ঢাকা: জাতীয় নির্বাচনের মতো এই আয়োজনেও বিনোদন জগতের তারকাদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রথম দিনই ফরম কিনতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছুটে গেছেন অনেক নায়িকা-অভিনেত্রী। এর মধ্যে আছেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস থেকে শুরু করে নিপুণ আক্তার, মেহের আফরোজ শাওন, তানভিন সুইটি, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর সহ অনেকে।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে আওয়ামী লীগ। প্রথম দিনই অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস, নিপুন আক্তার, সোহানা সাবা ও শামিমা তুষ্টি ফরম সংগ্রহ করেন। ফরম নিয়ে নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে তারা সাবাই আশাবাদী বলেও জানিয়েছেন।
রাজশাহী বিভাগের বগুড়া থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস. মনোনয়ন ফরম কেনার পর অপু বিশ্বাস বলেন, রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলা থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছি। আমার এলাকার মানুষ আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। দোয়া রাখবেন, আমি যেন এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে যেন কাজ করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, নিজেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়াতে পারা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে থাকতে পারা আমার জন্য সৌভাগ্য বলে মনে করি। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলাম। বাকিটা মহান আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা।
চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ।
ঢাকা বিভাগ থেকে ফরম নেওয়া অভিনেত্রী সোহানা সাবা দাবি করেছে, গত দেড় দশক ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করছেন তিনি।
নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় দিয়ে সাবা বলেন, “বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। অনেক বড় দেশপ্রেমিকও ছিলেন। সেজন্য আমি অবশ্যই চাই আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে।”
ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কেমন সম্পৃক্ততা ছিল জানতে চাইলে এই অভিনেত্রী বলেন, “কার্যত আমি সরাসরি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না। তবে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিয়েছি। কিন্তু কখনও আমি এভাবে ভাবিনি যে, সরাসরি রাজনীতিতে অংশ নেব।”
সুযোগ পেলে পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষের মতোই আমি হাঁটাচলা করি। তাদের পাশে থেকেই আমি তাদের জন্য কাজ করব।”
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। তিনি ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় রাজধানীর গুলিস্তানের ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অবস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তিনি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।
চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী শামিমা তুষ্টি মনোনয়ন ফরম নিয়ে বলেন, “আমার বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা স্বাধীনতার প্রথম পতাকা বহন করেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় যেহেতু তরুণ প্রজন্মের একটা বিরাট অংশগ্রহণ ছিল সুতরাং আমি এই তরুণ প্রজন্মের মানুষ। আমার কাছে মনে হয় আওয়ামী লীগ একমাত্র দল যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে, লালন করে। এজন্যই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।”
এমপি নির্বাচিত হলে নারীদের উন্নয়নে কী ভূমিকা রাখবেন জানতে চাইলে তুষ্টি বলেন, “আমি তরুণদের নিয়ে কাজ করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে তরুণদের সাথে কাজ করে চলেছি দীর্ঘদিন। নির্বাচিত হতে পারলে শিল্পীদের উন্নয়নের স্বার্থে এবং নিপিড়ীত মানুষের অধিকার আদায়ে আরও কাজ করতে পারব বলেই মনে করি।”
সকাল ১১ টার পর মনোনয়ন ফরম কিনলেন অভিনেত্রী সৈয়দা কামরুন নাহার শাহনূর। তিনি বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। বিরোধী দলের আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও সক্রিয়ভাবে মাঠি ছিলাম। আমি নিজেও সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনীত করলে আমি তার কথা অনুসারে কাজ করতে চাই। এছাড়া নারীদের জন্য কাজ করতে চান বলে জানান তিনি।
সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরমের মূল্য ধরা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হচ্ছে। আর তৃতীয় তলায় বিক্রি হচ্ছে রংপুর, রাজশাহী খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মনোনয়ন ফরম।
উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৫০টি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত ৬২ জন সংসদ সদস্য তাদের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য নির্বাচনের ক্ষমতা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন। ফলে আওয়ামী লীগ নিজ দলের এবং স্বতন্ত্রদের মিলে মোট ৪৮ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য দিতে পারবে। বাকি দুটি আসনে নারী সংসদ সদস্য দিতে পারবে জাতীয় পার্টি (জাপা)। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টার মধ্যে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে ৪৮টিই এবার যাচ্ছে আওয়ামী লীগের ভাগে। সংসদে নৌকা প্রতীকে জয় পাওয়া ২২৫ এমপির হিসাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী আনুপাতিক হারে নিজেরা পাচ্ছে ৩৮টি সংরক্ষিত আসন। ৬২ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের মধ্যে মতৈক্য হওয়ায় তাদের ভাগের ১০ আসনেও আওয়ামী লীগই প্রার্থী দেবে। বাকি দুটি সংরক্ষিত আসন পাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। ১৪ দলীয় শরিকদের জোটবদ্ধ করার এবং স্বতন্ত্রদের সমর্থনের চিঠি ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।