Saturday, December 21, 2024

হাঁসের খামারে স্বাবলম্বী ইয়াকুব আলী 

  • বাড়ির সামনে ছোট একটা (বাওর) খড়দিয়ে মাচালি পেতে থাকার জায়গা করে সেখানে রাত্রিযাপন করেন তিনি। সামনে জাল দিয়ে ঘেরা প্রায় তিনশো হাস আটকানো রয়েছে সেখানেই খুব সকালে কথা হয় তার সাথে। তার নাম ইয়াকুব আলী ব্যাপারী পিতা বিরাজ ব্যাপারী। তিনি রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের চার নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

তিনি জানান, আগে মুরগির খামার করতান কিন্তু গত তিন চার বছর ধরে হাসের খামার করতেছি এতে লাভ বেশি এবং খরচ কম। রোগ বালাই নেই বললেই চলে। এইযে দেখতেছেন সারা মাঠ পানিতে প্লাবিত একটু পর ছেড়ে দিলে সারাদিন পানিতে থাকবে পানিতে চরে বেড়াবে সকালে কিছু খাবার দিয়ে ছেড়ে দিব আর সন্ধ্যায় যখন আসবে তখন খাবার দিলেই হয় সারাদিন দেখে দেখে রাখতে হয় তা-না করলেই মাঝে মাঝে দুই একটা হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। চারশ হাস কিনেছিলাম এখন আছে প্রায় তিনশো। এতদিন দুইশো আশি থেকে তিনশো ডিম দিয়েছে হারানোর ফলে এখন ডিম কমে এসেছে। তিনশো ডিম দিলে তা কম করে হলেও তিন হাজার টাকা বিক্রি প্রতিদিন খাওয়া খরচ আটশ থেকে হাজার টাকা বাদ দিলে লাভ প্রায় প্রতিদিন দুই হাজার টাকা মানে মাসে প্রায় ষাট হাজার টাকা। এ কথার জবাবে তিনি বলেন হা ঐ রকমই মাসে উপার্জন হয়। একটা ক্যাম্বেল জাতীয় হাস টানা এক বছর ডিম দেয় মাঝে একটু বিরতি নিয়ে আবার ডিম পারে।

তিনি বলেন তার হাসের বয়স প্রায় তিন বছর হয়ে গেছে এ বছর আবার নতুন বাচ্চা কিনতে হবে। প্রতিটি বাচ্চা পয়ত্রিশ টাকা করে কিনেছিলেন এখন প্রত্যেকটি হাস তিন থেকে চারশো টাকা যাবে গড়ে একটা লাভ রয়েছে।
তেনাপচা এলাকার বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন বলেন ইয়াকুবের সংসারে কিছুদিন আগেও অভাব অনটন লেগেই থাকতো কিন্তু হাস পালন করে তার অভাব দূর হয়েছে। সংসারে স্বচ্ছলতা ও জীবনে সফলতা এসেছে।

ইয়াকুব আলী এই এলাকায় বেশ পরিচিত হাস পালনের জন্য তার বারতি কোন খরচ নেই। সে মাঠেই হাস রাখে। ঝড় বৃষ্টিতে কোন সমস্যা হয় কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন ঝড় বৃষ্টিতে হাসের কোন রোগ বালাই হয়না। মাঝে মাঝে বৃষ্টিতে এখানে হাটু সমান পানি হয়ে যায়। একদিন সকালে উঠে দেখি এখানে হাটু সমান পানি হয়ে গেছে আর হাঁসগুলো তার মধ্যে সাঁতার কাটছে। তবে মাঝে মাঝে একটু আধটু ঠান্ডা লাগলে এডি ভিটামিন খাওয়ালে ঠিক হয়ে যায়।অভিজ্ঞতার ফলে যে কোনো কাজে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন বলে প্রমাণ করেছেন ইয়াকুব আলী।

প্রাণিসম্পদ চিকিৎসকরা জানান, হাঁসের রোগ বালাই সাধারণত কম হয়। তবে কিছু মৌসুমে ডাক প্লেগ ও ডাক কলেরা রোগের সম্ভাবনা থাকে। তাই বাচ্চার বয়স ২১ দিন থেকে ২৫ দিনের মধ্যে ডাক প্লেগের ভ্যাকসিন এবং ৭৫ দিনের মধ্যে ডাক কলেরার ভ্যাকসিন দিয়ে নিলে এসব মহামারী রোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান  জানান, ছোটভাকলার ইয়াকুব আলী সহ উপজেলার দেআগ্রাম, উজানচর ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের অনেক দরিদ্র পরিবার ক্ষুদ্র আকারে হাঁসের খামার করে লাভবান হয়েছেন। তবে উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের ইয়াকুব আলী অল্প শিক্ষিত হয়েও পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ও কঠোর পরিশ্রম করে উপজেলার মধ্যে সফল হাঁস খামারি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। হাঁস পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। যে কোনো বেকার নারী-পুরুষ হাঁস পালনে এগিয়ে এলে সবাইকে উপজেলা প্রানী সম্পদ অধিদপ্তর থেকে সাহায্য করা হবে। শুধু হাস পালন নয় অন্যান্য যে কোন খামার করলেই তাদের কে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here