Friday, January 3, 2025

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে আকস্মিক অভিযান, অসন্তোষ দুদক

স্টাফ রিপোর্টার:  রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে আকস্মিক অভিযান পরিচালনা করেছে (দুর্নীতি দমন কমিশন) দুদক । মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করা হয় ।

সম্প্রতি রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রোগীদের অভিযোগ, তালিকা অনুযায়ী দেয়া হয়না খাবার। যা দেয়া হয় তা নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম এবং নিম্নমানের। রয়েছে খাবার না পাওয়ার অভিযোগও। খাবারের পাশাপাশি ওষুধ সরবরাহেও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে প্রতিদিন রোগীদের খাবারের জন্য বরাদ্দ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা। ভর্তি থাকা রোগীদের প্রতিদিন সকালের নাস্তার পাশাপাশি দেয়ার কথা দুপুর ও রাতের খাবার। চারদিন দেয়ার কথা খাসি ও মুরগির মাংস আর তিনদিন রুই অথবা কাতল মাছ। অথচ মাংসতো দূরের কথা, বেশিরভাগ দিনই দেয়া হয় পঙ্গাস মাছ, তাও নামেমাত্র। যা খেতে আপত্তি বেশিরভাগ রোগীর। দরপত্রের তালিকায় পোলাও, দুধ, মিষ্টিসহ অন্যান্য খাবার দেয়ার কথা থাকলেও সবই কাগজে কলমে। রয়েছে খাবার না পাওয়ারও অভিযোগ।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে হাসপাতালে দুর্নীতি দমন কমিশনের আকস্মিক (দুদক) অভিযানে খাবার ও ওষুধ সরবরাহে অনিয়মসহ নানা অব্যবস্থাপনার সত্যতা মিলেছে। আর অনিয়মের দায় স্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

দুপুরে পৌনে ১ টার দিকে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ফরিদপুর থেকে আসা টিম গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে প্রথমে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের রান্নাঘরে অভিযান চালায়। সেসময় দেখা যায় রোগীদের জন্য রান্না করা হচ্ছে দুপুর আর রাতের খাবার। তবে ৮১ জন রোগীর দুবেলা খাবারের জন্য যে পরিমাণ সবজি আর ডাল রান্না করা হয়েছে তা দেখে চোখ কপালে ওঠে দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদেরও। মাঝারি আকৃতির এক কড়াই সবজি আর ১০ লিটারেরও কম পরিমাণ ডাল ৮১ জন রোগীকে খাওয়ানো হবে দু্বেলা। মাংসের পরিমাণও দেয়া হয়েছে বরাদ্দের প্রায় অর্ধেক। ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম ধরা হয়েছে ৩৯০ টাকা কেজি।

তাৎক্ষণিক সেখানে উপস্থিন হন হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. শেখ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান। এরপর তত্বাবধায়ককে সঙ্গে নিয়েই ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন দুদক টিম। রোগীরা খাবার ও ওষুধ না পাওয়াসহ নানা অভিযোগ করেন দুদক টিমের কাছে।

সেসময় দুদকের এক কর্মকর্তা তত্বাবধায়কে জানান, তাদের অনুসন্ধানে হাসপাতালের নার্সদের ওষুধ পাচারের মতো গুরুতর অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। যার ভিডিও ফুটেজ আছে তাদের কাছে।

পরে হাসপাতাল ঘুরে অস্বাস্থ্যকর আর নোংরা পরিবেশ দেখে অসোন্তষ প্রকাশ করেন দুদক টিম।

হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী ৭৫ বয়সী মো. শুকুর আলী বলেন, সরকার ওষুধ ও খাবার বাবদ আমাদের জন্য যে বরাদ্দ দেয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা আমাদের দেয়না। দামি দামি সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনে এনে খেতে হয়। খাবার যা দেয় তা খাওয়া যায়না। পাঙ্গাস মাছ আর মাঝে মাঝে ব্রয়লার মুরগির পাতলা ঝোল দেয়। ভাত দেয় গোডাউনের মোটা চালের।

আরেক বৃদ্ধ রোগী মোতালেব হোসেন বলেন, হাসপাতাল থেকে যে খাবার দেয় তা খাওয়া যায়না। এ খাবার খেয়ে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে যায়। দুর্গন্ধে টয়লেটে যাওয়া যায়না।

মো. ছাত্তার আলী খান নামে আরেক রোগী বলেন, আমি তিনদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখনো হাসপাতাল থেকে কোন খাবার পাইনি। বাড়ি থেকে খাবার এনে তারপর খাই। মাঝে মাঝে দোকান থেকে কিনে খাই। আমার মতো অনেক রোগীকেই হাসপাতাল থেকে খাবার দেওয়া হয়না।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় ফরিদপুরের উপ-পরিচালক রতন কুমার দাস বলেন, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানকালে আমরা পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ না করার সত্যতা পেয়েছি। ডায়েট চার্ট অনুযায়ী আজকে এই হাসপাতালে ১৬ কেজি মাংস সরবরাহ করার কথা, কিন্তু আমরা ১০ কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংস পেয়েছি। পরিবেশ খুবই নোংরা পেয়েছি। এছাড়া রোগীর চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহ না করারও সত্যতা পেয়েছি। এ ব্যাপারে আমরা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিশনকে অবহিত করবো।

দুদক টিমের সামনেই অনিয়মের দায় স্বীকার করে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. শেখ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বলেন, দুদকের টিম হাসপাতালের রান্না ঘরে গিয়ে মাংসের পরিমাণ কম পেয়েছেন। বাস্তবে মাংস আমিও একটু কম দেখেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা হয়তো ঠিকাদার কম দিয়েছেন অথবা হাসপাতাল থেকে যারা নিয়েছেন তারা হয়তো মেপে নেননি। আর আমাদের নার্সরা তাদের নিজের জন্য অথবা পরিবারের অসুস্থ্য সদস্যদের জন্য ওষুধ নিয়ে থাকেন। তাদের প্রতি আমার নির্দেশনা ছিল তারা যেন ডাক্তার দেখিয়ে প্রেসক্রিপশন করে তারপর ওষুধ নেন। তারপরও বিষয়টি যেহেতু দুদকের নজড়ে এসেছে, নার্সরা আমার নির্দেশনা অমান্য করে ওষুধ নিয়েছেন। আমি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

হাসপাতালের নোংরা পরিবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকেন ২০০ জনের ওপরে। পাশাপাশি আউটডোরে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ৯০০ রোগী সেবা নেন। এদের সাথে আরও প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার লোক প্রতিদিন হাসপাতালে আসা যাওয়া করেন। তারা বাথরুম ব্যবহার করেন এবং তাদের অন্যান্য পদচারনার কারণে হাসপাতাল পরিস্কার রাখা খুবই কঠিন। তারপরও আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় ফরিদপুরের উপ-পরিচালক রতন কুমার দাসের নেতৃত্বে অভিযানে এ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, উপ-সহকারী পরিচালক ইমরান আকন, সহকারী পরিদর্শক মো. শামীমসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।’

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here