Thursday, July 17, 2025

বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৫৭ লাখ: ইউএনএফপিএ

ঢাকা, ৭ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) জানিয়েছে, ২০২৫ সালে বাংলাদেশে জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৫৭ লাখে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ, যা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুফল অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

ইউএনএফপিএ’র বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে আজ সকালে রাজধানীর গুলশানে জাতিসংঘ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৫’- সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

ইউএনএফপিএ’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং প্রতিবেদন উন্মোচন করে বলেন, ২০২৫ সালে বিশ্ব জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮.২ বিলিয়নে। আর বাংলাদেশে জনসংখ্যা ১৭৫.৭ মিলিয়ন, যার অর্ধেক নারী এবং দুই-তৃতীয়াংশ (১১৫ মিলিয়ন) কর্মক্ষম। এটি ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুফল অর্জনের একটি সুযোগ।

তিনি বলেন, জনসংখ্যার ৭ শতাংশ প্রায় ১.২ কোটি মানুষ ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী, যা বয়স্ক জনগণের সংখ্যা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

তরুণদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ (প্রায় ৩৩ মিলিয়ন) কিশোর-কিশোরী এবং ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণের সংখ্যা প্রায় ৫০ মিলিয়ন যা জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ।

এ বছর প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম হলো- ‘বাস্তবিক প্রজনন সংকট-একটি পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে প্রজনন ব্যবস্থার লক্ষ্য’, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রচলিত ধারণাগুলোর বিষয়ে প্রশ্ন তুলে বলছে যে, প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি জন্ম সংখ্যার নয়, বরং প্রজনন ব্যবস্থার চর্চায় মানুষের সক্ষমতার।

কামকং বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে মানুষ, বিশেষত নারী ও যুবকেরা পদ্ধতিগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে সন্তান জন্মদানের ইচ্ছা পূরণে অক্ষম।

প্রতিবেদনে ইউএনএফপিএ’র বৈশ্বিক জরিপ, একাডেমিক গবেষণা ও বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোর ওপর ভিত্তি করে প্রজনন প্রবণতা ও প্রজনন অধিকার সম্পর্কিত একটি গভীর বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে।

বিশ্বে তুলনামূলকভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রজনন হার ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। সেখানে নারীরা গড়ে মাত্র ০.৮ শিশু জন্ম দিচ্ছে, যা পৃথিবীতে সর্বনিম্ন। অন্যদিকে, আফ্রিকার কিছু দেশে জন্মহার এখনও বেশি। সেখানে গড়ে ৫.৮ শিশু জন্মহার নিয়ে শীর্ষে রয়েছে নাইজার।

বাংলাদেশের মোট প্রজনন হার (টিএফআর) ২.১, যা মধ্যম স্তরে রয়েছে। তবে দেশের কিছু অঞ্চলে এখনও কিশোর বয়সে নারীদের গর্ভধারণের হার বেশি, যা বাল্য বিবাহ, জন্মনিরোধ ব্যবস্থার সীমিত ব্যবহার এবং যৌনশিক্ষার অভাবে হয়ে থাকে।

এই প্রতিবেদনে ১৪টি দেশে প্রজনন আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে দেখানো হয়েছে, বেশিরভাগ ব্যক্তি দুটি সন্তান কামনা করলেও প্রজনন স্বাস্থ্য পরিষেবা সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের সন্তান কম হয়।

আবার অন্যদের তথ্য ও সম্পদের অভাবে পরিকল্পনার চেয়ে বেশি সন্তান হয়।

কামকং বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বেশি হওয়ার উল্লেখ করে বলেন, পর্যাপ্ত আর্থিক সুবিধা না থাকায় অনেকে প্রয়োজনীয় সেবা পায়না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সরকার বর্তমানে জিডিপির ০.৭% এবং সাধারণ বাজেটের ২% স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ করছে। আমরা আশা করি, এটি জিডিপির ৫% এবং সাধারণ বাজেটের ১৫% হবে। কারণ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য স্বাস্থ্য ও সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে ধাত্রীসহ দক্ষ স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও নারীর পছন্দ অনুযায়ী কনট্রাসেপটিভের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করবে।

অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএ কর্মকর্তা, উন্নয়ন অংশীদার, সরকারি প্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here