নেহাল আহমেদ: দেবী দুর্গার কাহিনিগুলির মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় মহিষাসুর বধের কাহিনিটি।আমাদের দেশে সুপ্রাচীনকাল থেকে ধর্মীয় উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগিতে জাতি-ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে শামিল হওয়ার ঐতিহ্য রয়েছে। এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ঈদ, পূজা, বড়দিন ও বৌদ্ধ পূর্ণিমার ধর্মীয় আচার ভিন্ন হলেও উৎসবের আনন্দ এক ও অভিন্ন। দুর্গাপূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলেও কালের পরিক্রমায় আজ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বিপুলসংখ্যক বাঙালির উৎসবে পরিণত হয়েছে।
শৈশবে আমার অধিকাংশ বন্ধু ছিলো হিন্দু।আমার ক্লাসের বন্ধু, পাড়াপ্রতিবেশীরা সংখ্যায় বেশী থাকার কারনে তাদের ধর্ম সাংস্কৃতির সাথে আমার জানাশোনা বেশ ছিলো।শৈশবের পুজার সাথে এখনকার পুজা কেন যেন মনে হয় পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। হতে পারে সেটা কর্পোরেট যুগের কারনে।সেকাল থেকে একালে বারোয়ারি/সর্বজনীন দুর্গোপুজোয় যে শুধু একটা রূপান্তর এসেছে।
এখনকার বড় পুজো মানেই প্যাণ্ডেলের কারুকার্যে, লাইটিং-এর জাঁকজমকে প্রতিমার রূপ সজ্জায় একে অপরের টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা। ঢুকেছে রাজনীতির নানা প্যাঁচ পয়জারও। এখন গ্রামে সেই সব আবহমান বাংলার ঐতিহ্য সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আর তেমন চোখে পড়ে না। সবখানে যেন এক কৃত্রিমতার ছোঁয়া। পরস্পরের আন্তরিকতার সেই দিনগুলো যেন সদূর অতীত।
সাউন্ড সিস্টেমের বেড়াজালে আবদ্ধ পূজা মণ্ডপ এখন গ্রামবাংলার সেই ঐতিহ্যকে ধারণ করছে না। উন্মাতাল নৃত্য, আর এক ধরনের ভিনদেশী জৌলুস পূজাকে ঘিরে ধরেছে। পূজা মানে বিশ্বাস ও ঈশ্বরের আরাধনা।
শারদীয় দুর্গোৎসব আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরই অংশ। কোনো কোনো জায়গায় এখনো এসব অপসংস্কৃতির ঢেউ আঁচড়ে পড়েনি। কিছু জায়গায় এখনো ঐসব ঐতিহ্যের কিছু কিছু দেখা মেলে। তা দেখে ভালোই লাগে।
সমাজ থেকে সকল অপশক্তি, অসুর শক্তি ও দুর্গতি বিনাশ করে সম্প্রীতি এবং মানব জাতির কল্যাণই বয়ে আনুক শারদীয় দুর্গাপূজা।
আগে পুজা মানেই পুজার বিশেষ সংখ্যা। কবি লেখক দের বিশেষ লেখা গুলো পাওয়া যেত।বিভিন্ন গান মুক্তি পেতো পুজা উপলক্ষে সেই সব হৃদয়গ্রাহী গানের পরিবর্তে মন্দিরে এখন হেভি মেটাল সাউন্ড শোনা যায়।কোথায় যেন হারিয়ে গেছে ধুনুচী নাচ,বিচার গান, কবিগান।যাত্রাপালার সেই সব মঞ্চ।
কলকাতার দুর্গাপুজোর মধ্যে আছে দীর্ঘ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। যে কারণেই এটিকে ইউনেসকোর কালচালার হেরিটেজের তালিকায় এটিকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।