গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)প্রতিনিধি। দেশের বৃহত্তম যৌনপল্লি রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া যৌনপল্লি। এখানে সরকারি হিসেবে সারে বারশো যৌন কর্মীর কথা উল্লেখ থাকলেও। এখানে পাচ হাজারের ও বেশি যৌন কর্মীর বসবাস। এখানে ০-১৮ বছরের প্রায় আটশো শিশু রয়েছে আবার অনেকেই মাস্টার্স পাশ করেছে শুধু পিতৃ পরিচয়ের কারণে তারা চাকরি সুবিধা সহ বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল।
কিন্তু গত মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে এইসব পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিশুদের সামনে আলোর পথ দেখাচ্ছে। জানাযায় গত বছর জুন মাসে ব্যারিস্টার তাপস কান্তি এক রিট আবেদন করেন দেশের সুবিধা বঞ্চিত দুই লক্ষ শিশুদের জন্য যাদের পিতৃ পরিচয় নেই। এবং জুন -২২ সালের ১২ তারিখে তিনি গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গত মঙ্গলবার ২৪ জানুয়ারী ২৩ হাইকোর্ট ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় মাতৃ পরিচয়ে শিশু বড় হতে পারবে। দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে জন্ম কয়েক শত শিশুর। জন্মের পর থেকে নানা প্রতিকুলতার মাঝে প্রকৃতির নিয়মেই ওদের একটু একটু করে বেড়ে ওঠা। যখন ওদের স্কুলে যাওয়ার বয়স, মা তার শত কষ্টের মধ্যেও ভর্তি করাতে যান স্কুলে। কিন্তু নিয়মের বেড়া-জালে আটকে যায় ওদের স্কুলের খাতায় নাম লিপিবদ্ধ করা। কারণ ওদের নেই কোনো পিতৃ পরিচয়। এদেরকে শিক্ষিত করতে এখানে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা কাজ করছে। এতে যে গুটিকয়েক শিক্ষিত হচ্ছে তাদেরই বা গন্তব্য কোথায় তা কেউ জানে না। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শিক্ষা, বিয়েসহ প্রায় সব জায়গাতেই মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজের নামের পাশাপাশি বাবা ও মায়ের নামের দরকার হয়। এ ক্ষেত্রে যৌনকর্মীর সন্তানদের নির্দিষ্ট কোনো পিতৃপরিচয় নেই। এতে তারা সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি আইনি জটিলতায় ভুগতো। কিন্তু বর্তমানে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষাসহ সব ধরনের ফরম পূরণে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মাকেও স্বীকৃতি দিয়ে এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। ঐতিহাসিক এই রায়ে দৌলতদিয়া যৌনপল্লির মাঝে দীর্ঘদিনের অমিমাংসিত সমস্যার সমাধান হলো। দৌলতদিয়া পতিতা পল্লির বাসিন্দা আঁখি জানান মেয়েদের মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এ রায় গুরুত্বপূর্ণ। এই রায়ের ফলে আমাদের দীর্ঘদিনের বিড়ম্বনা, সীমাহীন সমস্যার সমাধান দেখতে পাচ্ছি। আখিঁ মনে করেন হাইকোর্টের ঐতিহাসিক এই রায়ের ফলে রাজবাড়ী যৌনপল্লির মেয়েদের শিক্ষাক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতা ছিলো; তা দূর হবে। যৌনকর্মী শিল্পী, রেহেনা সহ সবাই সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, তাদের ছেলে মেয়েরা অনেকেই পড়াশোনা শেষের পর্যায়ে আসলেও তারা চাকরি নিয়ে সন্দিহান ছিলেন অভিবাকত্বের সমস্যার কারণে। হাইকোর্টের এই নির্দেশনার ফলে সুবিধা বঞ্চিত প্রায় দুই লক্ষ শিশুর জীবনে মায়ের অবিভাবক হিসাবে আলোর পথ উন্মোচন হলো। মুক্তি মহিলা সমিতির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর আতাউর রহমান মন্জু বলেন, এটা আমাদের দির্ঘদিনের দাবি ছিল, বাস্তবায়ন হওয়ায় আমরা অনেক খুশি হয়েছি, সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা রইলো।
সুবিধাবঞ্চিত নারী ও শিশুদের মানবাধিকার নিশ্চিত ও দেশের নাগরিক সুবিধা পাইতে সহজ হলো। রাজবাড়ী মহিলা পরিষদের সভাপতি ডাঃ পুর্নিমা দত্ত তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে জানান, এই রায়কে আমরা আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল মনে করি। এই রায় মেয়েদেরকে মানুষ হিসাবে স্বীকৃতি দিলো। এই রায়কে আমরা অভিনন্দন জানাই।