মোজাম্মেল হক লালটু, গোয়ালন্দঃ এক সময়ের গ্রামবাংলার বহুল ব্যবহৃত ঢেঁকি কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। যান্ত্রিক আবিভারের জন্য ঢেঁকি এখন বিলুপ্ত প্রায়। এখন আর গ্রাম বাংলায় ঢেঁকিতে ধান ভানার দৃশ্য চোখেই পড়ে না শোনা যায় না ঢেঁকির ধুপধাপ শব্দ।
জানাগেছে, আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি এক সময় ছিলো গ্রামীণ জনপদের ধান ভাঙা ও চাউলের গুড়া আটা তৈরির এক মাত্র মাধ্যম। অগ্রহায়ণ পৌষ মাসে কৃষক ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে কৃষাণীদের ঘরে ধান থেকে নতুন চাউল ও চাউলের গুড়া করার ধুম পড়ে যেতো। সে চাউল দিয়ে পিঠা পুলি ফিরনি পায়েস তৈরি করা হতো।এছাড়াও নবান্ন উৎসর বিয়ে ঈদ ওপূজাতে ঢেঁকিতে ধান ভেনে আটা তৈরি করা হতো। তখন বধূরা ঢেঁকিতে কাজ করতো রাত থেকে ভোর পর্যন্ত। ঢেঁকি দিয়ে ধান ও চাউল ভেনে চিড়া আটা তৈরী করে জীবিকা নিবাহ্ করতো।আশির দশকের পর থেকে ইঞ্জিন চালিত ধান ভাঙা কল আমদানি শুরু হওয়ার পর গ্রামাঞ্চল থেকে ঢেঁকি বিলীন হওয়ার শুরু হয়। ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি ক্রমান্বয়ে বিলুপ্তির পথে। গ্রামের মানুষ ভুলে গেছেন ঢেঁকিতে ছাঁটা চালের স্বাদ। যান্ত্রিক সভ্যতা গ্রাস করেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঢেঁকি শিল্পকে।
আজাহার সরদার বলেন, আমাদের বাড়ীতে ঢেঁকি ছিলো দুটা প্রতিদিন ঢেঁকিতে ধান ভেনে চাউল বের করে ভাত পাক করে খেতে হতো।
ঢেঁকিতে বানা চাউলে পিঠা হয় সুন্দর মেশিনে বানা চাউলে পিঠা ভালো হয় না। এখন আর কারো বাড়ীতে ঢেঁকি দেখা যায় না।আগের সবার বাড়ীতে একটি করে ঢেঁকি ছিলো ধান বানার জন্য। সবাই ধান চাল মরিচের গুড়া ধনিয়ারগুড়া হলুদের গুড়াসহ সব কাজ ঢেঁকি দিয়ে করা হতো।
শহর ও সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এক সময় আমাদের বাড়ীতে ঢেঁকি দিয়ে সব ধরনে চাউল গুড়া করা হতো। পিঠা তৈরির চাউল গুড়া করা হতো ঢেঁকিতে। আর ঢেঁকিতে গুড়া করা আটায় পিঠা খেতে খুবী সুস্বাদু। এখন আমাদের ছেলে মেয়েরা ঢেঁকি কি জিনিস জানে না। ঢেঁকি আমাদের দেশ থেকে দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে।
ঘাট ম্যানেজার মো. পলাশ বলেন, আগে দিনে প্রতিটি বাড়ীতে দেখা যেতো ঢেঁকি। এখন সারা গ্রামে ঘুরে দেখা মেলে না একটি ঢেঁকি। আগে আমাদের মা চাচিরা ফজরে আযানের পর পর ঢেঁকিতে ধান ভানতেন। সেই চাউল দিয়ে সকালে ভাত পাকাতো। এখন আর সেই দৃশ্য দেখা যায় না। এখন গ্রাম ও শহরে সব জায়গায় শুধু ইঞ্জিল চালিত মেশিন দিয়ে সব চাউল গুড়া করা হয়ে থাকে। এখন আমাদের দেশ থেকে ঢেঁকি বিলুপ্তির পথে। আমাদের ছেলে মেয়েরা ঢেঁকি চিনে না।এখন বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি।