Saturday, September 21, 2024

১৭ উইকেট পতনের দিন ব্যাটিং ব্যর্থতায় পিছিয়ে বাংলাদেশ

চেন্নাই : ব্যাটিং ব্যর্থতায় ভারতের বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে পিছিয়ে সফরকারী বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ভারতের ৩৭৬ রানের জবাবে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ১৪৯ রানে অলআউট হয় টাইগাররা। প্রথম ইনিংসে ২২৭ রানে পিছিয়ে ফলো-অনে পড়ে বাংলাদেশ।

কিন্তু বাংলাদেশকে ফলো-অন না করিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে দ্বিতীয় দিন শেষে ৩ উইকেটে ৮১ রান করেছে ভারত। ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ৩০৮ রানে এগিয়ে টিম ইন্ডিয়া। এই টেস্টে, আজ দ্বিতীয় দিন মোট ১৭ উইকেটের পতন হয়েছে। বাংলাদেশ ৭টি এবং ভারত ১০ উইকেট শিকার করে। চেন্নাইয়ের এই মাঠে একদিনে সর্বোচ্চ উইকেট পতনের নজির ঘটলো। এর আগে এই ভেন্যুতে একদিনে তিনবার সর্বোচ্চ ১৫ উইকেটের পতন হয়েছিলো।

চেন্নাইয়ে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে গতকাল প্রথম দিন শেষে ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান করেছিলো ভারত। রবীচন্দ্রন অশি^ন ১০২ ও রবীন্দ্র জাদেজা ৮৬ রানে অপরাজিত ছিলেন।
আজ, দ্বিতীয় দিনের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই জাদেজাকে ৮৬ রানেই থামিয়ে দেন বাংলাদেশ পেসার তাসকিন আহমেদ। ১২৪ বলের ইনিংসে ১০টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন জাদেজা। ১৪৪ রানে ৬ ব্যাটারের বিদায়ের পর সপ্তম উইকেটে জুটি বেঁধে ১৯৯ রান যোগ করেন জাদেজা-অশি^ন।
জাদেজার পর আরও দুই উইকেট শিকার করেন তাসকিন। আকাশ দীপকে ১৭ ও অশি^নকে ১১৩ রানে থামান তাসকিন। ১৩৩ বল খেলে ১১টি চার ও ২টি ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান অশি^ন।
জসপ্রিত বুমরাহকে ৭ রানে থামিয়ে ভারতের ইনিংস ৩৭৬ রানে শেষ করেন আগের দিন ৪ উইকেট নেওয়া হাসান। সেই সাথে ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্টে দ্বিতীয়বারের মত ইনিংসে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন তিনি। ভারতের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে টেস্টের এক ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন হাসান।
হাসান ৮৩ রানে ৫টি, তাসকিন ৫৫ রানে ৩টি এবং রানা ও মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন।
ভারতের ইনিংস শেষ হবার পর ব্যাট হাতে নেমে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারের শেষ বলে ভারতের পেসার জসপ্রিত বুমরাহর ডেলিভারিতে বোল্ড হন ওপেনার সাদমান ইসলাম(২)।
সাদমানকে হারানোর ধাক্কা সামলে উঠার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার জাকির ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ৭ ওভারের বেশি অনায়াসে কাটিয়ে দেন তারা। কিন্তু নবম ওভারে দ্বিতীয়বারের মত আক্রমনে এসে টানা প্রথম দুই বলে দুই উইকেট তুলে নেন ভারতের পেসার আকাশ দীপ।

