- কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এক সময়ে গ্রামীন জীবনের অতি জরুরী কেরোসিন তেলের কুপি(ল্যামপু)হারিকেন আর হ্যাজাক। রাজবাড়ী শহরের এক সময় জমজমাট ছিল ঝালাই পট্টি, সেখানে প্রচুর পরিমানে টিনের কুপি,হারিকেন তৈরি হত।কাজ করতো অনেক কারিগররা।
এখন বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করার তাদের কাজ কমে গেছে।দিনরাত সে সব শ্রমিকরা ব্যস্থ থাকতো কুপি হারিকেন তৈরি করতে। তারা হাত গুটিয়ে বসে থাকেন। সাইদুল কারিগর জজানান দু চারটে যা বিক্রি হয় তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে পড়েছে।
বেলগাছি থেকে কুপি কিনতে আসা রহিম মোল্লা জানান, এখন আর কুপির দরকার পড়ে না।তবু একটা কিনতে এসেছি দোকানের জন্য বিদ্যুৎ চলে গেলে জালাই।কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তি জানান,ম্যাটিক পরীক্ষা দিয়েছি কুপির আলোয় পড়াশোনা করে।যারা একটু সম্ভ্রান্ত তারা হারিকেন ব্যবহার করতো।আর আমাদের মত গরীবরা লেম্পু ব্যবহার করতাম।কোন অনুষ্ঠানে কিংবা মাত্ববরের বাড়ীতে হ্যাজাক দেখা যেত।দিন বদলে গেছে।তবু মনে হয় সেই দিনগুলিই ছিল স্বর্ণালী ভাই বোন মিলে এক আলোতে পড়তাম।আমাদের ছিল আর্দশ বোধ,ভ্রাতৃত্ব বোধ।একান্নবতী পরিবার। কুপি হচ্ছে টিনের তৈরি বিশেষ ভাবে তৈরি আলো জ্বালাবার ব্যবস্থা।যা কেরোসিন তেল দিয়ে কাপড়ে তৈরি সলতে (কাপড় মোচড়ানো) আগুন জালিয়ে আলো তৈরি করা হয়। দোকানে প্রতিটি কুপি ২৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হারিকেন হচ্ছে জ্বালানি তেলের মাধ্যমে বদ্ধ কাচের পাত্রে আলো জ্বালাবার ব্যবস্থা। এর বাহিরের অংশে অর্ধবৃত্তাকার কাচের অংশ থাকে যাকে বাঙালিরা চিমনি বলে থাকে, এর ভিতরে থাকে তেল শুষে অগ্নি সংযোগের মাধ্যমে আলো জ্বালাবার জন্য কাপড়ের সলাকা।আলো কমানো বা বাড়ানোর জন্য নিম্ন বহিরাংশে থাকে একটি চাকতি যা কমালে বাড়ালে শলাকা ওঠা নামার সাথে আলোও কমে ও বাড়ে। গ্রামাঞ্চলে এর ব্যবহার সর্বাধিক। অনেক কাল আগে থেকে এর ব্যবহার শুরু হয়, সম্ভবত মোঘল আমলের আগে থেকে বাংলায় শুরু হয় হারিকেনের ব্যবহার।
তবে এখনো গ্রামাঞ্চলে রিক্সার নিচে আলোর উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই হারিকেন।প্রতিটি হারিকেন২৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।হারিকেনের মতোই আরো উন্নত প্রযুক্তিগত ব্যবহারে হ্যাজাক আরো বেশী আলো দিতে সক্ষম।হ্যাজাক বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে সারা বিশ্বে প্রখর আলোক বাতি হিসাবে ব্যবহৃত; যা সংযুক্ত বাল্প-আকৃতির জালের মতো আবরণ (ম্যান্টেল) উত্তপ্ত হয়ে উজ্জ্বল আলো বিকিরণ করে। এর ইংরেজি নাম পেট্রোম্যাক্স।কয়েকটি দোকানে খোঁজ নিয়ে কোথাও হ্যাজাক পাওয়া যায়নি।