নেহাল আহমেদ: শরৎ বাংলার ঋতু পরিক্রমায় সবচেয়ে মোহনীয় ঋতু। মেঘমুক্ত আকাশ থেকে কল্প কথার জীন পরীরা ডানা মেলে নেমে আসে পৃথিবীতে। শরতের জ্যোৎস্নার বাংলার মোহিত রূপ নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যায় না ।
আপনি কি খেয়াল করেছেন আজ ?
ভোরের বাতাস টা আজ একটু অন্য রকম। সকালের রোদটা একটু মিষ্টি। আকাশটা একটু বেশী শুভ্র। চারপাশটা টা একটা পুজা পূজা ভাব। প্রিয়জন কে দেখার জন্য মনটা একটু বেশী উৎলা। হা ঋতু – পরিক্রমায় সবচেয়ে মোহনীয় ঋতু শরৎ ঋতু ।শিমুল তুলোর মতো ভেসে চলে সাদা মেঘের খেয়া।চারদিকে সজীব গাছপালার ওপর বয়ে যায় শেফালি ফুলের গন্ধভরা ফূরফুরে মিষ্টি হাওয়া।শিউলি তলায় হালকা শিশিরে ভেজা দূর্বাঘাসের ওপর চাদরের মত বিছিয়ে থাকে সাদা আর জাফরন রং মেশানো রাশি রাশি শিউলি ফুল। কাশফুলের মনোরম দৃশ্য থেকে সত্যিই চোখ ফেরানো যায় না শরৎ বাংলাদেশের কোমল,স্নিগ্ধ এক ঋতু ।শরৎঋতুর রয়েছে স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য ।বাংলাদেশের ছয়টি ঋতু ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন রূপের পসরা নিয়ে হাজির হয় ।এক-এক ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন ফুলে ও ফলে , ফসলে ও সৌন্দর্যে সেজে ওঠে বাংলাদেশ।বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর আর কোন দেশের প্রকৃতিতে ঋতুবৈচিত্র্যর এমন রূপ বোধ হয় নেই ।বর্ষাকন্যা অশ্রুসজল চোখে বিদায় নেয় শ্রাবণে।ভাদ্রের চোখে সূর্য মিষ্টি আলোর স্পর্শ নিয়ে প্রকৃতির কানে কানে ঘোষণা করে শরতের আগমন বার্তা । ঝকঝকে নীল আকাশে শুভ্র মেঘ, ফুলের শোভা আর শস্যের শ্যামলতায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে শরৎ ।শরতের সৌন্দর্য বাংলার প্রকৃতিকে করে রূপময়।।আকাশের উজ্জ্বল নীলিমার প্রান্ত ছুঁয়ে মালার মত উড়ে যায় পাখির ঝাঁক। । ভরা নদীর বুকে পাল তুলে পালবোঝাই নৌকা চলে যায়।ডিঙি নাও বইতে বইতে কোনো মাঝি হয়তো–বা গেয়ে ওঠে ভাটিয়ালি গান। পুকুরপাড়ে আমগাছের ডালে মাছরাঙা ধ্যান করে।স্বচ্ছ জলে পুঁটি,চান্দা বা খলসে মাছের রূপালি শরীর ভেসে উঠলে সে ছোঁ মেরে তুলে নেবে তার লম্বা ঠোঁটে। নদীর চরে চখাচখি পানকৌড়ি, বালিহাঁস বা খঞ্জনা পাখির ডাক।কলসি কাঁথে মেঠো পথে হেঁটে চলে গাঁয়ের বধূ।ফসলের খেতে অমিত সম্ভাবনা কৃষকের চোখে স্বপ্নে ছাওয়া সবুজ ধানক্ষেতটা একবার চেয়ে দেখে কৃষক। বিলের জলে নক্ষত্রের মতো ফুটে থাকে সাদা ও লাল শাপলা।সকালের হালকা কুয়াশায় সেই শাপলা এক স্বপ্নিল দৃশ্যের আভাস আনে।আলো চিকচিক বিলের জলে ফুটে ওঠে প্রকৃতির অপর লীলা ।নীল আকাশের সাদা মেঘের ভেলা আর নদীতীরে সাদা কাশফূল,ভোরে হালকা শিউলিভেজা শিউলিফুল সব মিলিয়ে শরৎ যেন শুভ্রতার ঋতু।শরৎকালে রাতের বেলায় জ্যোৎস্নার রূপ অপরূপ । মেঘমুক্ত আকাশ থেকে কল্প কথার পরীরা ডানা মেলে নেমে আসে পৃথিবীতে।শরতের জ্যোৎস্নার মোহিত রূপ নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যায় না ।
শুধু স্বপ্ন গুলো অবারিত সবুজ মাঠের বুক চিরে বয়ে যায় দূরে-বহু দূরে।শরতের ফুলগুলো প্রকৃতিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। এ সময়নদীর কিনারে বালির চরে হেসে ওঠে কাশবন। শুধু কাশবনই নয়, শরতে ফুলে ফুলে সেজে উঠেছে গোটা প্রকৃতি। এ প্রকৃতিতে শাপলা, শালুক, পদ্ম, জুঁই, কেয়া, কাশফুল, শিউলি, জবা, কামিনি, মালতি, মলিকা, মাধবী, ছাতিম ফুল, বরই ফুল ও দোলনচাঁপা, বেলি, জারুল, নয়নতারা, ধুতরা, ঝিঙে, জয়ন্ত্রী, শ্বেতকাঝন, রাধুচূড়া, স্থলপদ্মা, বোগেনভেলিয়াসহ নানা রকমের কত ফুলে হেসে ওঠে গ্রামবাংলার রূপ। সত্যি শরতের প্রকৃতি বড়ই বৈচিত্র্যময়, লাবণ্যময়ী।শরৎ যেন যৌবনের প্রথম প্রেম।
নেহাল আহমেদ। লেখক – কবি ও সাংবাদিক