নেহাল আহমেদ,রাজবাড়ী: তপ্ত আবহাওয়ায় শরীর শীতল রাখতে গ্রীষ্মের বিভিন্ন ফলের জুড়ি নেই। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রসালো তালশাঁস।
অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, ভিটামিন, ফাইবার এবং খনিজ উপাদান তালের শাঁসে।মিষ্টি স্বাদের মোহনীয় গন্ধে ভরা প্রতি ১০০ গ্রাম তালের শাঁসে রয়েছে ৮৭ কিলো ক্যালরি, ৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, জলীয় অংশ ৮৭.৬ গ্রাম, আমিষ ৮ গ্রাম, ফ্যাট ১ গ্রাম, কার্বো হাইড্রেট ১০.৯ গ্রাম, খাদ্যআঁশ ১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১ মিলিগ্রাম, থায়ামিন .০৪ গ্রাম, রিবোফ্লাভিন ০২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম। এসব উপাদান আপনার শরীরকে নানা রোগ থেকে রক্ষা করাসহ রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
রাজবাড়ীর বিভিন্ন জায়গায়র এখন পাওয়া যাচ্ছে রসে ভরা তালের শাঁস।তাল গাছ যেন কল্পতরু। তালের রস থেকে গাছের রস, এমনকি তালের শাঁসটুকুও দিয়ে দেয় উদারহস্তে। চিঁড়েচ্যাপটা গরমের ভ্যাপসা ভাব থেকে একটু মুক্তির জন্য বাজারে গিয়ে তাল শাঁসের খোঁজ করেন না এমন লোকের সংখ্যা নেই বললেই চলে। তার উপর সামনেই আবার উৎসবের ভরা মরশুম। আর এই উৎসবের দিনে তালকে কেন্দ্র করে একটা বিরাট ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড দেশ জুড়ে। বিশেষত তাল শাঁসের ডিম্যান্ড থাকে চরমে। কাজেই এই সময়টায় বাজার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তালের শাঁস। তাল পারা থেকে শুরু করে তালের শাঁস বিক্রি, এবং এই কাজের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি মানুষের জীবন-জীবিকার কাহিনী উঠে এসেছে আমাদের প্রতিবেদনে। রাধাঁ নগর গ্রামের তাল শাঁস বিক্রেতা আবেল বৈরাগী জানান, প্রতি বছর মধু মাসে রাজবাড়ীর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে তাল কেনেন। পরে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন স্থানে তা বিক্রি করেন। প্রতি বছরই এ সময় তালের শাঁস বিক্রি করে সংসার চালান।
বৈশাখ মাস থেকে জ্যৈষ্ঠের অর্ধেক সময় পর্যন্ত চলবে তালের শাঁস বিক্রি। তবে এবারে ফলন কম হওয়ায় দাম কিছুটা বাড়তি বলেও জানান তিনি।
অপর বিক্রেতা রামকান্তপুরের অনু সরদার জানান, এক একটি তাল গাছ ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় সিজন হিসেবে কেনেন। পরে সেই তাল গাছ থেকে তাল সংগ্রহ করে ভ্যানযোগে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বিক্রি করেন। ভালো ফলন হলে সেই গাছের তাল বিক্রি করে দুই থেকে চার হাজার টাকা আয় করা যায়।এর মধ্য ভ্যান ভাড়া দেড়শ টাকা এবং সাগরেদ কে সাড়ে তিনশ টাকা দিতে হয়।নিজেদের কিছু খরচ হয়।
বছরে দেড় থেকে দু’মাস তাল শাঁসের কাজ হয়। তাল কেটে দৈনিক ১৫০০ টাকা মত রোজগার হয় তাদের। সোহেল মিয়া কলেজে পড়াশোনা করেন অবসর সময়ে এই সময়টুকুই আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে এই কাজ করেন।। গোটা বছরের হাত খরজের সঞ্চয় বলতে যা বোঝায়, তা এই সময়টাতেই কাজ করে জোগাড় করেন।
আগের চেয়ে তাল গাছের সংখ্যা এখন বেশ কম। চাষের জমিতে তাল গাছের পাতা পরে বলে, অনেক তাল গাছ কেটে ফেলা হয়েছে ইতিমধ্যেই। তাই রাজবাড়ীর জেলার যেই জায়গাগুলোতে সারি বাঁধা তাল গাছ নজরে আসত, সেই জায়গাগুলোতে এখন গাছের চাপ অনেকটাই কম। কাজেই রোজগার কমেছে, এই কাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের। যদিও কিছু কিছু অঞ্চলে তাল গাছের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তারা তালের শাঁস বিক্রি করে দিন বাড়তি কিছু রোজগার করেন।