ঢাকা: রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে শ্রদ্ধা ভালোবাসায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো বনানী কবরস্থানে শেখ কামালের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত, স্মারক ডাকটিকিট এবং উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত এবং আলোচনা সভাসহ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করে।
রাজধানীর বনানী কবরস্থানে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শেখ কামালের সমাধিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে ওবায়দুল কাদের দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ কামালের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এসময় ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ কামালের জন্মদিনে আবাহনী মাঠে ও বনানী কবরস্থানে এত মানুষ, এত তরুণের সমাবেশ প্রমাণ করে যে হত্যা, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি আমরা রুখতে আমরা প্রস্তুত আছি। এটা আমাদের শপথ। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, জন্মদিনের আনন্দ হারিয়ে গেছে পঁচাত্তরের রক্তাক্ত বিদায়ের মাধ্যমে। শহীদ শেখ কামালের কাছে বাংলাদেশের তরুণ সমাজের অনেক কিছু শেখার আছে। তিনি বহুমাত্রিক প্রতিভা ও মেধার অধিকারী ছিলেন।
এ সময়ে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়াসহ আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে তারা ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করেন। পরে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এরপর একে-একে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এর আগে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো সকাল ৮টায় ধানমন্ডির আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে এদিন সকালে টুঙ্গীপাড়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে টুঙ্গীপাড়া ও কোটালিপাড়া উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ফলমূল, শাক-সবজী ও সরিষা বীজ বিতরণ করে আওয়ামী লীগ-এর ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শহীদ শেখ কামালকে দুষ্কৃতিকারীরা হত্যা করলেও তার স্বল্প বয়সের কর্মের মাধ্যমেই যুগ যুগ ধরে, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন তিনি আমাদের মাঝে জাগরূক থাকবেন। এই অল্প বয়সের মধ্যেই যে প্রতিভা ও সাংগঠনিক দক্ষতার স্বাক্ষর তিনি রেখেছিলেন, তাতে আমি মনে করি তিনি বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ আরো অনেক উপকৃত হতো।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) উদ্যোগে আজ বাদ জুমা (দুপুর দেড়টা) বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। জুমার নামাজ শেষে শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমীন।
দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরস্থ ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব:) ফারুক খান এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপকমিটি এ উপলক্ষে বিকালে টিএসসি অডিটেরিয়ামে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক । এ ছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ।
এদিকে জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১০ টাকা মূল্যমানের স্মারক ডাকটিকিট এবং ১০ টাকা মুল্যমানের উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করে ডাক অধিদপ্তর। এ ছাড়া ৫ টাকা মূল্যমানের ডাটাকার্ড ও একটি বিশেষ সীলমোহর প্রকাশ করা হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আজ তার সরকারি বাসভবন থেকে স্মারক ডাক টিকিট ও উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করেন এবং ডাটা কার্ড ও বিশেষ সীলমোহর উনমুক্ত করেন।
শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ১৯৪৯ সালের এই দিনে তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী শহীদ শেখ কামাল শাহীন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে বি এ (অনার্স) পাস করেন। বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনের শিক্ষার অন্যতম উৎসবমুখর ‘ছায়ানট’-এর সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন।
তিনি শুধু উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন, বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতাই ছিলেন না, ছিলেন ঢাকা থিয়েটারেরও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। শৈশব থেকে খেলাধূলায়ও প্রবল উৎসাহ ছিল তার। শেখ কামাল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন্ড লাভ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানির এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
স্বাধীনতার পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এবং শাহাদাত বরণের সময় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন জাতীয় ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার নির্মম ঘটনায় মাত্র ২৬ বছর বয়সে শাহাদাতবরণ করেন তিনি।
সুত্রঃবাসস