Monday, May 13, 2024

অস্তিত্ব নেই সাড়ে আট লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত মাতৃমঙ্গল ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের  

বালিয়াকান্দি প্রতিনিধিঃ  কাগজে থাকলেও বাস্তবে নেই। এ বচনটি বাস্তবে রূপ পেয়েছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ১ নং ইসলামপুর ইউনিয়নে। ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মাতৃমঙ্গল, শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও বৃদ্ধ নিবাস নামের তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম ফলক টাঙ্গানো থাকলেও শুধুমাত্র বৃদ্ধ নিবাস রয়েছে। আর এতে একজন বৃদ্ধও বসবাস করে না। থাকে কিছু ছাগল আর নসিমন গাড়ী।

অথচ নাম সম্বলিত মাতৃমঙ্গল ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কোন অস্থিত্ব নেই এখানে। তবে এ প্রতিষ্ঠানের নামে ভূয়া অর্থ বরাদ্দ নিয়েছে প্রকল্পগুলোর নির্ধারিত সভাপতিগণ।

২০১৩-২০১৪ অর্থ বছর থেকে শুরু করে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছর পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠান গুলোর নামে সাড়ে আট লাখ টাকা বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। এ তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে ৫ টি বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়। যার দুইটি বরাদ্দ এলজিএসপি’র।

এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানাগেছে, এলজিএসপি প্রকল্পের অর্থ দিয়ে শুধুমাত্র নাম সম্বলিত প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ব্যয় করা হয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানের কোন অস্থিত্বই নেই এখানে। প্রয়াত চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর মোল্লার সময়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিত্যক্ত ভবনটিতে বসবাস করতেন দরিদ্র, বাস্তহীন মোঃ শাহাদৎ হোসেন, মোঃ মক্কেল প্রামানিকসহ ৩-৪টি পরিবার। আজ তারা সবাই প্রয়াত। চেয়ারম্যান হিসাবে মোঃ আবুল হোসেন খান দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকে সরিয়ে ভবনটি মেরামত করেন। যার জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা। বানানো হয়েছে বৃদ্ধ নিবাস। অথচ থাকে ছাগল আর নছিমন গাড়ী।

প্রকল্পের নাম এবং অর্থ বছরগুলো হলো, এলজিএসপি-২ প্রকল্প অর্থের পরিমাণ ২ লাখ টাকা। অর্থ বরাদ্দের বছর ২০১৩-২০১৪ এবং বাস্তবায়ন বছর ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছর। স্কিমের নাম ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মাতৃমঙ্গল ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দের উন্নয়ন। প্রকল্পটির দায়িত্বে ছিলেন ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য কাজী শহীদুল ইসলাম। এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের ৪৪,৫৮২ টাকা বরাদ্দের বছর ২০১৬-২০১৭, বাস্তবায়ন বছর ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছর। স্কিমের নাম ইসলামপুর ইউনিয়নের মাতৃমঙ্গল ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দরজা, জানালার কাজ। প্রকল্প সভাপতি ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য কাজী শহীদুল ইসলাম। ৭,৮ও ৯নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রেহানা পারভীনকে সভাপতি করে ইউনিয়ন ভুমি হস্তান্তর করের ১℅ থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মাতৃমঙ্গল ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংস্কার নামে ব্যয় দেখানো হয়েছে। একই বছর ইউনিয়নের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩নং ওয়ার্ড সদস্য বিষ্ণুপদ সাহা ও ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য নিভাষ চন্দ্র মজুমদার প্রকল্প সভাপতি দেখিয়ে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বৃদ্ধ নিবাসের বাউন্ডারী নির্মাণ ব্যয় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৬৮ টাকা এবং অপরটিও ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বৃদ্ধ নিবাসের বাউন্ডারী নির্মাণ ২ লাখ টাকা।

