মোঃ আমিরুল হক : রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ও ইসলামপুরের বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনমানুষ। বাসাবাড়ি, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস সব জায়গায় মশার ব্যাপক উপদ্রব দেখা দিয়েছে। কয়েল কিংবা স্প্রে সব কিছুই মশার কাছে হার মানছে।
ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করেও রেহাই নেই মশার কবল থেকে। এমনকি রমজানে ইফতার, নামাজ ও সেহেরী শান্তিতে করতে পারছেন না মশার উপদ্রবে। বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মরা চন্দনা নদী, বহরপুর ভূমি অফিসের পরিত্যাক্ত পুকুর, রেলওয়ের খাল, বহরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অর্ধ শুকনা পুকুর,
বহরপুর হাটবাজারের অপরিকল্পিত ড্রেনসহ খানা গর্তে জমে থাকা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসির।
জানা গেছে, দীর্ঘদিনের দখল ও দূষণে পানি প্রবাহের নদী, খালগুলি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। এসব জায়গাতেই সমস্ত ময়লা পানি ড্রেনের মাধ্যমে এসে পড়ছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় ময়লা আবর্জনা ফেলে এলাকাবাসী ও বাজার ব্যবসায়ীগণ। ফলে পানিতে ময়লা জমে প্রচুর মশার লাভার জন্ম নিচ্ছে। আর এলাকাবাসী ও বাজার ব্যবসায়ীরা নিয়মিত মশা নিধনের কোন ব্যাবস্থা করছে না। ফলে বেড়ে গেছে মশার উপদ্রব।
ইউনিয়নবাসীদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান, মেম্বাররা দায়িত্ব গ্রহনের পর কয়েকদিন বিভিন্ন এলাকার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার উপর জোর দিয়েছিলেন। তারপর থেকে ইউনিয়নগুলোতে এ ধরনের কোন কাজ আর চোখে পড়েনি। ফলে অপরিস্কার ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে মশা বাড়েই চলেছে।
সরেজমিনে বহরপুর ও ইসলামপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন হাটবাজার ও কয়েকটি গ্রাম এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকায় অধিকাংশ পাড়াতেই আছে ছোট ছোট ডোবা নালা ও বদ্ধ ড্রেন। এসব ডোবা নালার ওপর দিয়ে ঝাকে ঝাকে মশা উড়ছে।
ইসলামপুরের বাড়াদী গ্রামের বাসিন্দা জালাল মোল্লা বলেন, দিন কি বা রাত ঘরে বাইরে সব সময় মশার উপদ্রব বেড়েছে। ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে রাখলেও মশার হাত থেকে রেহায় পাওয়া যাচ্ছে না। এবছর যে ভাবে মশার যন্ত্রনা বেড়েছে এর আগে কখনও এমনটি দেখা যায়নি। কয়েল, ধোয়া কিছু দিয়েই কিছু হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, রাতে মশা আর দিনে মাছির উৎপাত নিয়েই আমরা বসবাস করছি।
গোবিন্দপুরের মোঃ ইদ্রিস আলী বলেন, শুধু কাগজে কলমে আমাদের ১নং ইউনিয়ন। নিয়মতি হাটবাজারগুলোর ড্রেন পরিষ্কার না করা যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার কারনে মশার যন্ত্রনা বেড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মশা নিধন কার্যক্রম না থাকায় মশা চরম আকার ধারণ করেছে।
সুফিয়া খাতুন ও ফারজানা আক্তার নামে আরও দুই বাসিন্দা বলেন, শুধু রাতে না, দিনের বেলায় মশারি ব্যবহার করতে হচ্ছে এসব এলাকায়। চলছে রমজান মাস, মশার যন্ত্রনায় নামাজ, ইফতার, সেহেরী কিছুই শান্তিতে করতে পারছিনা। মেম্বার – চেয়ারম্যানরা ভোটের আগে অনেক কিছুই করবে বলেছিলেন। তিনি এখন মশা মারতেই কাবু। ডিগ্রী কলেজ পাড়ার বাসিন্ধা গোলাম মোস্তফা বলেন, আগে দেখতাম এলাকাগুলোতে কয়েকদিন পর পর মশা নিধনের ওষুধু ছিটাতে। ভাবতাম মফস্বল গুলোতেও আসবে কিন্তু তাদের এখন আর দেখা পাওয়া যায়না।
এ বিষয়ে সামাজিক সংগঠন বহরপুর হেল্প লাইন (অনলাইন গ্রুপ) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুব মহিলা লীগ রাজবাড়ী জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোমানা কবির বলেন, মশা নিধনের অভিযান আমরা হেল্প লাইনের উদ্দ্যোগে শুরু করবো। তবে ধৈর্য ধরতে হবে। একবারে সবকিছু করা যায় না। আমরা পর্যায়ক্রমে কাজ করবো বলে আশা করছি। আমাদের কাছে মশা নিধনের মেশিন নাই। আপাতত মাঠে ঔষধ ছিটানো স্প্রে মেশিন দিয়ে শুরু করবো। এবং মশা নিধনের মেশিন সংগ্রহের চেষ্টা চালাবো। আমরা আশা করছি সরকারের পক্ষ থেকে মেশিন সংক্রান্ত সহযোগিতা পাবো।
তিনি আরও বলেন, আমরা কাজ শুরু করবার পর যেসব এলাকায় মশা বেশি উৎপাত করছে, আমাদেরকে জানালে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করবো ইনশাআল্লাহ।