- সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ১৯৪৯ সালের ৫ই আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
পিতা শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রভাষার জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৪৯ সালের ১৪ই ডিসেম্বর যখন গ্রেফতার হন,শেখ কামাল তখন দু’মাস দশ দিন বয়সের ছোট্ট শিশু। তিনি ১৯৫২ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারি যখন মুক্তি পান, তখন শেখ কামাল অল্প অল্প কথা বলতে শিখেছে মাত্র। কিন্তু বাবাকে সেভাবে দেখেনি এবং চিনতেও পারেনা। এমনই এক সময় বড় বোন শেখ হাসিনাকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করে, ‘হাসু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি?
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এর কাল রাতে শেখ কামাল মাত্র ২৬ বছর বয়সে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও প্রগতিবিরোধী বর্বর ঘাতকদের হাতে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হন শেখ কামাল। অকালেই শাহাদাতবরণ করা এই বীর মুক্তিযোদ্ধা
কর্মময় জীবনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে জাতির স্মৃতিপটে রয়েছেন চির অক্ষয় হয়ে।
শহীদ শেখ কামাল পড়াশোনায় ছিলেন দুর্দান্ত পাশাপাশি খেলাধুলায় ছিলেন খুবই ভালো৷
শেখ কামাল ১১২ সেগুনবাগিচায় অবস্থিত ডন্স কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকে নিজের শিক্ষা জীবন শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে শেখ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭৪ সালে স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষায় অসুস্থাবস্থায় অবতীর্ণ হয়েও তিনি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং ১৪ই আগস্ট কোর্স সমাপনী মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন৷ এবং এ পরীক্ষাতেও তিনি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন।
শেখ কামাল ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগঠক।খেলাধুলায় রয়েছে তার সবচেয়ে বড় অবদান টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকায় আসার পর শৈশবে সেগুনবাগিচা নর্থ-সাউথ রোড ও বিজয় নগরের মাঝের মাঠটিতে খেলধুলা করতেন তিনি।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী
মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠক সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ছায়ানট’-এর সেতার বাদক বিভাগের ছাত্র ছিলেন।তিনি ঢাকা থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন এবং অভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। আবাহনী ক্রীড়াচক্র ও স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। ফাস্ট বোলার শেখ কামাল ফার্স্ট ডিভিশনে ক্রিকেট খেলেছেন আজাদ বয়েজ ক্লাবের হয়ে। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই তিনি ক্রীড়াবিদ সুলতানা কামাল খুকির সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এদেশের পপ সঙ্গীতও তার কাছে চিরঋণী। তার প্রতিষ্ঠিত স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠীর মধ্য দিয়েই ফিরোজ সাঁই,ফেরদৌস ওয়াহিদের মতন শিল্পীরা এসেছেন৷ বস্তুত,বাংলাদেশের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শেখ কামাল ছিলেন পুরোধা ব্যক্তিত্ব!
রাজনীতি শুধুমাত্র ক্ষমতার অপব্যবহার করার জন্যে না,গণমানুষের বন্ধু হয়ে দেশ ও জনগণের জীবনের আমুল পরিবর্তন আনতে পারে ইতিবাচক রাজনীতি৷ শহীদ শেখ কামাল ছিলেন বাবার আদর্শে দেখানো পথের পথিক৷ তিনি বাংলাদেশের মানুষের জন্যে সবসময় ভালো কিছু করার উপায় খুঁজেছেন৷
ক্রীড়া আর সংস্কৃতিকে ভালোবেসে যাওয়া এই মানুষটি দেশ কে এই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চেয়েছেন৷
তার জন্মদিনে আমরা তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি৷
এম এম শাকিলুজ্জামান-
পুলিশ সুপার,রাজবাড়ী।