Thursday, December 26, 2024

সরকারি রাস্তা ভেঙ্গে ইটের দেওয়াল নির্মান,বন্ধ শতাধিক মানুষের রাস্তা 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সরকারি প্রকল্পের ইটের সলিং তুলে রাস্তা বন্ধ করে বাউন্ডারী নির্মান করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রাস্তা। আর এতে যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় প্রায় গৃহবন্দী হয়ে পরেছে ২৫টি পরিবারের বৃদ্ধ ,শিশু, শিক্ষার্থী । যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তাদের অভিভাবক এবং কেউ হটাত অসুস্থ্য হলে হাঁসপাতালে নেওয়া ও এলাকায় হটাত আগুন ধরলে ফায়ার সার্ভিস এর গাড়ি যাওয়ার পথ না থাকায়  বিপাকে বাসিন্দারা । স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর নিকট প্রতিকার চেয়ে সমাধান না পাওয়ায় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে চন্দনি ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত আলাউদ্দিনের দুই ছেলে বদরুল আলম রিপন ও শিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন বাসিন্দারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের বড়লক্ষীপুর প্রধান সড়ক থেকে স্থানীয় বাসিন্দা রাজ্জাকের বাড়ি পর্যন্ত ইটের সলিং রাস্তার ইট উঠিয়ে বাউন্ডারি নির্মান করা হয়েছে। এ যায়গায় রাস্তার পাশে একটি সরকারি বৈদ্যতিক পিলারও রয়েছে। আর সরকারি হালটের উপর পৌরসভার অধীনে নির্মীত বক্স কালভার্ট বালু ফেলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

কথা হলে স্থানীয় বাসিন্দা ভুক্তভোগী মোঃ গোলাম মাওলা বলেন, আমাদের চার পুরুষের জমিতে আমরা বসবাস করে আসছি। এ রাস্তায় প্রায় ২০বছর ধরে চলাচল করে আসছি। গত দুই বছর হলো এখানে ইটের রাস্তা করা হয়েছে। এ রাস্তা ভেঙ্গে রিপন শিপন দুই ভাই এখানে ইটের দেয়াল নির্মান করে পথ বন্ধ করে রেখেছে। তারা পুলিশের চাকরি করে তাদের অনেক ক্ষমতা । আমরা তাদের সাথে পারিনা। আমার স্ত্রী অসুস্থ্য , হাঁসপাতালে আসা যাওয়ার রাস্তাটা আমাদের বন্ধ। কিভাবে আমারা চলাচল করবো। আমাদের দাবী এখানে আমাদের চলাচলের রাস্তা যেন ফিরে পাই।

বাসিন্দা সুমি আক্তার বলেন, আমাদের একটাই রাস্তা যাবার কোন পথ নাই। বৃষ্টি হলে পাশের ইটের ভাটা দিয়ে আমাদের চলাচল করতে খুব কষ্ট হয়। আমার স্বামী রিক্সা চালায়। সে রিক্সা বাড়িতে আনতে পারেনা। প্রায় মাসখানেক আমরা এভাবে চলাচল করছি।

বাসিন্দা,আতর আলী শিকদার বলেন, আমার বাপ-দাদার সম্পত্তির মধ্যে আমরা বসবাস করছি। আমার বয়স এখইন ৬০বছর। এখানে কাঁচা রাস্তায় চলাচল করতাম। প্রায় দুই বছর ধরে অনেক কষ্ট করার পর ইটের রাস্তা হয়েছে। এখন তারা তাদের জমিতে ইটে বাউন্ডারি নির্মান করেছে। সরকারি রাস্তা ভেঙ্গে ফেলেছে। আমরা এখন কোন যায়গা দিয়ে যাবো। প্রায় শতাধিক মানুষ এ পথ দিয়ে যাতায়াত করে।আমরা আমাদের রাস্তা চাই।