এবিষয়ে একজন প্রকল্প সভাপতি নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, আসবাবপত্র ক্রয়কালে কোন বিষয়ই আমার জানা নাই। সব কিছু ক্রয় করেছে চেয়ারম্যান এবং তার পিএস ও তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্দ্যোক্তা মোঃ ইউসুফ আলী। অপরদিকে, ইউসুফ আলীর মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি এ বৃদ্ধ নিবাসের আসবাবপত্র ক্রয় সংক্রান্ত কোনো কিছুই জানিনা।

এ তিনটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে প্রকল্প সভাপতি কাজী শহীদুল ইসলাম বলেন, আমি প্রথম পুরাতন বিল্ডিংয়ের মেরামত কাজের পিআইসি ছিলাম। তখন মাতৃমঙ্গল ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র করে চিকিৎসক দিয়ে সেবা প্রদানের কথা হয়। পরে তৎকালীন চেয়ারম্যান সব বাদ দিয়ে নিজ গতিতে বৃদ্ধ নিবাস তৈরী করেন। তবে আসবাবপত্র ক্রয়ের ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। এ প্রকল্পের পিআইসিকে তাও আমার জানা নেই।

অপর প্রকল্প সভাপতি রেহেনা পারভীন বলেন, আমাকে শুধুমাত্র পুতুলের মতো অবস্থায় রেখেছিল। পুরুষ সদস্য আর চেয়ারম্যান নামে মাত্র প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে রেখেছিল। আমার শুধু চোঁখ বন্ধ করে ফাইল আর রেজুলেশন স্বাক্ষর করা ছাড়া কোন কাজই ছিলো না। আমি একজন নির্বাচিত সদস্য উন্নয়ন আমার কাছেও আশা করে ভোটারগণ। অথচ আমি এদের জন্য কাজ করতে পারি নাই। আর তাই এবারের নির্বাচনে জনগণ আমাকে ভোট দেয়নি।

বিষ্ণুপদ সাহা জানান, আমরা ছিলাম কোন ঠাসা অবস্থায়। চেয়ারম্যান আমাদের যা করতে বলেছেন আমরা তাই করেছি মাত্র।

২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ভূমি হস্তান্তর কর এর ১℅ অর্থ থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকার আসবাবপত্র ক্রয় দেখানো হলে বৃদ্ধ নিবাসে গিয়ে দেখা যায় ১৫ টি চৌকি বাজারে যার মূল্য ১৪০০ টাকা পিস, ছোট বড় ২ টি ব্রেঞ্চ যার বাজার মূল্য হবে প্রতি পিস তিন হাজার টাকা, র‌্যাক ছোট বড় ২ টি যার বাজার মূল্য হবে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা, টেবিল ছোট বড় ২ টি যার বাজার মূল্য হবে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা ও ৬টি সিলিং ফ্যান যার বাজার মূল্য প্রতি পিস ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা। যে আসবাবপত্র বর্তমানে বৃদ্ধ নিবাসে রয়েছে তার সর্বোচ্চ মূল্য হবে ৬০ হাজার টাকা।

এ বিষয় ইউনিয়ন সচিব মোঃ মনিরুজমান রানার সাথে কথা হলে তিনি আজ কাল করে করে কালক্ষেপন করতে থাকেন। তিনি আরও বলেন, এটা যে কোন ফাইলে আছে তা আমার জানা নাই। আমি অনেক ব্যস্ত আছি কয়েকদিন পরে আসেন। বৃদ্ধ নিবাসে কি কি ক্রয় করা হয়েছে তার সব কিছু আমার বলা সম্ভব নয়। আর এর তথ্যও আমার কাছে নেই।

ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহম্মদ আলী মাস্টার বলেন, আমি নির্বাচিত হয়ে মাত্র কিছুদিন দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। সব কিছু জেনে বুঝে নেওয়া সম্ভব হয়নি আমার। তবে আমি অবশ্যই বিষয়টা খতিয়ে দেখবো। যদি অসঙ্গতি চোঁখে পড়ে তাহলে নিশ্চয়ই আইনের আশ্রয় নেব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ হাসিবুল হাসান বলেন, আমি বৃদ্ধ নিবাস আছে সেটা জানি। তবে অন্য দু,টি প্রতিষ্ঠান আছে কিনা জানি না। খোঁজখবর নিয়ে দেখবো।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here