জাকিরকে ৩ ও মোমিনুল শূন্যতে আকাশের শিকার হলে ২২ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় টাইগাররা। এ অবস্থায় ভারতের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়তে পারেননি শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। পেসার মোহাম্মদ সিরাজের বলে খোঁচা মেরে দ্বিতীয় স্লিপে বিরাট কোহলিকে ক্যাচ দনে শান্ত। ৩টি চারে শান্ত ব্যক্তিগত ২০ রান ফেরার পরই সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। বুমরাহর বলে দ্বিতীয় স্লিপে লোকেশ রাহুলকে ক্যাচ দেন ২টি চারে ৮ রান করা মুশি। এতে ৪০ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে মহাবিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
ষষ্ঠ উইকেটে জুটি বেঁধে দলকে বিপদমুক্ত করার চেষ্টা করেন সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। উইকেটে সেট হতে সাবধানে এগোতে থাকেন তারা। জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরিও চলে আসে। কিন্তু ২৯তম ওভারে স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার বলে অহেতুক সুইপ শটে বল সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে বদলি ফিল্ডার ধ্রুব জুরেলকে ক্যাচ দেন ৩টি চারে ৪২ বলে ২২ রান করা লিটন।

জাদেজার পরের ওভারে প্যাভিলিয়নে ফিরেন সাকিব। সাকিবের রিভার্স সুইপ শটে বল তার জুতায় লেগে ক্যাচ উঠে। সেই ক্যাচ সহজেই লুফে নেন উইকেটরক্ষক ঋসভ পান্থ। ৫টি চারে ৬৪ বলে ৩২ রান করেন সাকিব। ৯২ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফলো-অনে শঙ্কায় পড়ে ভারত।
টেল-এন্ডারদের নিয়ে লড়াই করার চেষ্টা করেছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। শেষ তিন উইকেটে হাসান-তাসকিন ও রানাকে নিয়ে যথাক্রমে- ২০, ১৮ ও ১৯ রান তুলেও বাংলাদেশকে ফলো-অনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি মিরাজ। ১৪৯ রানে গুটিয়ে ফলো-অনে পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু টাইগারদের ফলো-অন না করিয়ে আবারও ব্যাট হাতে নামে ভারত।

মিরাজ ২৭ রানে অপরাজিত থাকলেও, হাসান ৯ এবং তাসকিন ও রানা ১১ রান করে আউট হন। ভারতের বুমরাহ ৪টি, আকাশ দীপ-মোহাম্মদ সিরাজ ও রবীন্দ্র জাদেজা ২টি করে উইকেট নেন। এই ইনিংসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪শ উইকেট পূর্ণ করেন বুমরাহ।
২২৭ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা ভারতকে তৃতীয় ওভারেই ধাক্কা দেন বাংলাদেশ পেসার তাসকিন। স্লিপে জাকিরকে ক্যাচ দিয়ে ৫ রানে ফিরেন রোহিত।
প্রথম ইনিংসের হাফ-সেঞ্চুরিয়ান আরেক ওপেনার যশ^সী জয়সওয়ালকে ১০ রানে বিদায় দেন পেসার রানা। ২৮ রানে ২ উইকেট হারানোর পর শুভমান গিল ও কোহলির কাছ থেকে ৩৯ রানের জুটি পায় ভারত। ২টি চারে ১৭ রান করা কোহলি লেগ বিফোর আউট করে জুটি ভাঙেন মিরাজ।
কোহলির বিদায়ে ক্রিজে এসে গিলকে নিয়ে দিনের খেলা শেষ করেন পান্থ। গিল ৩৩ ও পান্থ ১২ রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশের তাসকিন-রানা ও মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর কার্ড : (দ্বিতীয় দিন শেষে)
ভারত প্রথম ইনিংস : ৩৭৬/১০, ৯১.২ ওভার (অশি^ন ১১৩, জাদেজা ৮৬, হাসান ৫/৮৩)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ১৪৯/১০, ৪৭.১ ওভার (সাকিব ৩২, মিরাজ ২৭*, বুমরাহ ৪/৫০)।
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস : ৮১/৩, ২৩ ওভার (গিল ৩৩*, কোহলি ১৭, রানা ১/১২)।

 

সূত্রঃ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ (বাসস)

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here