্ষযজ্ঞ, সতীর দেহ ত্যাগ, সতীর দেহ থেকে ৫১টি তীর্থ ক্ষেত্র, শ্রীকৃষ্ণের কুঞ্জবন ইত্যাদি।

সরেজমিনে দেখা যায়,পানির ওপর বাঁশ দিয়ে ৬টি মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি মণ্ডপে স্থাপন করা হয়েছে প্রতিমা। মণ্ডপে প্রবেশ করে ১৪০০ ফুট হেঁটে শেষ করতে হবে প্রতিমা দর্শন। মণ্ডপে প্রবেশের সময় চোখে পড়বে শিবের বিশালকৃতির মূর্তি। এরপর মূল প্রবেশ পথ দিয়ে কিছুদূর আগালে দেখা যাবে বড় মন্দির।

সেখানে তুলে ধরা হয়েছে দক্ষযজ্ঞের কাহিনী। দক্ষযজ্ঞ থেকে শুরু করে সতীর পুনর্জন্ম ও ৫১টি শক্তিপীঠের কাহিনী সাজানো হয়েছে মূর্তিগুলো দিয়ে। এরপর পুকুরের ওপর তৈরি করা হয়েছে ওভারব্রিজ। ব্রিজের দুই পাশে পানির ফোয়ারার মধ্য দিয়ে সামনের মণ্ডপে মেট্রোরেলের ভেতরে রাখা হয়েছে ২০ জন মনীষীর মুর্তি। সেগুলো দেখে সামনে আগালে দেখা যাবে সনাতন ধর্মের আরেক কাহিনী। সেটি শেষ করতে পরের মণ্ডপে দেখা যাবে কুঞ্জবনে শ্রীকৃষ্ণের শৈশব। এরপর দেবীর ঘটকে বিদায়ের আরেকটি দৃশ্য। শেষে মূল দুর্গা পূজা মণ্ডপ।

এরই মধ্যে এই আয়োজন দেখতে আসতে শুরু করেছেন জেলার বিভিন্ন স্থানের দর্শনার্থীরা। তাদের দাবি, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির এই আয়োজন ব্যতিক্রমী।

প্রতিমা তৈরির কারিগর সুজিত কুমার পাল বলেন, তিন মাস ধরে আমরা এখানে কাজ করছি। মহাষষ্ঠীর দিনের আগেই শেষ হবে এই কাজ। আমাদের এই আয়োজন হবে দেশসেরা। বাঁশ দিয়ে নির্মিত মন্দিরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মণ্ডপে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হবে। যেখানে থাকবে মেট্রোরেল, পানির ফোয়ারা।

বাঁশের কাঠামো দিয়ে মণ্ডপ তৈরির কারিগর ইউসুফ মিয়া বলেন, আমরা প্রতিবছর এখানে ব্যতিক্রমী আয়োজন করে। করোনার পর এই বছর আবার নতুন করে শুরু করেছে। এখানে সনাতন ধর্মের বিভিন্ন কাহিনী তুলে ধরা হবে। আমাদের আয়োজন চলবে লক্ষ্মীপূজা পর্যন্ত।

আলোকদিয়া দুর্গাপূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ বিশ্বাস বলেন, আমরা প্রতি বছর এখানে ব্যতিক্রম ভাবে এই আয়োজন করি। করোনার পর তিন বছর বড় পরিসরে এই আয়োজন করতে পারিনি। এ বছর আবার শুরু করেছি। এখানে পূজা দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। এবারো কয়েক লাখ দর্শনার্থীর সমাগম হবে। ব্যক্তিক্রমী এই আয়োজনে আমাদের বিশেষ নিরাপত্তা থাকবে।

এরই মধ্যে মণ্ডপ তৈরির ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে ৫০ – ৬০ জন শ্রমিক কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিমার কাজও শেষের দিকে। ৬টি মণ্ডপে সনাতন ধর্মের কাহিনী ফুটিয়ে তোলা হবে। ভেতরে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হবে। যেখানে মেট্রোরেলের ভেতরে মাটির তৈরি মনীষীদের মুর্তি রাখা হবে।

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জি.এম.আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাজবাড়ীতে এ বছর ৪৪৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি মণ্ডপে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সতর্ক অবস্থায় থাকবে। তবে বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামে বড় পরিসরে দুর্গাপূজার পাশা পাশি এই আযোজন । সেখানে আমাদের তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।’

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here