রাজবাড়ী প্রতিনিধি: রাজবাড়ী’র রাবেয়া ক্লিনিকে অপারেশনের পর ডাক্তারের অবহেলায় সোনালী নামে(২৬) নামে এক প্রসূতি’র মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত সোনালী রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহের মহিষবাতান এলাকার রাশেদের স্ত্রী।
এ ঘটনায় রোগীর স্বজনেরা পরদিন ১লা নভেম্বর (শুক্রবার) সকালে ক্লিনিকে ভাংচুর চালিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজবাড়ী সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে দেখা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়ে গছে মালিক পক্ষ। জানাগেছে, ৩১শে অক্টোবর বিকেলে রাবেয়া ক্লিনিকে দ্বিতীয় সন্তান প্রসবের জন্য ভর্তি করানো হয় রাশেদের স্ত্রী সোনালীকে ।
সোনালী’র বাবা আমিন শেখ জানান, বিকেলে ভর্তি করার পর রাত ১০ টার দিকে সিজার অপারেশন করেন ডাক্তার শাহনিমা নার্গিস । অপারশনের পর আমার মেয়েকে বেডিং এ দিয়ে যায়। পরে অবস্থা খারাপ হলে তারা জানায় রক্ত লাগবে । তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। এরপর আমার মেয়ের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকে । পরে ক্লিনিকের লোকজনই রাতে রাজবাড়ী ক্লিনিকের এম্বুলেঞ্চ এনে বলে আপনার মেয়েকে ফরিদপুর নিয়ে যেতে হবে । তখন ডাক্তার বলে শ্বাস কষ্ট হইছে ফরিদপুর নিয়ে যান।
পরে রাত আড়াইটার দিকে ফরিদপুর নিয়ে গেলে মেয়েকে অক্সিজেন দেওয়া হয় ফজরের আজানের সময় মেয়ে মারা যায়।
রাবেয়া ক্লিনিকের গাঈনী ডাক্তারের অবহেলায়ই আমার মেয়ে মারা গেছে বলে দাবী করেন নিহতের বাবা আমিন শেখ। থানায় সাধারণ ডায়রী করেছেন বলে জানান তিনি। ‘
নিহতের স্বামী রাশেদ জানান, আমি টাঙ্গাইলে বাংলালিংক এর কোম্পানীতে চাকুরি করি। আমার স্ত্রীর আগে একটা মেয়ে সন্তান নাম রাইসা। রাইসার বয়স পাচ বছর । মাদ্রাসায় পড়ে। দ্বিতীয় সন্তানের জন্য রাবেয়া ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। অপারেশনের আগে আমার স্ত্রী বলে একটা রোগীর অপারেশন শেষ হলেই আমার অপারেশন হবে । এরপর যখন অপারেশনের সময় হয় , তখন আমার স্ত্রী হেটেই অপারেশনের রুমে যায়। সুস্থ্য মানুষ ছিলো ,কোন সমস্যা ছিলো না। অপারেশনের পর মেয়ে বেচে থাকলো কিন্তু তার মা বেচে নেই। আপসোস করে বলেন, আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে, আমি কার কাছে অভিযোগ করব ।
রাশেদের পিতা নাজিম জানান, আমার বলার ভাষা নেই । আমার ছেলে-বউ খুব সুখী জীবন যাপন করত। আজকে কি হলো,আমার ভাষা নেই। সারারত ঘুমাতে পারিনি।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর হাঁসপাতালের গাঈনী চিকিৎসক শাহনিমা নার্গিস বলেন, রোগীর অপারেশনের পর শ্বাস কষ্ট দেখাদেয়। রক্ত প্রয়োজন ছিল। তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। রোগী অপারেশনের পর বমি করে দেয়। ধারণা করছি হয়তো অপারেশনের আগে রোগী কিছু খেয়েছিলো। অক্সিজেন দেওয়ার পর রোগীর মুখ দিয়ে খাবার চলে আসে আর সেটা ফুসফুসে ঢুকে যায়। পরে বাধ্য হয়েই আমরা ফরিদপুরে পাঠিয়েছি।
আমরা স্থানীয় ভাবে অনেক চেষ্টা করেছি। তাছাড়া ক্লিনিকে রোগীর একটু খারাপ অবস্থা হলে মেনেজমেন্ট ব্যাবস্থা তেমন নেই। রাবেয়া ক্লিনিকে ওয়ার্ডবয়,আয়া ,দক্ষ নার্স তেমন নেই,বাইরের ক্লিনিক থেকে নার্স এনে ,ডাক্তার এনে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করেছি ,পরে ফরিদপুরে পাঠাই। দেখানেও আমি ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ডাক্তারের সাথে কথা বলি। কিন্তু হায়াতের মালিক আল্লাহ। আমরা চেষ্টা করেছি অনেক । শুনেছি রোগীটা মারা গেছে। আমার কাছে খুব খারাপ লেগেছে। আসলে রাজবাড়ীতে শুধু রাবেয়া ক্লিনিকে-ই-না অন্যান্য সব ক্লিনিকের কোনটাতেও নেই ইমারজেন্সি মেডিক্যাল ডাক্তার, ডিপ্লোমা ডাক্তার,নার্স। এরকম হলে আমাদের অপারেশন করা কঠিন হয়ে যাবে। আমরা অপারেশন করা বাদ দিলে রোগীরা সেবা পাবেনা। রাজবাড়ী সদর হাঁসপাতালে অপারেশন হয় খুব কম। পরে রোগীদের অনেক টাকা-পয়সা খরচ বাইরের জেলা থেকে অপারেশ করতে হবে। ‘
এ বিষয়ে রাবেয়া ক্লিনিকের মালিক আব্দুর রাজ্জাক লিটনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায় নি।’
ভিডিও রিপোর্ট: YouTube: RAJBARI JOURNAL