সহকারি শিক্ষিকা ফিরোজা পারভিন বলেন,আমি একজন শিক্ষিকা। আমাদের যাবার রাস্তা এটি। মুলঘর স্কুলে আমি শিক্ষকতা করি। আমাদের যাবার রাস্তা বন্ধ। মাসখানেক ধরে এ পাশ ওপাশ দিয়ে যাতায়াত করছি। বৃষ্টি হলে আমাদের যাতায়াত কষ্ট হয়। এ রাস্তা ছিলো। এটা এখন ইটের বাউন্ডারি করে আমাদের রাস্তাটা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা সরকারের কাছে এর প্রতিকার চাই,আমাদের রাস্তা ফিরে পেতে চাই।

রাজবাড়ী টাউন মক্তব প্রাইমারী স্কুলের ২য় শ্রেনীর শিক্ষার্থী মুনিয়া জানায়, আমাদের স্কুলে যেতে খুব কষ্ট হয়। এখন বৃষ্টির দিন জুতা হাতে নিয়ে পাশের ইট ভাটার পাশ দিয়ে স্কুলে যেতে হয়। আমাদের রাস্তা হলে খুব উপকার হতো।

ভবানীপুর সরকারি প্রাঃবিদ্যালয়ের ৩য় শিক্ষার্থী বিথি জানায়, স্কুলে যেতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। রাস্তা না থাকায় জঙ্গলের পথ দিয়ে আমাদের চলাচল করতে হয়। আমাদের রাস্তাটা আটকে দিয়েছে। আমাদের চলাচলের খুব কষ্ট হচ্ছে।

শারীরিক প্রতিবন্ধী রোমান বলেন, আমি হোটেলে কাজ করে খাই। আমার পায়ের সমস্যা। রসাস্তা বন্ধ থাকায় জঙ্গলের পথ দিয়ে আসা যাওয়া খুব কষ্ট হয়। সে দিন চাল কিনে আসার সময় আমার চালগুলো রাস্তায় পরে গেছে। অন্ধকার পথ। আমাদের আগের পথটা খুব সহজ পথ ছিলো। সুবিধা ছিলো। কিন্তু এখন বন্ধ। আমাদের পথ টা আমরা ফিরে পেতে চাই।

সরেজমিনে দেখাযায় ইটের বাউন্ডারি নির্মান কাজ চলছে। কাজের প্রায় শেষ দিক। শ্রমিকেরা কাজ করছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জহুরা আকতার লতা। তিনি নিজেকে পুলিশ সদস্য শিপনের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বলেন, আমাদের জমিতে আমরা বাউন্ডারি নির্মান করেছি। রাতের আধারে আমাদের ব্যাক্তিগত জমিতে ইটের রাস্তা করেছে। আমাদের কাছে কোন অনুমতি নেয় নি। আমাদের জমিতে আমরা বাউন্ডারি নির্মান করছি।অন্য কারো জমিতে আমরা বাউন্ডারি করিনাই বলে তিনি উত্তেজিত হয়ে যান। আমাদের জমিতে বাউন্ডারি নির্মান করছি অথচ আজকে এ সাংবাদিক,কাল আরেক সাংবাদিক কাল ওমক নেতা। যে যা পারে করুক,আমি আমাদের ব্যাক্তিগত জমিতেই বাউন্ডারি নির্মান করছি।

রাজবাড়ী সদর এলজিইডি সূত্রে জানাগেছে,এডিপি/২০১৯-২০ এর অর্থায়নে ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যায়ে এ কাজের বাস্তবায়ন করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হুমায়রা এন্টার প্রাইজ।

কাজের বাস্তবায়নকারী রাজবাড়ী সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান রাকিবুল হাসান পিয়াল বলেন,রাতের আধারে কোন সরকারি কাজ করা যায়না। আমাদের কাজ সঠিকভাবে টেন্ডারের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মার্জিয়া সুলতানা বলেন, আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রথমে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। যেহেতু সমাধান হয়নি তাই শিগ্রই দুই পক্ষকে নিয়ে আমি বসে এটার সমাধানের চেষ্টা করবো।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here