Monday, November 18, 2024

রাজবাড়ী মুক্ত দিবস আজ

নেহাল আহমেদ,রাজবাড়ী: সারা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দে ভাসছে তখনো রাজবাড়ীতে যুদ্ধ হচ্ছে। রাজবাড়ীতে বিহারীদের অত্যাচার ছিল ভয়াবহ।তারা কিছুতেই পরাজয় স্বীকার করে নিতে চাচ্ছিল না। রাজবাড়ী মূলত রেলওয়ের শহর হিসেবে পরিচিত। রেলের শহরের সুবাদে এ শহরে ১৫ থেকে ২০ হাজার বিহারি বসবাস করত। শহরের নিউ কলোনি, আঠাশ কলোনি, স্টেশন কলোনি ও লোকোশেড কলোনি এলাকায় ছিল তাদের বসবাস। আর এ কারণেই রাজবাড়ীতে পাকিস্তান আমলে বিহারিদের খুব দাপট ছিল। বিপরীতে বাঙালিরা ছিল অসহায়। ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের এক দিন পর রাজবাড়ীর পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা অস্ত্রসমর্পণ করে ১৮ ডিসেম্বর।

পুরো রেলটাই ছিল তখন বিহারিদের দখলে। পাকিস্তানি বাহিনী রাজবাড়ীতে প্রবেশের পর বিহারিরা তাদের সঙ্গে যোগসাজশে নির্বিচারে চালাতে থাকে জ্বালাও-পোড়াও এবং গণহত্যা, অবশেষে দেশ স্বাধীন হলেও রাজবাড়ী স্বাধীন হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার দুই দিন পর শত্রুমুক্ত হয় রাজবাড়ী। রাজবাড়ীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো।

রাজবাড়ীর বিভিন্ন স্থানে আটটি গ্রুপ মুক্তিযুদ্ধ করতে থাকে। পরে পাংশা ও যশোর থেকে আরো কয়েকটি গ্রুপ এসে যুদ্ধে অংশ নেয়। এখানে মুক্তিবাহিনী, বিহারি, পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের সঙ্গে তুমল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ জন্যই সারা দেশ যখন ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় অথচ রাজবাড়ী স্বাধীন হয়, তারও দুই দিন পর ১৮ ডিসেম্বর। এ দিন পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে ফকির মহিউদ্দিন শহীদ হন। এ ছাড়া ওই দিন সকালে একাধিক শিশু যুবক ও বৃদ্ধকে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

১৯৭১ সালে সৈয়দ খামারীর নেতৃত্বে রাজবাড়ীর অনেক মানুষকে হত্যার পর লোকৌসেড রেল কলোনির কূপে ফেলা হতো। পাশেই থাকা বর্তমান এতিমখানা ওই সময় এটি ছিল বিহারিদের গণহত্যার একটি নির্দিষ্ট স্থান।

যুদ্ধকালীন কমান্ডার মো. আবুল হাসেম বাকাউল জানান, রাজবাড়ীতে বিহারিরা ৬ ডিসেম্বরের পর থেকে অতিমাত্রায় তৎপর হয় ওঠে এবং পুরো শহর দখল করে রাখে। ৯ ডিসেম্বর শহরের লক্ষ্মীকোল এলাকায় বিহারিদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষ হয়। ওই দিন বিহারিদের গুলিতে রফিক, শফিক ও সাদিক শহীদ হয়। ১৩ ডিসেম্বর বিহারিরা বিনোদপুর বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রহরীকে হত্যা করে। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করলেও রাজবাড়ী শহর তখনো বিহারিদের কবল থেকে মুক্ত হয়নি। তারপর একে একে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিবাহিনী এসে জেলা শহরে সংগঠিত হয়। মো. শহীদন-নবী আলম, ফকীর আবদুর জব্বার, মো. ইলিয়াস মিয়া, মো. সিরাজ আহম্মেদ, মো. আবুল হাসেম বাকাউল, কামরুল হাসান লালী, শহীদুন-নবী আলম, আবদুল মোতালেব হিরু, সিরাজ আহাম্মেদ ও জলিল মাস্টার তাদের কমান্ডে মুক্তিযোদ্ধারা বিহারি কলোনিগুলো ঘিরে রাখে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল জলিল জানান, ১৭ ডিসেম্বর বিহারি ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করা হয় ১৪ জন মেয়েকে, তারা কোনো ক্রমেই আত্মসমর্পণ করতে চায় না। তারা বলেছিল, হামরা লোরকে মরেগা। তাদের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ শুরু। এতে অধিক আংশ পুরুষ মারা যায়। অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর বেলা ১টায় কয়েক হাজার বিহারি আত্মসমর্পণ করে, যাদের মধ্যে অধিকাংশ ছিল মহিলা। রাজবাড়ীতে ওই সময়ই ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা।

মুক্তিযোদ্ধা ফকির আবদুল জব্বার জানান, শহরের বিনোদপুর লোকোসেড এলাকায় নির্মিত স্মৃতির বধ্যভূমি যখন নির্মাণ করা হয়। রাজবাড়ী জেলায় ৩৭৯ মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন এবং রাজবাড়ীতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে ৩৫ জন। মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, অবিলম্বে দেশের সব যুদ্ধাপরাধীকে যেন আইনের আওতায় এনে বিচার করা হয় এবং ফাঁসি দেওয়া হয়।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here